E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নাটের গুরুরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে

সাতক্ষীরায় জাল কোর্ট ফি ও পুরাতন নন-জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পসহ প্রতারক চক্রের চার সদস্য আটক 

২০২১ জুন ২৮ ১৮:৪০:৩৪
সাতক্ষীরায় জাল কোর্ট ফি ও পুরাতন নন-জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পসহ প্রতারক চক্রের চার সদস্য আটক 

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরায় জাল কোর্ট ফি ও পুরাতন নন-জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পসহ প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে আটক করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। সোমবার সকালে শহরের জেলা জজ আদালতের রেকর্ড রুমের সামনে ভেন্ডার গলি থেকে ও রেজিষ্ট্রি অফিসপাড়া থেকে তাদের আটক করা হয়। 

আটককৃতরা হলেন, সাতক্ষীরা শহরের পারকুখরালি পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত নুর ইসলামের ছেলে সদর সহকাারি ভূমি অফিসের দালাল রুহুল কুদ্দুস (৫০), সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের মাগুরা বউ বাজার এলাকার সৈয়দ আলী গাজির ছেলে ষ্ট্যাম্প ভেন্ডার শওকত আলী (৫৮), সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া রেজিষ্ট্রি অফিসপাড়া এলাকার মৃত রমজান আলীর ছেলে ষ্ট্যাম্প ভেন্ডার এম এম রবিউল ইসলাম (৫৫) ও ছোট ভাই ষ্ট্যাম্প ভেন্ডার এম এম শাহাজান (৫১)।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের কয়েকজন আইনজীবী ও আইনজীবী সহকারি জানান, ২০০৭ সালে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিওন থাকা ও পুরাতন কোর্ট চালু থাকা কালিন সিরাজুল ইসলাম নকল কোর্ট ফি বিক্রির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বর্তমানে তিনি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের পিওন হিসেবে কর্মরত। তিনি দেওয়ানী মামলা পরিচালনাকারি বড় মাপের আইনজীবীদের সঙ্গে সখ্যতা রেখে মামলার কাজে লাখ লাখ টাকার কোর্ট ফি বিক্রি করে বহু টাকার মালিক হয়েছেন। একপর্যায়ে ২০১৫ সালে তিনি তার শ্যালক রাজিবুল্লাহ এর নামে স্টাম্প ভেণ্ডার এর লাইসেন্স করে দিয়ে তার মাধ্যমে জাল কোর্ট ফি বিক্রি হালাল করতে শুরু করেন। ওইসব কোর্ট ফি বিক্রির টাকা ভাগাভাগিতে বিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় এক বছর আগে সিরাজুল তার স্ত্রী নামে একটি লাইসেন্স করে দেন। সদর এসি ল্যাণ্ড অফিসের দালাল রুহুল কুদ্দুস, অ্যাড. শহীদুল্লাহ এর আইনজীবী সহকারী আব্দুল খালেকসহ বশে কয়েকজন সিরাজুল ও রাজিবুল্লার কাছ থেকে জাল কোর্ট ফি কিনে ল্যাণ্ড সার্ভে কোর্টসহ বিভিন্ন দেওয়ানী মামলায় ব্যবহার করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

২০১৫ সালের শেষের দিকে শহরের ফুড অফিস মোড়ের অ্যাড. নুরুল ইসলামের আইনজীবী সহকারি রঞ্জন বাছাড়ের কাছে রাজিবুল্লাহ ১০০ টাকার জাল কোর্ট ফি বিক্রি করার পর অন্যান্য স্টাম্প ভেণ্ডররা বিষয়টি ট্রজারির দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট বিষ্ণুপদ পালের কাছে অভিযোগ করেন। ম্যাজিষ্ট্রট মোবাইল কোর্ট না করে রাজিবুল্লাহকে ছেড়ে দেন। এরপর থেকে সে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বিশেষ করে ল্যাণ্ড সার্ভে মামলায় দীর্ঘদিন ধরে দায়েরকৃত বেশ কিছু মামলায় সিরাজুল ও রাজিবুল্লার কাছ থেকে নেওয়া জাল কোর্ট ব্যবহার করে অনেক আইনজীবী ও আইনজীবী সহকারি সুবিধা ভোগ করেছেন। যথাযথ তদন্ত করলে এর সত্যতা বেরিয়ে আসবে। জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে জড়ির রাঘব বোয়ালদের ধরা যাবে। তবে অন্য স্ট্যাম্প ভেণ্ডররা বিআরটিএ অফিসের নীচে চলে এলেও জাল কোর্ট ফি বিক্রির সুবিধার্থে রাজিবুল্লা তার ভগ্নিপতির সহযোগিতায় জজ কোর্টের নীচের বারান্দায় থেকে যান।

