E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিক্ষামন্ত্রীসহ ১৬টি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ

ঘুষ না দেওয়ায় প্রণোদনার টাকা পেলেন না শৈলকূপার নন-এপিওভুক্ত শিক্ষকরা!

২০২১ মে ২৭ ১৮:০১:১৪
ঘুষ না দেওয়ায় প্রণোদনার টাকা পেলেন না শৈলকূপার নন-এপিওভুক্ত শিক্ষকরা!

অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামীম আহম্মেদ খানের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যজ্যের অভিযোগ উঠেছে। টাকা ছাড়া তিনি এমপিও ভুক্ত, করোনাকালীন নন-এমপিও শিক্ষকদের তালিকা তৈরী ও সরকারি বই দেন না বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। 

শিক্ষা অফিসার শামীম আহম্মেদ খান তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, কিছু শিক্ষক তার বিরুদ্ধে এ সব মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ ছড়াচ্ছে। ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিসারের বরাবর লিখিত অভিযোগে দাবী করা হয়েছে, নন এমপিও শিক্ষকদের করোনা প্রণোদনার ভাতা প্রকৃত শিক্ষকদের না দিয়ে ভুয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের দেওয়া হয়েছে। শৈলকূপার ১৪ নং দুধসর ইউনিয়নের রাবেয়া খাতুন নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সালমা খাতুন নামে এক ভূয়া শিক্ষকের নাম দেখিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামীম আহম্মেদ খান এবং ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাহিদুজ্জামান নাহিদ ওরফে নাজমুল আত্মসাৎ করেছেন। শৈলকূপার বেড়বাড়ি ও পুরাতন বাখরবা গ্রামে এবতেদায়ী স্বতন্ত্র মাদ্রাসা কাগজ কলমে না থাকলেও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামীম আহম্মেদ খান দুইটি মাদ্রাসার নামে করোনার টাকা তুলে নিয়েছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরে শৈলকূপায় ৬টি এবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে। এ সব মাদ্রাসা শিক্ষকদের করোনার প্রণোদনার টাকা প্রদান করা হবে বলে মোবাইলে নিজ দপ্তরে ডেকে নিয়ে ঘুষ দাবী করেন শামীম খান। ঘুষ না দেওয়ায় কারোর টাকা প্রদান করা হয়নি। সরকারি সুযোগ সুবিধার কথা শিক্ষকদের জানানো হয় না। শিক্ষকরা অন্য উপজেলা থেকে জেনে কাগজপত্র জমা দিলেও নানা ভুল ধরে ঘুষ দাবী করেন। শৈলকূপা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে দুই জন দালাল আছে। ওই দালালদের মধ্যে একজন নারীও রয়েছে। দুই দালালের মাধ্যমে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শিক্ষকদের কাছ থেকে ঘুষ লেনদেন করেন। ২০২০ সালের ৫ আগষ্ট শিক্ষা অফিসার শামীম খানের দুর্নীতি নিয়ে তৎকালীন ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোন প্রতিকার মেলেনি।

একজন নারী শিক্ষক অভিযোগ করেন, সরকারী বই নিতে গেলেও ঘুষ দিতে হয় শামীম খানকে। তিনি ঘুষ দিয়ে সরকারী বই নিয়েছেন। শৈলকূপার পুরাতন বাখরবা গ্রামের প্রধান শিক্ষক মুমিনুর রহমান জানান, যে কোন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ হলেই শিক্ষা অফিসার শামিম খানকে ম্যানেজ করতে বড় অংকের টাকা দিতে হয়। এছাড়া তিনি এমপিওভুক্তকরণ, শিক্ষকদের উচ্চতর গ্রেড ও বেতন ছাড়ের ফাইলের জন্য টাকা দিতে হয়। ঘাটে ঘাটে টাকা দিতে দিতে শৈলকূপার শিক্ষকরা আজ বড়ই অসহায়।

শৈলকূপার চরপরমান্দপুর মাদ্রাসার শিক্ষক হাফিজা খাতুন, বিষ্ণুপুর মাদ্রাসার মিজানুর রহমান, রাবেয়া খাতুন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সুমি খাতুন ও কামরুন নাহার অভিযোগ করেন, একই স্টেশনে ৬ বছর ধরে থাকার কারণে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামীম আহম্মেদ খান অকুণ্ঠ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। দিনকে দিন তার এই দুর্ণীতি বেপরোয়া হয়ে উঠছে। রাবেয়া খাতুন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ইসলাম ধর্মের শিক্ষক সুমি খাতুন অভিযোগ করেন প্রথম দফায় করোনার প্রণোদনা তালিকায় বাদ পড়লে শিক্ষা অফিসার ভুল হয়েছে বলে এড়িয়ে যান। দ্বিতীয় দফার তালিকাতেও তিনি বাদ পড়েছেন বলে অভিযোগি করেন।

কৃষি শিক্ষার শিক্ষক কামরুন নাহার অভিযোগ করেন বছরের পর বছর আমরা বিনা বেতনে শিক্ষকতা করছি। সরকার আমাদের প্রণোদনা দিয়ে সহায়তা করছে। কিন্তু সেই টাকার লোভও কর্মকর্তারা সামলাতে পারছে না।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা শিক্ষামন্ত্রী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট ১৬টি দপ্তরে শৈলকূপা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামীম আহম্মেদ খানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এতে কাজ না হলে শাস্তি ও বদলীর দাবীতে শিক্ষকরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে।

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার তাসলিমা খাতুন বলেন, শামীম আহম্মেদ খানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। নতুন যোগদান করার কারণে দপ্তরিক নানা কাজে বেশ চাপে আছি। তিনি বলেন বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।

শৈলকূপা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামীম আহম্মেদ খান তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, করোনার প্রণোদনার টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আসে। এটা দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করার সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, যারা অভিযোগ করেছে তাদের নাম ইউএনও’র নেতৃত্বে গঠিত উপজেলা কমিটি থেকে বাদ দিয়েছে। তাই আমার বিরুদ্ধে করা ঢালাও অভিযোগ সঠিক নয়।

(একে/এসপি/মে ২৭, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test