E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরা মেডিকেলে অক্সিজেন সংকটে ৭ রোগীর মৃত্যু!

২০২১ জুলাই ০১ ১৩:৫১:৫৭
সাতক্ষীরা মেডিকেলে অক্সিজেন সংকটে ৭ রোগীর মৃত্যু!

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা করোনা ডেডিকেটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন সংকটের কারণে বুধবার সন্ধ্যা সাতটা ১০ মিনিট থেকে পৌনে ৮টার মধ্যে সাত করোনা করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। এ সময় ২০টির ও বেশি রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হয় বলে জানা গেছে।

অক্সিজেন সংকটে মৃত্যুবরণকারীরা হলেন- মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটের করোনা পজেটিভ রোগী সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার ভাড়াসিমলা গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে আকরাম হোসেন খান (৬৩), সিসিইউ ইউনিটে চিকিৎসাধীন শহরের ইটাগাছা এলাকার মফিজুল ইসলামের স্ত্রী খাইরুন্নেছা (৪০), শহরের কুকরালী আমতলা এলাকার মনিরুজ্জামানের স্ত্রী করোনা আক্রান্ত নাজমা খাতুন, শ্যামনগরের সোনাখালি এলাকার কাশেম গাজীর ছেলে আশরাফ হোসেন, সাধারণ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আশাশুনির শ্রীউলা ইউনিয়নের বকচরা গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে রবিউল ইসলাম পারভেজ (৫৪), সিসিইউতে চিকিৎসাধীন দেবহাটা উপজেলার জগন্নাথপুর এলাকার আব্দুস সামাদ পাড়ের ছেলে আবু জাফর মো: শফিউল আলম তুহিন, সাধারণ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আশাশুনির নৈকাটি এলাকর বেনু গাজির ছেলে আব্দুল হামিদ (৭৫)।

বুধবার রাত ৮টায় সরেজমিনে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের ৪র্থ তলায় আইসিইউ ইউনিট ও সিসিইউনিটের সামনে দেখা যায়, মৃতের স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে সেখানকার বাতাস। আইসিইউ ওয়ার্ডের সামনে রোগীর স্বজনদের হুড়োহুড়ি এবং কান্নার রোল পড়ে যায়।

আইসিইউ ইউনিটে মারা যাওয়া আকরাম হোসেন খানের ছেলে তাজ মুহাম্মদ খান কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, তার বাবা করোনা আক্রান্ত হয়ে ৪৫ দিন ধরে ভর্তি ছিলেন। কয়েকদিন ধরে শ্বাস কষ্ট দেখা দিচ্ছিল। গত কয়েকদিন ধরে এই হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজিনের সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেদিকে নজর দেয়নি। সে কারণে বুধবার সন্ধ্যার পর কতগুলো রোগী মারা গেল। কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে বাবাকে হারাতে হলো তিনি আরও বলেন, সন্ধ্যা সাতটা থেকে অক্সিজেন নেই। রাত ৮টা অক্সিজেন আনা হয়। এই সময়ে এই রোগীগুলো কিভাবে বাঁচবে।

তিনি আরও বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর তাদেরকে ফোন করে ডাকা হয়েছে। আগে থেকে তাদের জানানো হলে বাবার সাথে শেষ দেখা করতে পারেতেন। এখানকার চিকিৎসার সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না বলেও অভিযোগ করে তিনি বলেন তার বাবার মত আর কাউকে যে এ ভাবে অক্সিজেনের অভাবে মরতে না হয়। এব্যাপারে বিভাগীয় তদন্তের দাবীও জানান তিনি।