সাতক্ষীরা জেলা গোয়েন্দা শাখার পুলিশ পরিদর্শক ইয়াসিন আলম চৌধুরী জানান, সাতক্ষীরা জজ আদালতের রেকর্ড রুমের সামনে ভেন্ডার গলিতে ষ্ট্যাম্পভেন্ডার ও আইনজীবী সহকারীসহ কতিপয় জালজালিয়াতির চক্রের সদস্যরা জাল ষ্ট্যাম্প ও কোর্টফি ক্রয় বিক্রয় করিয়া তা সরকারী কাজে ও মামলা মোকদ্দমায় ব্যবহার করিতেছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেখান থেকে আইনজীবী সহকারী রুহুল কুদ্দুস ও ষ্ট্যাম্প ভেন্ডার শওকত আলীকে এক হাজার টাকার জাল কোর্ট ফিসহ হাতে নাতে আটক করা হয়। এছাড়া শহরের রেজিষ্ট্রি অফিসের সামনে ষ্ট্যাম্প ভেন্ডার রবিউল ইসলাম রবি ও তাই ছোট ভাই শাহাজানের তৃতীয় তলা বাড়ি থেকে বেশকিছু পুরাতন নন-জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পসহ তাদের আটক করা হয়।

এ ব্যাপারে সোমবার জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করানোর আগে গ্রেপ্তারকৃত স্টাম্প ভেণ্ডার শওকত আলী জানান, এসি ল্যাণ্ডের মুহুরী রুহুল কুদ্দুস তার কাছে কিছুদিন আগে একটি এক হাজার টাকার কোর্ট ফি নিতে এলে তার কাছে না থাকায় স্টাম্প ফেণ্ডর রাজিবুল্লার কাছ থেকে তিনি এনে দেন। রোববার সকাল ১১টায় রুহুল কুদ্দুস সদরের মাহমুদপুরের ছখিনা খাতুন, রুহুল আমিনসহ ছয়জন বাদির পক্ষে দায়েরকৃত মামলায় ওই কোর্ট ফি ব্যবহার করে। জাল কোর্ট ফি ব্যবহার করার দায়ে দুপুর দেড়টার দিকে আদালত চত্বর থেকে রুহুল কুদ্দুসকে ও পরে তাকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।

সদর এসি ল্যাণ্ডের দালাল রুহুল কুদ্দুস জানান, তিনি রাজিবুল্লার কাছ থেকে নেওয়া এক হাজার টাকার একটি স্টাম্প ২০১৮ সালে শওকত আলীর মাধ্যমে নিয়ে রোববার ছখিনা খাতুনের মামলায় ব্যবহার করেন। অ্যাড. অসীম কুমার মণ্ডলের( শ্যামনগরের কাচড়াহাটি ) কাছ থেকে ওকালতনামায় সাক্ষর করিয়ে তার কথামত অ্যাড. আবুল কালামের কাছ থেকে সাক্ষর করান তিনি। পুলিশ তাকে ধরার পর তিনি জানতে পারেন যে এক হাজার টাকার কোর্ট ফি টি জাল ছিল। জজ কোর্টের পিওন সিরাজুল ইসলাম ও তার শ্যালক রাজিবুল্লাহ জাল কোর্ট ফি বিক্রির হোতা বলে তিনি গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। রাজিবুল্লাহকে মামলার আসামী করা হলেও সিরাজুলকে আসামী করা হয়নি। তবে নিরীহ অ্যাড. আবুল কালামকে এ মামলায় আসামী করায় তিনি হতাশ হয়েছেন।

সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের স্ট্যাম্প ভেণ্ডর শাহজাহান ও রবিউল জানান, তারা ব্যাক ডেটে স্টাম্প বিক্রি করে বেশি টাকা লাভের আশায় দু’টি ১০০ টাকা নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প হেফাজতে রেখেছিলেন।

এ ব্যাপারে সোমবার বিকেলে জজ কোর্টের পিওন সিরাজুল ইসলাম মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, তার শ্যালকের নামে ২০১৫ সালে ও তার স্ত্রীর নামে ২০২০ সালে ভেণ্ডারের লাইসেন্স করা হয়েছে। জাল কোটি ফিি বিক্রির ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে ঢালাও অভিযোগ আনা ঠিক নয়। তবে তিনি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তবে তার শ্যালক রাজিবুল্লার সঙোগ মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়াছিন আলম চৌধুরী আরো জানান, জাল কোর্টি ফি বিক্রির অভিযোগে গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক মোহসীন তরফদার বাদি হয়ে গ্রেপ্তারকৃত শওকত আলী, রুহুল কুদ্দুসসহ স্টাম্প ভেণ্ডার রাজীবুল্লাহ ও অ্যাড. আবুল কালামকে পলাতক দেখিয়ে রোববার বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করেছেন। এ ছাড়া পুরাতন অলিখিত নন জুডিশিয়াল স্টাম্পসহ গ্রেপ্তারকৃত এমএম শাহাজাহান ও তার সহোদর এমএম রবিউল ইসলামের নাম উল্লেখ করে উপপরিদর্শক তন্ময় কুমারে হালদার রোববার থানায় ৪২০, ৪৬৫ ও ১০৯ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। গ্রপ্তারকৃতদের সোমবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

(আরকে/এসপি/জুন ২৮, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test