E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হুমকিতে ইউএনও অফিসসহ ১০ সরকারি স্থাপনা 

বাসাইল উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অবৈধ ড্রেজার ব্যবহারের অভিযোগ

২০২১ জুলাই ০৮ ১৬:০৭:২৬
বাসাইল উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অবৈধ ড্রেজার ব্যবহারের অভিযোগ

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের বাসাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পুকুর খনন কাজে ব্যবহার হচ্ছে অবৈধ বাংলা ড্রেজার। খোদ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম ওই প্রকল্পে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে পুকুর খনন করে সেই মাটি দিয়ে মাঠ ভরাট করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে পুকুর খনন কাজ শেষ হওয়ার পূর্বেই বরাদ্দের তিন লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. সাখাওয়াত হোসেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থ বছরে গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টি.আর) কর্মসূচীর ৪র্থ পর্যায়ে ১৩,৬৯,২০৫ টাকার মধ্যে বাসাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পুকুরের পাড় মেরামত ও পুকুর খনন কাজের জন্য তিন লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। পুকুর খনন করে সেই মাটি দিয়ে পাড় সংস্কার করার কথা থাকলেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম পুকুরটিতে অবৈধ ড্রেজার বসিয়েছেন। এতে করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কার্যালয় ও ঐ বিদ্যালয় বিভিন্ন স্থাপনা হুমকিতে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে একই অর্থ বছরে বাসাইল উপজেলা খেলার মাঠ ভরাট প্রকল্প দেখিয়ে দুই লক্ষ টাকাসহ বিভিন্ন সময়ে অন্তত সাত লক্ষ টাকার বেশি উত্তোলন করেছেন তিনি। পূর্বে বরাদ্দকৃত অর্থের ১০ ভাগ কাজও হয়নি। পূর্বের বরাদ্দকৃত অর্থ বৈধ করতেই পুকুর খনন প্রকল্পের মাটি অবৈধ ড্রেজার দিয়ে কেটে নিয়ম বর্হিভূতভাবে মাঠ ভরাট করছেন।

পুকুরটি পশ্চিম পাশের বাসিন্দা মোশারফ হোসেন শামীম, হারুন ও সেক জাকির হোসেন সেলিমের স্ত্রী রুনা আক্তার বলেন, বিভিন্ন সময়ে পুকুর থেকে মাটি কেটে নেওয়ায় ইতোমধ্যে পুকুরের পাড় ভেঙ্গে গেছে। পুকুর খনন করে সেই পাড় সংস্কার করা কথা থাকলে উপজেলা চেয়ারম্যান ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে পুকুর খননে ড্রেজার ব্যবহার করছেন। আমরা নিষেধ করলেও তিনি তা শুনেননি। যে ইএনও অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়, সেই কর্মকর্তার অফিসের ১০০ মিটারের মধ্যেই ড্রেজার চলে, তিনি তা না দেখার ভান করে রয়েছেন। পুকুরটির পাড় ভেঙ্গে গিয়ে আমাদের নিজস্ব সড়কে ভাঙ্গন ধরেছে। এ ভাবে মাটি কাটা অব্যাহত থাকলে আমারদের বাড়ি ঘর রক্ষা করা কঠিন হয়ে দাড়াবে।

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মতিয়ার রহমান গাউস বলেন, উপজেলার কোন সরকারি উন্নয়নমূলক কাজে ইচ্ছেমতো হরিলুট করার জন্যই আওয়ামীলীগের কাউকে সম্পৃক্ত রাখা হয়না। ইতোপূর্বেও ওই মাঠটি ভরাট করার জন্য বেশ কয়েকটি প্রকল্প দেখিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান দশ লাখেরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তবে এখনো মাঠটির দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন হয়নি। কাজী অলিদ বিদ্যালয়টির পরিচালনা পর্ষদের সভপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হয়েও অবৈধ ড্রেজার চালাচ্ছেন। ফলে ঐ বিদ্যালয়ের নবনির্মিত কয়েটি ভবন, ইউএনও অফিস, সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস, জনস্বাস্থ্য অফিস, নির্বাচন অফিসসহ প্রতিবেশিদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

এ বিষয়ে বাসাইল পৌরসভার মেয়র আব্দুর রহিম বলেন, পৌর এলাকায় যে কোন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হলে পৌরপ্রশাসনকে অবগত করার বিধান রয়েছে। পুকুর ও মাঠটি পৌর শহরের মধ্যে হলেও আমাকে কোন কিছুই জানানো হয়নি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কাশেম মিঞা বলেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি কাজী অলিদ ইসলামের তত্ত্বাবধানেই কাজ হচ্ছে। ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটা বৈধ না অবৈধ তা আমি বলতে পারবো না।

এ বিষয়ে পুকুর খনন প্রকল্পের সভাপতি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহাদৎ হোসেন খান বলেন, মাঠটিতে স্টেডিয়াম হবে, তাই মাঠটি ভরাট করা প্রয়োজন। ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সব জানেন।

বাসাইল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম বলেন, মাত্র তিন লাখ টাকা বরাদ্দের এ প্রকল্পে বেকু দিয়ে খনন ও মেরামতের ব্যয় বহন করা সম্ভব না বলেই ড্রেজার দিয়ে স্কুলের পুকুরটি খনন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কোন প্রকার সংবাদ প্রকাশ না করার জন্যও তিনি অনুরোধ করেন।

বাসাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মনজুর হোসেন বলেন, ড্রেজার অবৈধ। এরপরও দেশের বড় বড় নানা মেগা প্রকল্পের কাজ ড্রেজার দিয়েই সম্পন্ন হচ্ছে।

(আরকেপি/এসপি/জুলাই ০৮, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test