শহরের মাষ্টারপাড়ার ফিরোজ হোসেন বলেন, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তার করোনা আক্রান্ত মেয়ে সীমা খাতুনকে বুধবার দুপুরে আইসিউতে ভর্তি করান। বিকেল পাঁচটার দিকে সিসিইউ থেকে বের হয়ে একজন চিকিৎসক বারান্দায় অবস্থানকারি রোগীর স্বজনদের উদ্দেশ্যে বলেন, হাসপাতালে অক্সিজেন কমে আসছে। তবে দ্রুত অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যদি কেউ কোন রোগী অন্যত্র নিয়ে যেঙতে চান তাতে তাদের কোন আপত্তি নেই। সন্ধ্যা সাতটা ১০ থেকে রাত পৌনে ৮টা পর্যন্ত সেন্টাল অক্সিজেন না থাকা অবস্থায় স্বল্প কয়েকটি সিলিণ্ডারের মাধ্যম্যে রোগীদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এরপরও সাতজন রোগীকে মরতে হলো। তার মেয়েসহ কমপক্ষে ২০জন রোগী আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে।

শ্রীউলা ইউনিয়নের বকচরা গ্রামের আসাদুল্লাহ বলেন, শুক্রবার তার বড় ভাই রবিউল ইসলাম পারভেজকে মেডিকেলের ওয়ার্ডে ভর্তি করেছিলেন। আক্সিজেন সংকটের কারণে সাড়ে ৭টার দিকে তার ভাই মারা যায়। এখানে ভালো চিকিৎসা হচ্ছে না। এব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

কলারোয়া উপজেলার বীরমুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও রোগীর স্বজন গোলাম মোস্তাফা বলেন, তার স্ত্রী সিসিইউ ওয়ার্ডে ভর্তি। সিসিইউ ওয়ার্ডে অক্সিজেন বিপর্যয়ের কারণে দু’জন মারা গেছে। তার স্ত্রীকে আল্লাহ বাঁচিয়েছে বলে বেঁচে আছে। কেন এই বিপর্যয়। তারা দেশ স্বাধীন করেছিলেন কি এ জন্য? বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

কলারোয়া উপজেলার শঙ্করপুর গ্রামের জিন্নাতী খাতুন জানান, একই গ্রামের নফর আলী সরদারের ছেলে তার দুলা ভাই নাজিমউদ্দিন গত করোনা আক্রান্ত হয়ে ৪৪০ নং ওয়ার্ডের বারান্দায় গত ২৮ জুন থেকে চিকিৎসাধীন। দিনের বড় একটি সময়ে তাকে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। বুধবার সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় অক্সিজেন বিপর্যয়ের কারণে তার দুলা ভাই যেভাবে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করেছেন সেই স্মৃতি জীবদ্দশায় ভোলার নয়।

শ্যামনগর উপজেলার কাচড়াহাটি গ্রামের সাংবাদিক অনাথ মণ্ডল বলেন, এক সপ্তাহ ধরে বাবাকে ৪৪০ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করে চিকিৎসা করাচ্ছেন। নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য নেওয়া হলেও বুধবার রাত নয়টা পর্যন্ত রিপোর্ট পাননি। সন্ধ্যা সাতটা ১০ মিনিটের পর ৩৫ মিনিট যাবৎ যেভাবে অক্সিজেন বিপর্যয় ছিল তাতে ব্যক্তিগত অক্সিজেন সিলিণ্ডার না থাকলে বাবার অবস্থা কি হতো একমাত্র ভগবানই বলতে পারেন।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ফোকাল পার্সন ডা. মানস কুমার মন্ডল বলেন, বিকেল থেকে হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেমের প্রেসার কমে যায়। সকালে এই বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। যশোর থেকে অক্সিজেন নিয়ে আসা হয়েছে। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পরপরই হাসপাতালেন সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম স্বাভাবিক হয়েছে।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: কুদরত-ই-খোদাকে একাধিকার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

বুধবার রাত ৯টার দিকে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোঃ হুমায়ুন কবীরের কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোবাইল ফোন রিসিভ করে বলেন, স্যার ব্যস্ত রয়েছেন। পরে কথা বলুন।

সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডাঃ হুসাইন শাফায়াত বলেন, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের সংকট দেখা দেওয়ার কথা ছিলনা। সেন্ট্রাল অক্সিজেন ছাড়াও ৭০টির অধিক সিলিন্ডার আছে। তবে অক্সিজেন সংকটে নয়, করোনায় ৪জন মারা গেছে। এখানে কর্তৃপক্ষের কোন গাফিলতি ছিলো কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখবে প্রশাসন।

(আরকে/এসপি/জুলাই ০১, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test