E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভোমরা স্থলবন্দরে ভারতীয় ট্রাক চালকদের অবাধ চলাচল

২০২১ জুলাই ০৪ ২০:৩২:১৬
ভোমরা স্থলবন্দরে ভারতীয় ট্রাক চালকদের অবাধ চলাচল

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে অবাঁধে চলাফেরা করছে ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভার ও হেল্পাররা। স্বাস্থ্য বিধি না মেনে তারা স্থানীয় বাজারে আড্ডা দেয়ায় সংক্রমণের আতঙ্কে ভূগছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর অবস্থান না থাকায় হতাশ তারা।

ভোমরা বন্দরের ব্যবসায়িরা জানান, সাতক্ষীরার ভোমরা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট বন্ধ দেড়বছর ধরে। তবে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চলমান থাকায় প্রতিদিনই ২ থেকে ৩শ’ ট্রাক ঢোকে স্থলবন্দরে। সেই হিসেবে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬শ’ ভারতীয় ব্যক্তি ভোমরা স্থলবন্দরে প্রবেশ করে। পরবর্তীতে ইয়ার্ডে ট্র্রাক পার্কিং করে স্থানীয় চায়ের দোকান ও বাজারে ঘুরে বেড়ান তারা। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ,মুখে মাস্ক না পরেই অবাধে ঘুরে বেড়ান তারা।

সরেজমিনে রবিবার দুপুরে ভোমরা বন্দরে গেলে লক্ষীদাঁড়ি গ্রামের শফিকুল ইসলাম বলেন, ভারতীয় ট্রাক চালকরা পার্কিং ইয়ার্ডে গাড়ি রেখে ইচ্ছামতো ভোমরা বন্দর বাজার, হোটেল, চায়ের দোকান ও মুদিদোকানসহ সর্বত্র অবাধ বিচরণ করে। স্থলবন্দরে কঠোর বিধিনিষেধের লকডাউনের মধ্যেও ভারতীয় ট্রাক চালকরা মুখে মাস্ক না পরে এবং স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অবাধে ঘোরাফেরা করছে। এমনকি তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে স্থানীয় কাঁচাবাজারসহ লোকালয়ে এসে ভিড় জমিয়ে কেনাকাটা করে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। ভারতীয় ট্রাকচালক ও হেল্পারদের বিরুদ্ধে এক্ষুনি ব্যবস্থা না নিলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।

সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, ভোমরা সীমান্তের বিপরীতে স্থলবন্দর ঘোজাডাঙ্গা সীমান্তে করোনা ভাইরাসের নমুনা ও উপসর্গ সনাক্তকরনে কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে ভারতীয় আমদানীকৃত পণ্যবাহী ট্রাক চালকরা নমুনা ও উপসর্গ পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই ভোমরা স্থলবন্দরে প্রবেশ করছে । ফলে ভোমরা স্থলবন্দরে বসবাসকারি জনসাধারনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক চালকদের তাপমাত্রা মাপার জন্য ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের মধ্যে খোলা হয় একটি পরীক্ষা কেন্দ্র। ভারতীয় ট্রাক চালকরা স্থলবন্দরে প্রবেশের আগেই এই পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে তাপমাত্রা নির্ণয় করা হয়। এরপর ট্রাক ড্রাইভাররা পণ্যবাহী গাড়ী নিয়ে স্থলবন্দর পার্কিং ইয়ার্ডে প্রবেশ করে।

এ ব্যাপারে ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিত সদর উপজেলা উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার স্বপ্না রাণী মন্ডল জানান, প্রতিদিন ভারত থেকে আড়াইশ থেকে তিনশ পণ্যবাহী ট্রাক ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করে। ভারতীয় প্রত্যেকটি ট্রাক চালকদের অটো স্ক্যানারের মাধ্যমে তাপমাত্রা নির্ণয় করা হয়। কোনো ট্রাক চালকের নির্ধারিত তাপমাত্রার চেয়ে অধিক তাপমাত্রা নির্ণিত হলে তাদেরকে পুনরায় ভারতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আর যাদের নির্ধারিত তাপমাত্রা থাকে তাদেরকে টোকেন দিয়ে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ জানিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে স্বাস্থ্য পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিত আর এক কর্মকর্তা সদর উপজেলা স্যানেটারি ইন্সপেক্টর আবুল কাশেম জানান, ভারতের প্রতিটি ট্রাক চালককে প্রাথমিকভাবে অটো স্ক্যানারের মাধ্যমে তাপমাত্রা নির্ণয় করা হয়। তবে এ পর্যন্ত অধিক তাপমাত্রা নির্ণিত কোনো ভারতীয় ট্রাক চালক সনাক্ত হয়নি।

তিনি আরো জানান, ঘোজাডাঙ্গা স্থলবন্দরে করোনা ভাইরাস উপসর্গ ও নমুনা পরীক্ষার জন্যে কোনো ব্যবস্থা নেই।
এদিকে স্থলবন্দরের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করা ট্রাকচালকদের অধিকাংশ কোন ভ্যাকসিন নেননি। এমনকি নমুনা পরীক্ষাও করেননি তারা।

এ বিষয়ে কথা হয়, কলকাতার ট্রাক চালক জগদীশ ধীবর (যার গাড়ি নং-ডব্লিউবি-২৩,সি-৩৩২৩), উত্তর-চব্বিশ পরগনা জেলার ইটিন্ডা কলবাড়ি এলাকার ট্রাক চালক রবিউল সরদার (যার গাড়ি নং-ডব্লিউবি-৯৩-০৪৫৮), নদীয়া জেলার দেব গ্রামের ট্রাক চালক ফিরোজ শেখ (যার গাড়ি নং-ডব্লিউবি-৭৩ডি-৩৪৫৪), পশ্চিমবঙ্গের ঘোড়ারাষ এলাকার ট্রাক চালক আব্দুল হামিদ (যার গাড়ি নং-ডব্লিউবি-২৫এ-৭৫০১) এবং পশ্চিমবঙ্গের রামপুরহাট এলাকার গাড়ি চালক এমডি মোল্লার সাথে (যার গাড়ি নং-ডব্লিউবি-১৫এ-৩৬৫৯)। তারা জানান, তারা এখনো পর্যন্ত করোনা ভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধে কোনো ভ্যাকসিন গ্রহন করেনি এবং নমুনা ও উপসর্গ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেননি।

সামাজিক দূরত্ব না মেনে চলার বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হুসেন জানান, ভোমরা স্থলবন্দরে পুলিশের যে টিম কাজ করছে,সেই টিমকে আরও সক্রিয় করা হবে।

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা-তুজ-জোহরা জানান, শ্রমঘন এলাকায় লকডাউন মানানো খুবই কঠিন। তবু সেখানে মোবাইল টিমকে আরও সক্রিয় করার উদ্যোগ নেয়া হবে।

(আরকে/এএস/জুলাই ০৪, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test