E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরার শীর্ষ চোরাকারবারি ব্লাকার মন্টু গ্রেপ্তার 

২০২১ জুন ২৭ ২৩:৩৩:৫৬
সাতক্ষীরার শীর্ষ চোরাকারবারি ব্লাকার মন্টু গ্রেপ্তার 

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার শীর্ষ চোরাকারবারি হাফিজুর রহমান মন্টু ওরফে হাজী মন্টু ওরফে ব্লাকার মন্টুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার রাতে গোয়েন্দা পুলিশ সাতক্ষীরা সদরের হাড়দ্দহ গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। তার বাবার নাম মৃত আবুল হোসেন।

স্থানীয় দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদারকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুর পর তার সহযোগি খুলনার অপর এক চোরাকারবারি ব্লাকার সামছু তার চোরাচালানী সিণ্ডিগেট পরিচালনা করতেন। এ সময় ব্লাকার সামছুর কাছের লোক বলে পরিচিত কালীগঞ্জের ইন্দ্রনগরের বাসিন্দা কোটিপতি ছিদ্দিক ও সদরের হাফিজুর রহমান মণ্টু তাদের মাদক ও চোরাচালানি ব্যবসা বাড়িয়ে তোলে। ২০১০ সালে কালীগঞ্জ থানার ফেনিসিডিলের মামলা সাতক্ষীরা জেলখানায় ছিলেন ব্লাকার সামছু।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সুনজরে নেই জানতে পেরে ২০১২ সাল থেকে ব্লাকার সামছু ঢাকায় চলে যান। এরপর থেকে কোটিপোতি ছিদ্দিকের সহায়তায় খুলনায় বসেই সুন্দরবন দিয়ে মাদক ও চোরাচালানী পণ্য নিয়ন্ত্রণ করতো মন্টু। কোলকাতার খিদিরপুর থেকে ট্রলার ভর্তি করে মাদক ও ত্রি-চি নিয়ে কুয়াকাটায় সাগরের মাঝখান থেকে ট্রলারে থাকা পণ্য খালাস করা হতো। এভাবে প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ বার মাল এনে কুয়াকাটায় নিয়ে যাওয়ার পর বিশেষ ব্যবস্থাপরায় ওইসব মাল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বড় বড় শহরে ছড়িয়ে দিতো সে। স্থানীয় কিছু গরীব মানুষকে মাসিক চুক্তিতে কাজ করাতো সে। ২০১৮ সালে একটি বড়মাপের ট্রলের থ্রি-পিচ ও মাদক সহ ১১ কোটি টাকার চোরাই পণ্য কুয়াকাটার মাঝ সমুদ্র থেকে আটক করে কোষ্টগার্ড।

এতে মন্টু না থাকলেও তার ভাই রবিউলসহ নয় জন, ট্রলার মাঝি ও খালাসি গ্রেপ্তার হয়। মহিপুর থানায় দায়েরকৃত কোষ্ট গার্ডের মামলায় মন্টু ছিল সন্দিগ্ধ আসামী। মন্টুর বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা সদরসহ কয়েকটি থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে সাতটি মামলা রয়েছে। কুখ্যাত চোরাকারবারি মন্টুর শশুর বাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাট থানাধীন শাকচুড়া গ্রামে হওয়ায় সে ওই দেশের নাগরিক বনে যায়। নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে গাড়িতে ৪৫০ পিস ইয়াবা উদ্ধার মামলার পলাতক আসামী ও মাদক সেবনের অভিযোগে বড় ভাই শহীদুল ইসলামের পক্ষ থেকে কয়েকবার কারাগারে পাঠানো আসাদুল এখন তার দক্ষিণ হস্ত বলে পরিচিত। তার জিপ গাড়িটি আসাদুল ব্যবহার করে আসছে।

এছাড়া গ্রেফতার এড়াতে মন্টু বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের সাথে অবৈধ টাকার বিনিময়ে সখ্যতা রেখে চোরাকারবার চালিয়ে আসছে বহুদিন ধরে। শনিবার রাত ৯টার দিকে হাড়দ্দহ গ্রামের দক্ষিণপাড়ার আওয়ামী লীগ নেতা শহীদুল ইসলামের ভগ্নিপতি আশরাফুল ইসলাম ডাবলুর মুদি দোকানের সামনে থেকে পুলিশ তাকে আটক করে।
এদিকে, গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর মন্টুকে ছাড়িয়ে নিতে পুলিশের এক উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাকে দুলাভাই পরিচয় দেওয়া আসাদুলসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দৌড়ঝাঁপ করেও ব্যর্থ হয়।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসিন আলম চৌধুরী জানান, গত ২৪ মে ভারতে পাচার কালে সাতক্ষীরার আলিপুর থেকে দু’ চোরাকারবারিসহ ৩ লাখ ৬০ হাজার পিস বাংলাদেশের সরকারি জন্মনিয়ন্ত্রণের সুখি ট্যাবলেট আটক করা হলেও পালিয়ে যায় কুখ্যাত চোরাকারবারি মন্টু। এ ঘটনায় তাকে পলাতক দেখিয়ে জিআর-৩৫৩/২১ নং মামলা দায়ের করা হয়।

ওই ঘটনার পর থেকে বহুদিন যাবত আত্মগোপনে থাকার পর শনিবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মন্টুর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়েছে। তার নামে একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জাানান তিনি। তাকে গত ২৪ মে দায়েরকৃত ডিবি পুলিশের বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিযে রোববার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

(ওএস/এসপি/জুন ২৭, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test