E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঈশ্বরদীতে পানির দামে দুধ, তবুও ক্রেতা নেই

২০২১ জুলাই ০৪ ২০:২৬:২৭
ঈশ্বরদীতে পানির দামে দুধ, তবুও ক্রেতা নেই

ঈশ্বরদী (পাবনা)  প্রতিনিধি : ঈশ্বরদীর হাট-বাজারে পানির দামে দুধ বিক্রি করতে চাইলেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। রবিবার সকালে এলাকার রাজাপুর, মুলাডুলি, দাশুড়িয়া, আড়ামবাড়িয়া, নতুনহাট ও আওতাপাড়ায় খোঁজ নিয়ে দুধ বিক্রি হচ্ছে না বলে জানা গেছে। ৫০ টাকা লিটারের দুধ এখন ২৫-৩০ টাকাতেও কেনার লোক নেই। যেকারণে অনেকেই এখন বাছুর দিয়ে দুধ খাইয়ে দিচ্ছে এবং আত্মিয়-স্বজনের বাড়িতে বিলিয়ে দিচ্ছে। তবে দুধ বিক্রি করতে না পারায় গো-খাদ্য যোগাড় করতে হিমসিম এবং দেনাগ্রস্থ হচ্ছে ছোট-বড় প্রায় সকল খামারী।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ড. রফিকুল ইসলাম জানান, ছোট-বড় মিলিয়ে ঈশ্বরদীতে প্রায় শতাধিক খামার রয়েছে। বিশেষ করে ছোট খামারিরা দুধ বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে গোখাদ্য কিনে এবং পরিবারের ভরণ-পোষণ নির্বাহ করে। কঠোর লকডাউনে খামারিরা দুধ বিক্রি করতে না পারায় চরম বেকায়দায় পড়েছেন।

মাজদিয়া এলাকার নাহিদ ঘোষ প্রতিদিন বাড়ি বাড়ি ঘুরে ২০০ লিটার দুধ সংগ্রহ করে লালপুরে ঘি ও ছানা তৈরীর কারখানায় সরবরাহ করে। কঠোর লকডাউনে ওই কারখানা এখন দুধ নিচ্ছে না। নাহিদ জানান, কারখানায় দুধ থেকে ক্রিম টেনে বের করার পর ওই দুধের ছানা তৈরী হয়। পরিবহণ চলাচল না করায় এই ছানা প্রতিদিনের মতো ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ এখন বন্ধ। ছানা বিক্রি না হলে শুধু ঘি বানালে লোকসান হয়।

সাঁড়া ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের কলেজ শিক্ষক আলমাস আলী জানান, ঘোষ প্রতিদিন এসে দুধ দুইয়ে নিয়ে যেত। এখন আর আসেনা। বাজারে নিয়ে গেলে কেনার লোক নেই। আমিসহ আরো অনেকেই দুধ দোয়তে না পেরে বাছুর দিয়ে দুধ খাইয়ে দিচ্ছি। আবার দোয়ানো দুধ বিক্রি করতে না পেরে আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের মধ্যে অনেকেই বিতরণ করছে।

ঈশ্বরদীর সবচেয়ে বড় জাতীয় পদকপ্রাপ্ত ‘তন্ময় দুগ্ধ খামার’ মালিক লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের আমিরুল ইসলামের খামারে প্রতিদিন ৪৫০-৫০০ লিটার দুধ হয়। এই এলাকাতে প্রায় ৪০টির মতো খামার রয়েছে। আমিরুল জানান, দুধ নিয়ে মহাবিপদে আছি। লকডাউনের আগে মিল্ক ভিটা এলাকার সব দুধ কিনে নিতো। এখন প্রতিদিন মাত্র দুই ক্যান (৮০) লিটার করে দুধ নিচ্ছে। এতো দুধ নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছি। তিনি জানান, এলাকায় খামারিদের নিয়ে ‘পাকুড়িয়া প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি’ করে সমিতির মাধ্যমে একটি কারখানার সাথে চুক্তি করে দুধ দিয়ে ক্রিম তুলে ঘি তৈরীর ব্যবস্থা করেছি। তবে ক্রিম তোলার পর যে দুধ থাকে তা দিয়ে আর ছানা তৈরী করা যাচ্ছে না। ছানা বিক্রি না হওয়ায় ওই দুধ ফেলে দিতে হচ্ছে।

সমিতিভূক্তদের এখন কোন টাকা-পয়সা দেয়া হচ্ছে না। পরিস্থিতি ভালো হলে ঘি বিক্রি করার পর টাকা পাওয়া যাবে। শুধু ঘি এর দামে পোষাবে না। ছোটখাট অস্বচ্ছল খামারিরা চরম বেকায়দায় পড়েছেন। নিজেদের ভরণ-পোষণের সাথে গোখাদ্য কিনতে অনেকেই দেনাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানান তিনি।

(এসকেকে/এএস/জুলাই ০৪, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test