E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়তে এক অধ্যাপকের ছুটে চলা 

২০২১ জুন ০৮ ১৮:২৪:১৫
পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়তে এক অধ্যাপকের ছুটে চলা 

ফরিদুল ইসলাম রঞ্জু, ঠাকুরগাঁও : পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত ছুটে চলেছেন অধ্যাপক তিতাস। পুরো নাম আমিনুল ইসলাম তিতাস। গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তিনি। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া করার পাশাপাশি জীবনে চলার পথে তিনি যেন একটি ভিন্ন প্রতিজ্ঞা বেছে নিয়েছেন। সেটি হলো একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন।

পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন তিনি ছড়িয়ে দিতে চান অন্যের মাঝে। কখনো রাস্তায় কখনো কোনো মসজিদের সামনে চার চাকার একটি বাক্সে পোস্টার ও ফেস্টুন লাগিয়ে অবস্থান করছেন তিনি। গত রবিবার (০৬ জুন) দুপুরে ঠিক এমন একটি দৃশ্য চোখে পড়ে ঠাকুরগাঁও জর্জ কোর্ট চত্বরে।

চার চাকার একটি বাক্সে পোস্টার-ফেস্টুন লাগিয়ে হেঁটে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছেন অধ্যাপক আমিনুল। কখনো হাঁটছেন, কখনোবা কোনো একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে পথচারীদের ডেকে ডেকে বোঝাচ্ছেন কী করে দেশটিকে পরিষ্কার রাখতে হবে। তার এই ব্যতিক্রম উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জেলার সর্বস্তরের মানুষ।

‘আসুন দেশকে এগিয়ে নিতে কিছু অবদান রাখি’, ‘গড়ে তুলি পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ’, ‘আমরা করব জয় একদিন’, ‘ছোট বড় আবর্জনা যত্রতত্র ফেলব না’সহ বিভিন্ন স্লোগান লেখা রয়েছে তার দেওয়া ব্যানার ফেস্টুনের মধ্যে। যেগুলো মনোযোগ সহকারে দেখছেন অনেক পথচারী।

জানা যায়, ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত বিভাগে অনার্স ও ১৯৯৯ সালে মাস্টার্স করেন আমিনুল ইসলাম তিতাস। এরপর ২৪তম বিসিএস পরীক্ষায় (শিক্ষা) উত্তীর্ণ হয়ে গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজে গণিত বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম তিতাস ঠাকুরগাঁও শহরের আশ্রমপাড়া এলাকার আব্দুল মজিদের ছেলে। পরে ২০১২ সালে স্ত্রীর উচ্চ শিক্ষার সুযোগে জাপানে গিয়েছিলেন তিনি। সেই দেশের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা দেখেই নিজের দেশকে পরিষ্কার রাখার কথা চিন্তা করেন তিতাস। সেই দেশের মতো একটি সুন্দর পরিবেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। অবশেষে দেশে ফিরে নিজে গড়ে তুলেন সামাজিক আন্দোলন।

দীর্ঘ ৮ বছর থেকে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন সহকারী অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম তিতাস। বাংলাদেশকে একটি সুন্দর পরিচ্ছন্ন দেশ হিসেবে গড়ে তুলার লক্ষ্যে দিনের পর দিন করে যাচ্ছেন পরিশ্রম। জনগণের মাঝে দিয়ে যাচ্ছেন সচেতনামূলক দিকনির্দেশনা।

শহরের চৌড়াস্তায় কথা হয় পথচারী আব্দুল হালিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঘণ্টাখানেক সময় ধরে দেখছি একটি মানুষ বক্সের ভেতরে রয়েছে। সেখান থেকে দাঁড়িয়ে জনগণকে সচেতনতামূলক বাণী দিয়ে যাচ্ছেন। পরে শুনলাম তিনি অধ্যাপক। যিনি এই দেশটিকে পরিচ্ছন্ন দেশ গড়ার লক্ষ্যে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

ঠাকুরগাঁও জর্জ কোর্ট চত্বরে কথা হয় পথচারী খালেক উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, একজন অধ্যাপক যদি দেশকে সুন্দর, পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য এভাবে আন্দোলন করতে পারে তাহলে আমরা কেন পারব না। এই অধ্যাপক যেসব কথা বলছেন, প্রতিটি কথাই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমার মতে শুধু তিনি নন, প্রশাসনকেও এই বিষয় তৎপর হতে হবে।

অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম তিতাস বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই দেশটিকে পরিচ্ছন্ন করার স্বপ্ন নিয়ে বিভিন্ন জেলা ঘুরছি। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। একদিন আমি সফল হবই। আমার এই স্বপ্নটি সেদিন নিজের মধ্যে জেগে উঠেছে যেদিন আমি জাপানে গিয়েছিলাম। তিনি আরও বলেন, সেই দেশটি একদম ছবির মতো গোছানো। নেই সড়কের ওপর কোনো ময়লা। অথচ সেখানে কোনো পরিচ্ছন্নকর্মীও নেই। কারণ সেই দেশের জনগণ অনেক সচেতন। কেউ যেখানে সেখানে আর্বজনা ফেলায় না। নির্দিষ্ট স্থানে সবাই আর্বজনা ফেলে।

জেলা প্রশাসক ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, অধ্যাপক আমিনুল পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন সেটিকে সাধুবাদ জানাই। একজন মানুষ গড়ার কারিগর দেশকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য বিভিন্ন জায়গায় প্রচারণা করে থাকেন। আমরা বিশ্বাস করি, একদিন তার এই স্বপ্ন পূরণ হবে। তবে শুধু আমিনুল নয়, আমাদেরও সচেতন হতে হবে বলেও জানান তিনি।

(এফ/এসপি/জুন ০৮, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test