E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আগামী ২৩ জুলাই গণসমাবেশ

লতিফ সিদ্দিকীর দখল থেকে উদ্ধার জমিতে শেখ রাসেল শিশুপার্কের দাবিতে মানববন্ধন

২০২১ জুলাই ১১ ১৭:০৪:৫২
লতিফ সিদ্দিকীর দখল থেকে উদ্ধার জমিতে শেখ রাসেল শিশুপার্কের দাবিতে মানববন্ধন

রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর দখল থেকে উদ্ধার করা ৬৬ শতাংশ জমিতে শেখ রাসেল শিশুপার্ক প্রতিষ্ঠার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে এলাকাবাসী।

রোববার (১১ জুলাই) দুপুরে বৃহত্তর আকুরটাকুর পাড়া ও টাঙ্গাইলবাসীর ব্যানারে জেলা সদর রোডে ওই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এরআগে গত ৭ জুলাই(বুধবার) একই দাবিতে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসকের কাছে স্থানীয় দেড় শতাধিক ব্যক্তি সাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। স্মরকলিপির অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সহ বিভিন্ন দপ্তর ও জেলার জনপ্রতিনিধিদের কাছে দেওয়া হয়েছে। একই দাবিতে আগামি ২৩ জুলাই(শুক্রবার) বৃহত্তর আকুর টাকুরপাড়ার উদ্যোগে গণসমাবেশ আহ্বান করা হয়েছে।

রোববার দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মানবন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন- অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম, কেএম জাকিরুল ইসলাম সংগ্রাম, মো. ওয়ালিদ হোসেন, গাজী সালাহ উদ্দিন, রফিকুল ইসলাম স্বপন, এনামুল কবীর, ওয়ালিদ হোসেন, আকরাম হোসেন কিসলু প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, টাঙ্গাইল শহরের বৃহত্তর আকুর টাকুরপাড়া সবচেয়ে ঘণবসতিপূর্ণ এলাকা। এখানে শিশুদের বিনোদনের কোন জায়গা নেই। প্রাজ্ঞ রাজনীতিক আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর দখল থেকে উদ্ধার করা ৬৬শতাংশ জমিতে জেলা প্রশাসন প্রথমে শেখ রাসেল শিশুপার্ক নির্মাণ করার ঘোষণা দিলে আমরা উৎফুল্ল হয়েছিলাম। কিন্তু পরে জেলা প্রশাসন ওই জমি পৌরসভাকে বার্ষিক ইজারা দেয়। পৌরসভা সেখানে কাঁচাবাজার করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ৬৭টি দোকান এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য উন্মুক্ত শেড নির্মাণকাজ শুরু করেছে।

বক্তারা আরও বলেন, জায়গাটি হঠাৎ করে পৌরসভাকে ইজারা দেওয়ায় আমরা খুবই মর্মাহত হয়েছি। ওই জায়গায় শেখ রাসেল শিশুপার্ক নির্মান না করে কাঁচাবাজার বসানোর তীব্র নিন্দা ও ঘোরতর বিরোধিতা করছি। অবিলম্বে কাঁচাবাজারের শেড নির্মাণ বন্ধ করে শেখ রাসেল শিশুপার্ক নির্মাণের জন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

প্রসঙ্গত, টাঙ্গাইলের আকুর টাকুর পাড়া মৌজায় ৬৬ শতাংশ অর্পিত সম্পত্তিভুক্ত জমি ১৯৭২ সালে তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বার্ষিক ভাড়ায় ইজারা নেন। ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত তিনি নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করেছেন। এক পর্যায়ে লতিফ সিদ্দিকী নিজেই ওই জমির মালিকানা দাবি করে আদালতে দায়ের মামলা করেন। মামলায় নি¤œ আদালতে তিনি ডিক্রি পান।

সরকারপক্ষ জেলা জজ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে লিভ টু আপিল করে। উচ্চ আদালত সরকারের পক্ষে রায় দেন। সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী পরে উচ্চ আদালতে সরকারের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। সুপ্রিম কোর্টও সরকারের পক্ষে রায় দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জাজের কাছে লিভ টু আপিল করেন। চেম্বার জাজ আপিলটি আমলে নিয়ে আগামি আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে শুনানীর তারিখ নির্ধারণ করেছেন।

মামলার রায় পেয়ে জেলা প্রশাসন এ বছরের ২৪ জানুয়ারি আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর দখলে থাকা জমিটি উদ্ধার করে। জেলা প্রশাসন জমিটিতে একটি পার্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। পার্কটি বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে শেখ রাসেলের নামে ‘শেখ রাসেল শিশুপার্ক’ করার ঘোষণা করা হয়। এ সময় শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত জমিটির উপর স্থানীয় কতিপয় নেতার নজর পড়ে। তারা যেনতেনভাবে ইজারা নিয়ে দখলের চেষ্টা চালায়। পরে জেলা প্রশাসন জমিটি টাঙ্গাইল পৌরসভাকে ইজারা দেয়। পৌরসভা একসনা বন্দোবস্ত নিয়ে সেখানে কাঁচাবাজার করার জন্য ওই জায়গায় ৬৭টি দোকান এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য উন্মুক্ত শেড নির্মাণকাজ শুরু করেছে। শেখ রাসেল শিশুপার্ক নির্মাণ না করে কাঁচাবাজার বসানোর নেপথ্যে আওয়ামীলীগের কতিপয় নেতা ক্রীড়নকের ভূমিকা পালন করছেন বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর জানান, শহরের বটতলা বাজারটি রাস্তার ওপরে বসে। ওই বাজার স্থানান্তরে স্থানীয়দের দাবি রয়েছে। জেলা প্রশাসন কর্তৃক উদ্ধার হওয়া জায়গাটি পৌরসভা বার্ষিক ভাড়ায় ইজারা নিয়েছে। জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে বটতলা কাঁচাবাজারটি ওই জায়গায় স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়ে সেখানে মানসম্মত ও পরিচ্ছন্ন কাঁচাবাজার স্থাপনের কাজ চলছে।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ডক্টর মো. আতাউল গনি জানান, জমিটি উদ্ধার করার পর সেখানে ‘শেখ রাসেল শিশুপার্ক’ স্থাপনের পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জমিটিতে পার্ক স্থাপন না করে অন্য কোন জনস্বার্থে ব্যবহারের পরামর্শ দেয়। এ ছাড়া অর্পিত ‘ক’ তফসিলভুক্ত সম্পত্তি সরকারি কোনো দপ্তরকে স্থায়ীভাবে দেওয়ার বিধান নেই। জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় উদ্ধারকৃত জায়গায় বটতলা বাজার স্থানান্তরের দাবি জানান কমিটির সদস্যরা। পরে অস্থায়ীভাবে শর্ত সাপেক্ষে পৌরসভাকে জমিটি বার্ষিক ভাড়ায় ইজারা দেওয়া হয়েছে।

(আরকেপি/এসপি/জুলাই ১১, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test