E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দিনাজপুরে লকডাউনের নামে চলছে বাঁশডাউন! 

২০২১ জুন ২৩ ১৮:৩৭:৪৮
দিনাজপুরে লকডাউনের নামে চলছে বাঁশডাউন! 

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা দিনাজপুরের সদরে চলমান লকডাউনের ৯ম দিন অতিবাহিত হচ্ছে আজ বুধবার।

করোনা ভয়াবহ পরিস্থিতিতে রূপ নিয়েছে এ জেলায়। গত একসপ্তাহে জেলায় করোনা আক্রান্ত এবং উপসর্গে মৃত্যু হয়েছে, ৩৭ জনের। এর মধ্যে সদরেই মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। একসপ্তাহে ২০৬১ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছে ,৮৭৪ জনের শরীরে করোনার উপস্থিতি রয়েছে। দিনাজপুরের ১৩ টি উপজেলার মধ্যে সদরেই আক্রান্ত হয়েছে, ৫৭০ জন। শনাক্তের হার ৪৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

১৫ জুন থেকে শুরু প্রথম সপ্তাহের লকডাউন শেষ না হতেই আরও একসপ্তাহ লকডাউন বৃদ্ধি করে দিনাজপুর জেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটি। এ লকডাউন ২৮ জুন রাত ১২ টা পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন, জেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুল কুদ্দুস।

লকডাউনে সদরে মানুষ ও যেকোনো যানবাহন চলাচলের ওপর কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হলেও স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে হালকা যানবাহন ও মানুষজন সড়ক,মহা-সড়কে অবাধে বিচরন করছে।তবে, লকডাউন বাস্তবায়নে ব্যর্থ স্থানীয় প্রশাসনের মদদে শহরের অধিকাংশ প্রবেশ পথগুলোতে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেট হয়েছে করা হয়েছে। প্রশাসনের সহায়তায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বেশ কিছু উৎসুক ব্যক্তি এই দুর্ভোগ এবং প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এতে জেলাবাসী চরম বিপাকে পরেছে। জরুরি প্রয়োজনে এম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, আইন্ন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং মিডিয়াকর্মীরা গন্তব্য স্থানে পৌঁছাতে পারছেন না।

পানি, বিদ্যুৎ, ওষুধ, কাঁঁচ মাল, খাদ্য পণ্যে সরবরাহে নিয়োজিত ব্যক্তি এবং অসুস্থ্য রোগিদের স্বজনরা হয়রানি ও প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছে। এমন কি এই প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়ে চিকিৎসা নিতে না পারায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগও উঠেছে। অসুস্থ্য রোগিদের জরুরি চিকিৎসায় হাসপাতালে প্রেরণ, অগ্নি নিবারণ,চুরি-ডাকাতি ঠেকানো সহ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে অনেকেই। কিন্তু, লকডাউনের নামে বাঁশডাউনের স্থানগুলোর ভেতরে চলছে,নানা অপরাধ মুলক কার্যক্রম। বেশ কিছু বাঁশডাউন এলাকায় দোকান-পাঠ খোলা রেখে দলবেঁধে আড্ডা,নেশা দ্রব্য বিক্রি, বিকট শব্দে সাউন্ড সিস্টেম বাজিয়ে নাচ-গান সহ বিভিন্ন অপরাধ মুলক কাজ হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

লকডাউন মানে কী অসহযোগ আন্দোলন ? এনিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তানাহলে কেনোই বা বাঁশডাউন দেয়া হয়েছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে ! দিনাজপুর ভবন অর্থাৎ দিনাজপুর জেলা প্রশাসক এর বাসভবনের সামনের রাস্তায় বাঁশডাউন দেয়া হলেও পরের দিনই তা অপসারণ করা হয়েছে। ওই সড়ক দিয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, সেক্টর কমান্ডারসহ ভিআইপি ব্যক্তিরা যাতায়াত করেন। তাছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে বসানো বাজারের পথ এই সড়ক। তাই বাধ্য হয়ে বাঁশডাউন অপসারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা।

তবে, বিবেচনায় দেখা গেলে বাঁশডাউন দেয়া অন্যান্য সড়কগুলেও গুরুত্বপূর্ণ। এই বাঁশডাউন দেয়ার কারণে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চিকিৎসা নিতে না পারায় রোগীও মারা যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মামুর নামে একব্যক্তি তার ফেসবুক আইডি লিখেছে, 'গতকালকে আমার বড় ভায়রাভাই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ জনিত কারণে ইন্তেকাল করেছেন। গত চারদিন ধরে জিয়া হার্ট ফাউন্ডেশনে ভর্তি ছিলেন। এই বাঁশ থাকার কারনে আমার বাড়ি, আমার শ্বশুর বাড়ি, এবং আমার ভায়রার বাসা থেকে যাওয়া আসা করার কি যে অসুবিধা হয়েছে তা বলে প্রকাশ করতে পারবো না। আমার কথা না হয় বাদই দিলাম।এমন পরিস্থিতির শিকার বাড়ির মা বোনেরা (পুরুষ মানুষ অনুপস্থিত থাকলে) পড়লে তাদের অবস্থা কি হবে একটু চিন্তা করুন।"

এদিকে লকডাউনের মধ্যেও সড়কগুলোতে আটো রিস্কা-ইজিবাইক চলাচলের সংখ্যাই বেশি। ওষুধ এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান বাদে অন্যান্য দোকানপাটসহ বিপনী বিতানগুলো বন্ধ থাকার বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও অনেক দোকান-পাঠ অর্ধেক ঝাপ ফেলে খোলা রেখেছে। ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ টহল এলেই ওইসব দোকান-পাঠ সাময়িক বন্ধ থাকছে। এভাবেই খোলা-বন্ধের লুকোচুরি চলছে।

লকডাউন কি তা এখনো বুঝে উঠতে পারছেনা কেউ। লকডাউনের অর্থ চচ্ছে,অবরুদ্ধ। নিজেকে অবরুদ্ধ করলেই লকডাউন বাস্তবায়িত হবে। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়াই হচ্ছে, লকডাউন। কিন্তু, প্রয়োজন ছাড়াই সড়কে বাইক নিয়ে পায়তারা, বন্ধু নিয়ে আড্ডা,নেশা সংগ্রহ এবং পানে অনেক তরুণ-যুবককে রাস্তা,মোড় এবং বাঁশডাউনের ভেতরে আড্ডা দিয়ে দেখা যাচ্ছে। অনেকে আবার বাইক নিয়ে বেপরোয়া ছুঁটে বেড়াচ্ছে। বাঁশডাউন দিয়ে লকডাউন বাস্তবায়ন করা কী সম্ভব- এনিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

(এস/এসপি/জুন ২৩, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test