E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিশুদের মানসিক বিকাশ ব্যাহত

ঝালকাঠির ৩৬০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই

২০২১ জুন ৩০ ১৬:৫২:০৪
ঝালকাঠির ৩৬০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই

এমদাদুল হক স্বপন, ঝালকাঠি : ঝালকাঠি জেলার ৪টি উপজেলায় ৩৬০ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই শিশুদের খেলার মাঠ। ঝালকাঠি পৌরএলাকার কোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই বলে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানাযায়। এছাড়া আরো প্রায় ৪০টি বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। একাধিক বিদ্যালয়ের নীচু মাঠে মাটি না ফেলে বরাদ্দ উঠিয়ে খরচ করার অভিযোগ রয়েছে কমিটির বিরুদ্ধে। মাঠ না থাকা অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দৈনিক সমাবেশ করার জায়গাও নেই। এতে মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিশুদের মানসিক বিকাশ। করোনার প্রভাবে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বাড়ির পাশে বিদ্যালয়ের মাঠ না থাকায় ঘর বন্দি থাকতে হচ্ছে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে। 

খেলার মাঠ না থাকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশই ২০১৩ সালের ১ জানুযারি জাতীয়করণ হওয়া প্রতিষ্ঠান। বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক বিদ্যালয় স্থাপন নীতিমালা অনুযায়ী একই অথবা পাশাপাশি দাগে ৩৩ শতাংশ জমি প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের উল্লেখিত পরিমানের জমি নেই। তাই খোলার মাঠতো দূরের কথা শিশুদের দৈনিক সমাবেশ করার জায়গাও নেই।

অনুসন্ধানে জানা যায় এসব প্রতিষ্ঠান ভূয়া কাগজপত্র দেখিয়ে নিয়েছে রেজিষ্ট্রেশন। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানের নামে এই ৩৩ শতাংশ জমি থাকলেও তা একাধিক দাগে। এমনকি মাঠের জমিও প্রতিষ্ঠানের নামে দেখিয়ে রেজিষ্ট্রেশন নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে গড়ে উঠেনি খেলার মাঠ।

ঝালকাঠি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে ‘মাঠ নেই’ এমন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তাই পৃথক ভাবে ৪টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও তাদের কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। কোন কোন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে এমন তথ্য এর আগে কেহ চায়নি। তাই সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য নেই। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও তাদের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলার ১৬২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যে মাঠ নেই ২৫টি বিদ্যালয়ের।

আরো ৬২টি বিদ্যালয়ের দায়সারা মাঠ থাকলেও তা ব্যবহার অনুপযোগী। রাজাপুর উপজেলার ১২৪ টির মধ্যে মাঠ নেই ৬৪টি বিদ্যালয়ের। কাঠালিয়া উপজেলার ১৩২ টির মধ্যে মাঠ নেই শতাধিক বিদ্যালয়ের। নলছিটি উপজেলার ১৬৭ টির মধ্যে মাঠ নেই ১৪৬টি বিদ্যালয়ের। ঝালকাঠি পৌরসভার শাহী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফকিরবাড়ি সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, বিকনা সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, সুগন্ধা সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, পৌর আদর্শ সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, মিলনমন্দির সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, ফকিরবাড়ি সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়ে কোন খেলার মাঠ নেই।

ঝালকাঠি সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানায়ায়, কাঁচাবালিয়া নেছারিয়া সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, তেরআনা সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, উদচড়া সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, বহরমপুর সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, বালকদিয়া সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, দোগলচিড়া সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, বেতরা সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, কালীআন্দার সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, সারেংগল সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, কৃষ্ণকাঠি সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, শিরযুগ সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, দক্ষিণ রাজপাশা সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, কুতুবকাঠি সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, নৈয়ারী সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, কুতুবনগর সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, মিলনমন্দির সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, শাহী মডেল সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, নিবারণচন্দ্র সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, পৌর আদর্শ সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, বাসন্ডা সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, ইছানীল সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, কিফাইতনগর সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, সৈয়দুন্নেসা সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, উদ্বোধন সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, মসজীদবাড়ি সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, উত্তর কিস্তাকাঠি আবাসন সঃ প্রাঃ বিদ্যালয় সমূহে ৯ শতাংশ থেকে ২৭ শতাংশ জমি রয়েছে। কিন্তু বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক বিদ্যালয় স্থাপন নীতিমালা অনুযায়ি একই বা পাশাপাশি দাগে কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ জমি থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

নিবন্ধনকালীন শিক্ষা অধিদপ্তরের যোগসাজশে একই দাগে ৩৩ শতাংশ জমি দেখিয়ে নিবন্ধন নেওয়া হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রধান শিক্ষক জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো একজন প্রধান শিক্ষক জানান, এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ কাগজপত্র তদন্ত করলেই ব্যাপক অনিয়ম ত্রুটি পাওয়া যাবে। চামটা সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহানাজ ফেরদৌস বলেন, বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ থাকলে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের উন্নতি ঘটে। শিশুরা স্কুল শুরু হবার আগেই ক্লাশে বই রেখে মাঠে খেলতে নামে। কিন্তু যে সব বিদ্যালয়ে মাঠ নেই সেখানেতো খেলাধূলার সুযোগই নেই।

এ প্রসঙ্গে সদর উপজেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মাইনুল ইসলাম জানান, মাঠের সমস্যা অনেক বিদ্যালয়ের আছে। তবে যে দাগে দ্যিালয়ে জমি দেয়া হয় ঐ খতিয়ানে অনেক সময় একই পরিমানের জমি থাকেনা। আবার অনেক বিদ্যালয়ের মাঠের ভিতর দিয়ে রাস্তা নেয়া হয়। এরকম অনেক সমস্যা আছে। তবে নূন্যতম ৩৩ শতাংশ জমি প্রয়োজন ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য। যা পরে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। কিন্তু এর কম জমি নিয়ে কোন বিদ্যালয় করার অভিযোগ পাইনি। পেলে তদন্ত করে দেখা হবে।

রাজাপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মনিবুর রহমান বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ জমির প্রয়োজন থাকলেও একই স্থানে তা পাওয়া যায়না। তবে কিভাবে এসব জমি একই স্থানে আনা যায় সে জন্য উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটিকে।

ঝালকাঠি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, আমার কার্যালয়ে মাঠ না থাকা বিদ্যালয়ের তথ্য এই মুহুর্তে নেই। তবে প্রয়োজন হলে জেনে দেয়া যাবে। তিনি আরো বলেন, কিছু বিদ্যালয়ের জমি এক দাগে না থাকলেও তা বিদ্যালয়ের দখলেই আছে।

(এস/এসপি/জুন ৩০, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test