E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন হত্যার ২৫ বছর

করোনায় আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম না থাকায় হত্যার বিচার বিলম্বিত!

২০২১ জুন ১৮ ২৩:২০:৪৬
করোনায় আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম না থাকায় হত্যার বিচার বিলম্বিত!

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : দীর্ঘ ১৯ বছরেও শেষ হয়নি বীর মুক্তিযোদ্ধা স ম আলাউদ্দিন হত্যা মামলার বিচার। ১৯৯৬ সালের ১৯ জুন রাতে দৈনিক পত্রদূত অফিসে কর্মরত অবস্থায় দুস্কৃতিকারীদের গুলিতে প্রাণ হারান দৈনিক পত্রদূতের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক স ম আলাউদ্দিন। চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার বিচার উচ্চ আদালতের নির্দেশে দীর্ঘদিন স্থগিত ছিল। বর্তমানে করোনার কারণে আদালতের কার্যক্রম স্বাভাবিক না থাকায় বিচার বিলম্বিত হচ্ছে। 

২০১২ সালে সাতক্ষীরা দায়রা জজ আদালতে মামলাটির বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। ইতোমধ্যে মামলাটির ৩৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে আদালত। গত এক বছরে কোন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করানো সম্ভব হয়নি। মারা গেছেন বেশ কয়েকজন সাক্ষী। এছাড়া আরো কয়েকজন সাক্ষীকে মামলায় উল্লিখিত ঠিকানায় খুজে না পাওয়ায় মামলাটির বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত হয়।

নিহত স.ম আলাউদ্দিনের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালের ১৯ জুন দৈনিক পত্রদূত অফিসে কর্মরত অবস্থায় দুস্কৃতিকারীদের গুলিতে নিহত হন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য স. ম আলাউদ্দিন। এ ঘটনায় নিহতের ভাই স ম নাছির উদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা খুনিদের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যাকাণ্ডের পাঁচ দিন পর পুলিশ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কাটা রাইফেলসহ সুলতানপুরের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আব্দুল ওহাবের ছেলে যুবলীগ কর্মী সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। সে আদালতে ১৬৪ ধরায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে হত্যাকাণ্ডের কারণ এবং এর সঙ্গে জড়িত হিসেবে সাতক্ষীরার চিহ্নিত গডফাদার খলিলুল্লাহ ঝড়ু, তার ভাই সন্ত্রাসী সাইফুল্লাহ কিসলু (বর্তমানে মৃত), তার আর এক ভাই সন্ত্রাসী মোমিন উল্লাহ মোহন, আর এক গড়ফাদার আলিপুরের আব্দুস সবুর, কামালনগরের আবুল কালাম, সুলতানপুরের এসকেন্দার মির্জা, কিসলুর ম্যানেজার আতিয়ার রহমান, প্রাণসায়রের সফিউর রহমান, নগরঘাটার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফের নাম প্রকাশ করে। প্রায় এক বছর তদন্ত শেষে ১৯৯৭ সালের ১০ মে অপরাধ ও তদন্ত শাখার (সিআইডি) সহকারি পুলিশ সুপার খন্দকার মো. ইকবাল উপরিউক্ত ব্যক্তিদের আসামি শ্রেণিভুক্ত করে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

আদালত সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা দায়রা জজ আদালতে উপরিউক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলাটির অভিযোগ গঠনের পর ঝড়ু, সবুরসহ কয়েকজন আসামি উচ্চ আদালতে কোয়াশমেন্টের আবেদন করলে মামলাটির বিচার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে হাইকোর্ট ডিভিশন এবং অ্যাপেলিট ডিভিশনের আদেশে দীর্ঘদিন মামলাটির কার্যক্রম বন্ধ ছিল। একপর্যায়ে অ্যাপেলিট ডিভিশন বিষয়টির নিষ্পত্তি করে সকল আসামির বিরুদ্ধে মামলাটি দ্রুত বিচারের নির্দেশ দেন। এ পর্যায়ে মামলাটি সাতক্ষীরা দায়রা জজ আদালতে পুনরায় বিচার কার্যক্রম শুরুর প্রাক্কালে পুনরায় উক্ত সবুর, ঝড়সহ কয়েকজন আসামি সাতক্ষীরা জেলার পরিবর্তে মামলাটি অন্য কোন জেলায় বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করলে বিচার কার্যক্রম আবারো স্থগিত হয়ে যায়।

হাইকোর্ট ডিভিশন আসামিদের আবেদন না’মঞ্জুর করে আদেশ দিলে আসামিরা ঐ আদেশের অ্যাপেলিট ডিভিশনে যায়। সেখানে শুনানির পর আসামিদের আবেদন না’মঞ্জুর হয়। সে আদেশ নিম্ন আদালতে আসার পর মূলত ২০১২ সালে মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ২০১৯ সালে সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নিহতের স্ত্রীর সাক্ষ্যগ্রহণের পর তা যথাযথভাবে লেখা না হওয়ার আপত্তি তুলে বাদিপক্ষ উচ্চ আদালতে সাক্ষী কার্যক্রমের উপর স্থগিতাদেশ চান। ছয় মাস স্থগিত হলেও পরবর্তীতে ওই নথি আজো সাতক্ষীরা আদালতে ফিরে না আসায় ও করোনা পরিস্থিতির কারণে মামলার কার্যক্রম স্তবির হয়ে পড়েছে।

আদালত সূত্র জানায়, মামলাটির ৩৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ইতোমধ্যে ২৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। বেশ কয়েকজন সাক্ষীর বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারির পরও তাদেরকে মামলায় উল্লিখিত ঠিকানায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সূত্র জানায়, ইতোমেধ্যে মামলাটির অভিযোগপত্রে উল্লিখিত সাক্ষীদের মধ্যে ৭/৮ জন মারা গেছেন। আদালত চত্বরে সাক্ষীদের হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ জানান, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর আদালতের কার্যক্রম যথাযথভাবে শুরু হলে মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন হত্যা মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

(আরকে/এসপি/জুন ১৮, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test