E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

৬ ব্রীজ নির্মানের নামে ৪ কোটি টাকা লোপাট

ঝালকাঠি এলজিইডির হালকাযান প্রকল্পের ফাইল উধাও

২০১৪ সেপ্টেম্বর ০২ ১১:৫২:২৫
ঝালকাঠি এলজিইডির হালকাযান প্রকল্পের ফাইল উধাও

ঝালকাঠি প্রতিনিধি : ঝালকাঠি এলজিইডিতে হালকা যান প্রকল্পের নামে ব্রীজ নির্মান দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা লোপাট করে ফাইল সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বিষয়টি প্রধান প্রকৌশলীর নজরে এলে তিনি নির্বাহী প্রকৌশলীকে ফাইল খুজে বের করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু তাতেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

ঝালকাঠি এলজিইডি ভবন থেকে ২০০৭-০৮ অর্থ বছর হতে ২০১০ পর্যন্ত হালকাযানের পরিচালিত কাজের পুরো ফাইল ডকুমেন্ট হাওয়া। কাগজে কলমে এ প্রকল্পের ৬টি ব্রীজের কাজ দেখিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে ৪ কোটি টাকা। লুটপাটের কোন চিহ্ন না রাখতেই অফিসের ফাইল সরিয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। আর এ অভিযোগের আঙ্গুল এলজিইডি বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীর সহায়তায় ঝালকাঠির ইসলাম ব্রাদার্সের ঠিকাদার মনিরুল ইসলাম মনিরের দিকে। যিনি সবার কাছে মনির হুজুর নামে পরিচিত।

এ ব্যাপারে ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাভারামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের কাঁচাবালিয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মান্নান মল্লিক বলেন, নেছারিয়া সড়কে ২০০৮ সনে হালকাযান প্রকল্পের ২ কোটি টাকা ব্যায়ে এ ব্রীজ নির্মান করা হয়। ঝালকাঠির হিমানন্দকাঠি হয়ে আটগড়ের হাট থেকে বরিশালের বানাড়িপাড়ার সংযোগ সড়কে এটি করা হয়েছিলো। কিন্তু ব্রীজ নির্মানের আগে মাটি টেষ্ট না করে, এপ্রোচের দুপার্শে মাটি না দেয়ায় নির্মানের পর থেকেই পরিত্যাক্ত অবস্থায় পরে থাকে। দায়সারা এ ব্রীজটি নির্মানের কিছু দিন যেতে না যেতেই খালের ভিতরে ধ্বসে পরে। তাড়াহুরা করে ঐসময় ঠিকাদার মনির হুজুর ইঞ্জিনিয়ারদের সহায়তায় দরপত্র অনুযায়ী কাজ না করে বিল উত্তোলন করে নিয়ে যায়। বাধ্য হয়ে আমরা নিজ খরচে বিকল্প বাঁশের সাকো নির্মান করে যাতায়াত করছি। এলাকাবাসির এ অভিযোগ সরেজমিনে দেখতে সাংবাদিকরা ঘটনা স্থলে গিয়ে এর সত্যতা পায়। ঘটনাস্থল থেকে ফিরে এব্যাপারে তথ্য পেতে ঝালকাঠি এলজিইডি ভবনে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ ও ঠিকাদারের স্বরনাপন্ন হলেও লাভ হয়নি।

এ বিষয়ে এলজিইডি কার্যালয়ে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ঠিকাদার মনির হুজুর তথ্য প্রদান ও কথা বলার জন্য একাধিকবার সময় নিয়ে ব্রিজের মালামাল ভেঙ্গে সরিয়ে আনেন। এ প্রসঙ্গে কাঁচাবালিয়া ৩ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক জহর সিকদার বলেন, কিছুদিন আগে সাংবাদিকরা ভাঙ্গ্া ব্রীজটির ভিডিও চিত্র নিয়ে যাবার পর পরই ঠিকাদার মনির হুজুর এটি ভেঙ্গে সরিয়ে নেয়ার চেষ্ঠা করে। কিন্ত এলাকাবাসি বাঁধা দিলে ঠিকাদার দ্বিতীয় দফায় গত সপ্তাহে উপজেলা এলজিইিডি প্রকৌশলীর পরিচয়ে একজনকে সাথে নিয়ে আসেন। তিনি জনসাধারনকে আগামী ২ মাসের মধ্যে এখানে ব্রীজ নির্মান করার প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর দ্রুত ব্রীজের মালামাল ভেঙ্গে সরিয়ে নিয়ে যায় মনির হুজুরের ভাই। এসময় ব্রীজের একটি বড় স্লাব খালের মধ্যে পরে যায়। তা এখনো ওখানেই পরে আছে।

এ প্রসঙ্গে গাভারামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লিটন জানান, আমার ইউনিয়নে ঠিকাদার মনির হুজুর হালকাযান প্রকল্পের কোটি কোটি টাকার একাধিক ব্রীজ করার কথা শুনেছি। তার মধ্যে দৃশ্যমান ১টি কাঁচাবালিয়ার ব্রীজ। ব্রীজটি করার পর এ্যপ্রেচে মাটি না দেয়ায় পরিত্যাক্ত অবস্থায় পরে থাকে। ৩ বছর আগে ব্রীজটি নির্মানের কিছু দিন পর ধ্বসে পরে যায়। আমি উপজেলা মাসিক উন্নয়ন সভায় বিষয়টি জানিয়ে এলজিইডি কতৃপক্ষকে অবগত করেছি। শুনেছি এলাকাবাসিকে ভুল বুঝিয়ে ঠিকাদার ব্রীজটির মালামাল সরিয়ে ফেলেছে। বাকি ব্রীজ গুলো কোথায় তা আমার জানা নেই। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইসলাম ব্রাদার্স লিঃ এর ঠিকাদার মনির তালুকদার এ প্রসঙ্গে দীর্ঘ দিন বক্তব্য দেয়ার কথা বলে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতির আড়ালে তিনি এলাকায় লোক পাঠিয়ে ব্রীজটি সরিয়ে ফেলার পর কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে ঝালকাঠি এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম সরকার এ প্রসঙ্গে তার দপ্তরে কোন ফাইল বা তথ্য নেই জানালেও অনুষ্ঠানিক ভাবে বক্তব্য দিতে প্রধান প্রকৌশলীর অনুমতির কথা জানান। এসময় তার সামনেই সাংবাদিকরা প্রধান প্রকৌশলীর সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। তিনি নির্বাহী প্রকৌশলীকে ফাইল খুজে বের করার নির্দেশ দেন। এর একদিন পরে নির্বাহী প্রকৌশলী বক্তব্য প্রদান করে বলেন, আমি নতুন এসেছি। হালকাযানের যে ৬টি ব্রীজ নিয়ে অভিযোগ উঠেছে সেই কাজের কোন ফাইল আমার দপ্তরে নেই। নির্বাহী প্রকৌশলী ঠিকাদারের কাছে এ কাজের কাগজপত্র আছে কিনা জানতে না চাওয়ার কারন সম্পর্কে কোন মন্তব্য করেননি।

এলজিইডি ভবন থেকে হালকাযান প্রকল্পের ফাইল উধাও হবার পাশাপাশি ঘূর্নিঝড় পূনর্বাসন প্রকল্পের (সিআরপি) কাজের তদন্ত হলে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেড়িয়ে আসবে বলে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়।


(ডিএস/এইচআর/সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test