E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

লকডাউনে হাট বন্ধ 

মাদারীপুরে কোরবানির পশু নিয়ে বড় ধরণের ক্ষতির মুখে খামারিরা

২০২১ জুলাই ০৮ ১৮:৩৮:০৬
মাদারীপুরে কোরবানির পশু নিয়ে বড় ধরণের ক্ষতির মুখে খামারিরা

অহিদুজ্জামান কাজল, মাদারীপুর : কোরবানির আর মাত্র দুই সপ্তাহ বাকী। এরই মধ্যে মাদারীপুরের খামারিরা গরু মোটা তাজা করণের কাজে ব্যস্ত। অন্যান্য বছর ঈদের ২/৩ সপ্তাহ আগ থেকে পশুর হাট বসতে শুরু করলেও এ বছর করোনায় চলমান লকডাউনের কারণে হাট বন্ধ থাকায় কোরবানীর পশু নিয়ে বড় ধরণের ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও খামারীরা। খামারে কোন ক্রেতা না আসায় শ্রমিকরাও তাদের বেতন পাওয়া নিয়ে রয়েছে শঙ্কায়। বেশি লাভের আশায় গৃহস্থ ও খামারীরা কোন কেমিক্যাল ছাড়াই দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটা তাজা করায় খরচ পড়েছে বেশি। মহামারী করোনার কারণে গরুর হাট বন্ধ থাকায় অনলাইন প্লাটফর্ম এর মাধ্যমেও বেচা কেনায় তেমন সাড়া পাচ্ছে না খামারিরা। লোকসান এড়াতে পশু বিক্রিতে ক্রেতাদের আকর্ষনীয় সুযোগ সুবিধারও ঘোষণা দিয়েছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে জেলা প্রশাসকের সাথে আলাপ করে আগামী ১৪ তারিখের পর সীমিত আকারে গরুর হাট বসানোর আশ্বাস দিলেন জেলার প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা।

এলাকা ঘুরে খামারিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলায় এ বছর ছোট বড় মিলিয়ে কোরবানীর জন্য হৃষ্টপুষ্টকরণ খামারের সংখ্যা রয়েছে ২ হাজার ৯৮টি। আর ডেইরিসহ মোট খামারের সংখ্যা ১৬ হাজার। কোরবানীর জন্য চাহিদার চেয়েও বেশি পশু রয়েছে জেলায়। বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে জেলার সকল পশুর হাট। অন্যান্য বছর ২/৩ সপ্তাহ আগ থেকেই কোরবানীর পশুর হাট বসতে শুরু করে। এ বছর কঠোর বিধিনিষেধের কারণে প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। পশুর হাট না বসায় এবং ক্রেতারা খামারে ও গৃহস্থদের গরু কিনতে না আসায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে খামারী ও গৃহস্থরা।

এ বছর খামারীদের এবং গৃহস্থদের গরু কেনাবেচা অন্য বছরের তুলনায় অনেক কম। অনলাইনে গরু কেনাবেচা তেমন সাড়া পড়ছেনা। নামীদামী কিছু গরু দেখতে আসে উৎসুক জনতা। বেচাকেনা তেমন হচ্ছেনা। গৃহস্থরা তাদের উৎপাদিত পশু বিক্রি নিয়েও চরম উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছে। লোকসান এড়াতে পশু বিক্রিতে আকর্ষনীয় সুযোগ সুবিধারও ঘোষনা দিয়েছে খামারীরা। সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের দাশেরচর গ্রামের আদর্শ খামারী সানজিদা ইসলাম বলেন, ‘করোনার কারনে কোরবানীর হাট না মেলায় খামারের গরু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে গরু বিক্রিতে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। আর গ্রামাঞ্চলে অনলাইনে কেনাবেচা এগুলো অনেকেই ভালোভাবে বুঝেনা।’

একই সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের চরনাচনা গ্রামের কামাল মোড়ল জানান, তিনি দীর্ঘ ১০ বছর ধরে খামারে দেশীয় পদ্ধতিতে গরু লালন পালন করে আসছেন। এ বছর তার খামারে ২৭ মন ওজনের মাদারীপুরের ‘বস’ নামের গরুটি দেখার জন্য জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন এসে ভীড় করছে। তিনি আরো জানান, ‘সপ্তাহ খানেক আগে তার গরুটি ৬ লাখ টাকা দাম করেছে। করোনার কারণে গরুর হাট না মেলায় ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন।

জেলার রাজৈর উপজেলার বদরপাশা গ্রামের আদর্শ পশু পালন কেন্দ্রের মালিক মাস্টার আব্দুর রশিদ জানান, তার খামারে কোরবানীর যোগ্য গরু রয়েছে ৮৩টি। এ খামারের গরুকে খাওয়ানো হয় সবুজ ঘাস। খামারের পাশেই সাড়ে সাত বিঘা জমির উপর নেপিয়ার জাতের ঘাস লাগানো হয়েছে। গরু প্রতি প্রতিদিন প্রায় ২শ টাকা খরচ হয়। দৈনিক খরচ হয় ১৬ হাজার টাকা। খামারে ৬ থেকে ৮ জন শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করে। গত বছরের বন্যা ও করোনায় তার খামারের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। কোরবানীর ঈদে তার খামারের গরু বিক্রি করতে না পারলে শ্রমিকদের বেতন দিতে পারবো না।

মাদারীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ এ.কে.এম আনোয়ারুল হক জানান, মাদারীপুর জেলায় কোরবানীর যোগ্য গরুর চাহিদা রয়েছে ৩৪ হাজার ১২৫টি। আমোদের উৎপাদন আছে ৩৬ হাজার ২২৩টি। চাহিদা পূরণ করে সারপ্লাস থাকবে। আমাদের খামারী পর্যায়ে মোটাতাজাকরণ করছে ৮হাজার ২৬০টি এবং পারিবারিক পর্যায়ে ২৭ হাজার ৯৭৫টি। ৬টি অনলাইন প্লাট ফর্মের মাধ্যমে খামারীদের গরু বেচাকেনা হচ্ছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে জেলা প্রশাসকের সাথে আলাপ করে আগামী ১৪ তারিখের পর সীমিত আকারে গরুর হাট বসানোর চিন্তা ভাবনা রয়েছে।

(ওকে/এসপি/জুলাই ০৮, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test