E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কুড়িগ্রামের স্থলবন্দরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা

২০২১ জুন ০১ ২৩:১২:২৫
কুড়িগ্রামের স্থলবন্দরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা

রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থলবন্দরে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা না থাকায় ঝুঁকিতে রয়েছে কয়েক হাজার বন্দর শ্রমিক। সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন আসছে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক। ভারতীয় ট্রাক চালকরা অনায়সে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সাথে মেলামেশা করছেন। তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবনতা নেই। কর্তৃপক্ষ বন্দরের শূণ্য রেখায় স্বাস্থ্য বিভাগের তদারকি থাকার দাবী করলেও তাদের দেখা মেলে না হরহামেশা। এমন অসর্তকতার ফলে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ভারত থেকে সারিবদ্ধভাবে পাথর বোঝাই ট্রাক কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী সোনাহাট স্থলবন্দরে প্রবেশ করছে। বন্দরের জিরো পয়েন্ট চেক পোস্টের কাছে এসে শরীরের মাত্রা পরিমাপ করছেন রফিকুল ইসলাম নামের একজন ভাড়াটিয়া শ্রমিক। সেখানে দেখা যায়নি কোন মেডিকেল অফিসার কিংবা স্বাস্থ্য সহকারির।

রফিকুল ইসলাম তিনি ভারতীয় ট্রাক চালকদের তাপমাত্রা পরিমাপ করার পর কাগজ-পত্রে এবং চালকের হাত-পায়ে স্প্রে করছেন। এরপর সেই কাগজ-পত্রাদি নিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) চেকপোস্টে দিয়ে আসছেন। এভাবেই স্থলবন্দরে ভারতীয় ট্রাক চালকদের করোনার পরীক্ষা-নিরিক্ষা হচ্ছে। ভারত থেকে প্রতিদিন শতাধিক পাথর বোঝাই ভারতীয় ট্রাক প্রবেশ করছে স্থলবন্দরে।

এসব ট্রাক চালকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সামান্য পরীক্ষা নিরিক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও স্বাস্থ্য কর্মীর পরিবর্তে দায়সারা ভাবে কাজ সারছেন ভাড়ায় নিযুক্ত একজন অদক্ষ কর্মী দ্বারা। এছাড়াও ট্রাক নিয়ে আসা চালকরা অনেকে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে উদাসীন। তাদের কেউ মাস্ক পড়লেও সিংহভাগই চালক মাস্কহীন রয়েছেন। চোখের সামনেই বাংলাদেশী শ্রমিকদের সাথে অবাধে মেলামেশা করছেন তারা অনায়সে। সবাই মিলে একসাথে হোটেলে খাবার খাচ্ছেন।

ভাড়াটিয়া শ্রমিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ভারতীয় চালকদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করার জন্য দু’জন স্বাস্থ্যকর্মী আছেন। তারা সময় ভাগ করে নিয়ে ডিউটি করেন। বর্তমানে একজন খাইতে গেছে। সেজন্য আমি ভারত থেকে আসা চালকদের তাপমাত্রা মাপছি এবং স্প্রে করছি। আমার মূলত কাজ হলো ভারত থেকে আসা ট্রাকের চালকদের কাছ থেকে কাগজ নিয়ে স্প্রে করে বিজিবি’র কাছে পৌঁছে দেয়া।

বন্দরে লোড আনলোড করা শ্রমিক নজরুল ইসলাম বলেন, যে গরম আল্লাহর রহমে আমগোর করোনা ধরবো না। এই গরমের মধ্যে মাস্ক পড়ে শ^াস নেয়া খুব কষ্ট হয়া যায়।

শ্রমিক সাত্তার বলেন, পেটের দাহায় কাম করি। করোনা ভয় করলে চলবো। তাইলে তো পেটে ভাত যাবো না। কামের সময় মাস্ক পড়ি না।যে হারে ঘামি তাতে শরীরের কাপড়-চোপড় ভিজে যায়। তবে বাইরে মাস্ক পড়ি।

ভারতীয় ট্রাক চালক আসাম রাজ্যের ধুবড়ি জেলার ছাগুলিয়া গ্রামের ইমরান বলেন, হাম লোক গাড়িলিয়ে আয়গা। উধার চেক কিয়া।এধার হামলোক কো চেক কিয়া। হামলোক বাংলাদেশী পাটি লেগিয়া থা। হোটেল মে খানা খিলায়া। আভি যানেকে বুলায়ে। আভি বাপাচ চালা যায়গা ইন্ডিয়া। মাস্ক হে না সাথ মে। দো-দো মাস্ক হে হামারা পাচ মে। বহুত গাড়মি হেয় না। একলা ঘুরনাহু। এলিয়ে নেহি মুখ মে।

একই এলাকার ভারতীয় আরেক চালক বলেন, সব সময় মাস্ক পড়া যায় না গরমের জন্য। হেলপার ছাড়া ট্রাক নিয়ে একাই আসতে হয়। খুব কষ্ট হয়। মাঝে মধ্যে সোনাহাট স্থলবন্দরের হোটেল গুলো খাবার খেতে হয়।

কুড়িগ্রাম ভূরুঙ্গামারী সোনাহাট স্থলবন্দরের সহকারি পরিচালক (ট্রাফিক) গিয়াস উদ্দিন বলেন, দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় ঝুঁকিতে রয়েছে এই স্থলবন্দর। ভারতীয় ট্রাক চালকদের আসার ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিধি মানার উপর নজরদারী রয়েছে। এই বিষয় নিয়ে শ্রমিক সংগঠনসহ বন্দর সংশ্লিষ্টদের সজাগ করার পাশাপাশি তাদের সচেতনা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ভাবে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারিভাবে বন্দরের শ্রমিকদের কোভিড-১৯এর নমুনা সংগ্রহ করে শতভাগ নিশ্চিত হতে কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী জানান তিনি।

মঙ্গলবার কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডাঃ হাবিবুর রহমান বলেন, স্থলবন্দরে যথাযথো প্রক্রিয়ায় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মেডিকেল টিম আছে। তারা সার্বক্ষনিক কাজ করছে। তাদের কোন প্রকার গাফিলতি থাকলে তা ক্ষতিয়ে দেখে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

(পিএস/এসপি/জুন ০১, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test