E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

সংস্কারের ২০ দিনেই সড়কটি ফিরে পেয়েছে তার পুরানো চেহারা

২০১৪ সেপ্টেম্বর ০৩ ১৬:২৬:০২
সংস্কারের ২০ দিনেই সড়কটি ফিরে পেয়েছে তার পুরানো চেহারা

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : সারাদেশের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের একমাত্র ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কটি এখন মরণ সড়কে পরিণত হয়েছে। মাত্র ১৮ ফুট প্রশস্ত এ মহাসড়কের বরিশাল কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল নথুল্লাবাদ থেকে গৌরনদী ভূরঘাটা বাসটার্মিনাল পর্যন্ত ৪৯ কিলোমিটার মহাসড়কের অংশ এখন অভিশপ্ত সড়কে পরিণত হয়েছে। মাত্র বিশ দিনের ব্যবধানে প্রবল বর্ষণে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানের ইট, সুরকি উঠে ফের বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।

মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে আগে থেকেই খানাখন্দে ভরপুর ছিলো। গত বিশদিন পূর্বে সড়ক ও জনপথ বিভাগের শ্রমিকেরা ইট, বালি দিয়ে মহাসড়কটি সাময়িক উপযোগী করেছিলো। এরইমধ্যে গত এক সপ্তাহের টানা বর্ষণে মহাসড়কের অবস্থা আগের রূপে ফিরে এসেছে। সড়কের বিভিন্নস্থানে প্রতিদিনই ১৫ থেকে ২০টি যানবাহন বিকল হয়ে যানজটের সৃষ্টি ও সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। ছোট-বড় দুর্ঘটনা এ ব্যস্ততম খানাখন্দের মহাসড়কে এখন নিত্য নৈমেত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মহাসড়কের যানবাহন চালক ও স্থানীয়দের অভিযোগ, মহাসড়কটি সংস্কারের সময় ঠিকমতো বিটুমিন ব্যবহার করা হয়নি। ছোট-বড় গর্তে ইট, বালি দিয়ে কোনমতে সড়কটি চলাচলের উপযোগী করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু ব্যস্ততম মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার ভারী ও যাত্রীবাহি যানবাহন চলাচলের ফলে টানা বৃষ্টিতে মহাসড়কটি আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-বরিশাল মহাড়কের বরিশালের প্রবেশদ্বার গৌরনদীর ভূরঘাটা বাস টার্মিনাল থেকে শুরু করে ইল্লা, বার্থী, কটকস্থল, সাউদেরখালপাড়, টরকী, গৌরনদী, আশোকাঠী, হেলিপ্যাড, কাছেমাবাদ, মাহিলাড়া, বাটাজোর, বামরাইল, সানুহার, জয়শ্রী, রহমতপুর থেকে শুরু করে সাতমাইল, ক্যাডেট কলেজ, গড়িয়ারপাড়, কাশিপুর, নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল পর্যন্ত ৪৯ কিলোমিটার মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তসহ ব্যাপক খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক জায়গায় কার্পেটিং উঠে গেছে।

এসব স্থান দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কারসহ ছোট যানবাহনগুলো গর্তে পড়ে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া মাল বোঝাই ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও যাত্রীবাহি পরিবহন গর্তে পড়ে গাড়ির গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি ভেঙ্গে রাস্তার মাঝখানে আটকা পড়ে যাচ্ছে। অনেক সময় এসব যানবাহন উদ্ধারে বিলম্ব হলে পুরো মহাসড়কে যানজট লেগে যায়। তার পরেও ঝুঁকিপূর্ণ গর্ত ও খানাখন্দের মধ্যদিয়েই প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকিনিয়ে যানবাহনে যাত্রী ও ট্রাকে মালামাল পরিবহন করা হয়।

এ রুটে চলাচলকারী একাধিক লোকাল বাসের শ্রমিকেরা জানান, বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের জয়শ্রী থেকে রহমতপুর পর্যন্ত দুটি সেতুর ৮ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ব্যতিত অন্যসব অংশে দীর্ঘদিন থেকে তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। ফলে প্রবল বর্ষণে মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়ে যানবাহন চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পরেছে। বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বিশদিন পূর্বে মহাসড়কের ছোট-বড় গর্তে ইট ও বালি দিয়ে সংস্কার করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, প্রবল বৃষ্টির মধ্যে ইটের টুকরো ও বালি দিয়ে নামেমাত্র সংস্কার করার কয়েকদিন যেতে না যেতেই ইটের টুকরোগুলো সরে গিয়ে পূণরায় ছোট-বড় গর্তগুলো পূর্বের আকার ধারন করে ব্যস্ততম এ মহাসড়কটি এখন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

এ রুটের যাত্রীবাহী বাসচালক হাবিবুর রহমান বলেন, নথুল্লাবাদ বাসটার্মিনাল থেকে ভূরঘাটা পর্যন্ত মহাসড়কের অবস্থা এমন যে একবার গাড়ি নিয়ে একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে গেলে দ্বিতীয়বার যেতে ইচ্ছে করে না। তার পরেও জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়েই পেটের দায়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। নথুল্লাবাদ থেকে ভূরঘাটায় পৌঁছাতে সাধারণত ৯০ মিনিট সময় লাগে। কিন্তু সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে এখন তিন ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়।


গৌরনদী হাইওয়ে থানার এক এস.আই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মহাসড়কে অধিকাংশ এলাকা এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস মালিক সমিতির সভাপতি আফতাব হোসেন জানান, মহাসড়কের বেহাল দশার কারনে যাত্রীদের যেমন ঝুঁকিনিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে, তেমনি প্রতিনিয়ত যানবাহন বিকল হয়ে পরিবহন মালিকদেরও লোকসান গুনতে হচ্ছে। সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালিদ শাহেদ জানান, বরিশাল অঞ্চলের সড়কের মধ্যে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে বর্ষার কারণে বিটুমিন দিয়ে কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছেনা।

তবে বর্ষা কমলে খুব শীঘ্রই ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক সাময়িকভাবে সংস্কার করা হবে। বরিশাল সড়ক ও জনপদ বিভাগের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬০-৬৫ সালে নির্মিত বরিশাল-ফরিদপুর মহাসড়কটি মাত্র ১২ ফুট প্রশস্ত করা হয়েছিলো। ওইসময় মাত্র পাঁচ টন বহনযোগ্য যানবাহনের জন্য মহাসড়কটি নির্মাণ করা হলেও বর্তমানে এ মহাসড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত ৩০ থেকে ৩৫ টন পণ্য নিয়েও যানবাহন চলাচল করছে। ফলে খুব দ্রুত সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনই মেরামত ও সংস্কার কাজও টেকসই হচ্ছে না। এজন্য তহবিলে সঙ্কটের কথাও বলছেন সড়ক অধিদফতরের স্থানীয় দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

এছাড়া তৎকালীন সময়ের চেয়ে বর্তমানে এ মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যাও কয়েক’শ গুন বৃদ্ধি পেলেও প্রশস্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ৪০ ভাগ। ১৯৮৮ সালের বন্যার পরে মহাসড়কের বরিশাল-ফরিদপুর অংশের দুই পাশে তিন ফুট করে মোট ছয় ফুট হার্ড শোল্ডার নির্মাণ করা হয়। পরে তা কাপের্টিং করে মহাসড়কের মূল অংশটি ১৮ ফুট প্রশস্ত করা হয়েছে। কিন্তু যানবাহনের সংখ্যা ও পরিধির তুলনায় বর্তমানে তা সম্পূর্ণ অসামাঞ্জস্য।

সূত্রে আরো জানা গেছে, গত দু’বছর পূর্বে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় জাতীয় এ মহাসড়কটির বরিশাল-ফরিদপুর অংশে চার লেনে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে একটি সমীক্ষার কাজ শুরু করা হয়েছে। কিন্তু তার অগ্রগতি খুব একটা সন্তোষজনক নয়। মূলত এ মহাসড়কটি ভুরঘাটা থেকে মোস্তফাপুর হয়ে টেকেরহাট পর্যন্ত এলাকাটি সম্প্রতি ২৪ ফুট প্রস্থ করে নির্মাণ করা হয়েছে। টেকেরহাট থেকে ভাঙ্গা হয়ে ফরিদপুর পর্যন্ত প্রায় ৫৫ কিলোমিটার মহাসড়কের বেশির ভাগই মাত্র ১৮ ফুট প্রশস্ত। সড়ক বিশেষজ্ঞদের মতে, জরুরী ভিত্তিতে মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করাসহ আপতকালীন ব্যবস্থা হিসেবে বিদ্যমান সড়কটির জরুরী টেকসই মেরামতের কোনো বিকল্প নেই।

(টিবি/এএস/সেপ্টম্বর ০৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test