E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কালীগঞ্জের সুন্দরখালী স্লুইসগেটের ডালা ছাড়িয়ে গ্রামে পানি

তলিয়ে গেছে মাছের ঘের ও ঘরবাড়ি, চার দিনেও ব্যবস্থা নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড

২০২১ জুলাই ২৪ ১৪:০২:১৪
তলিয়ে গেছে মাছের ঘের ও ঘরবাড়ি, চার দিনেও ব্যবস্থা নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার ভূমিহীন জনপদ সুন্দরখালি স্লুইস গেটের ডালা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নদীর পানি ঢুকে  ঘরবাড়ি ও মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। একাকার হয়ে গেছে ৩০টির বেশি চিংড়ি ঘের। ৩২টি  বাড়ির আঙ্গিনায় পানি  থই থই করছে। কয়েকটি বাড়ির  ঘরে পানি ঢুকেছে। পূর্ণিমার জোয়ারে  শুক্রবার  হাবড়া নদীর পানিতে ওইসব ঘরবাড়ি ও মাছের ঘের তলিয়ে যাওয়ার পর শনিবার জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লোনা পানিতে আরো বহু স্থান প্লাবিত হয়েছে। 

স্থানীয় তারালি ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হোসেন ছোট জানান, কালীগঞ্জ উপজেলার বৈরাগীর চক ও চিংড়িখালি গ্রাম দুটি ভূমিহীন এলাকা নামে পরিচিতি পেয়েছে। সরকারি সাড়ে ৮০০ বিঘা খাস জমিতে ভূমিহীনদের বসিয়ে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে ভূমিহীন পল্লী। এ ভূমিহীন পল্লীর বাসিন্দারা ছোট ছোট চিংড়ি ঘের করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
তিনি জানান, উপজেলার তারালি ইউনিয়নের সুন্দরখালী স্ল্ইুজ গেটের (জলকপাট) ডালা দেড় বছর আগে নষ্ট হয়। বিষয়টি তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী ওবায়দুর রহমান মল্লিককে একাধিকবার বলেছেন। এমনকি উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটর সভাও বিষয়টি তুলে তিনি জরুরি ভিত্তিতে ডালা মেরামতের জন্য বলেন।

সর্বশেষ ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর আগে জরুরি যেসব স্লুইস গেট মেরামত করার তালিকা করা হয় তাতে সুন্দরখালী স্লুইস গেটের নাম ছিল। তারপরও মেরামত না করায় সম্পূর্ণ ডালাটি ছাড়িয়ে বৈরাগীরচর গ্রামে চারদিন ধরে পানি ঢুকছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। পানি উঠেছে বাড়ির আঙ্গিনা ও ঘরে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে তলিয়ে যাবে কয়েক হাজার চিংড়ি ও মাছের ঘের। শনিবার সকালে নতুন করে জোয়ারের পানি ঢোকায় নতুন নতুন এলাকায় পানি উঠেছে।

বৈরাগীর চক ভূমিহীন পল্লীর ফিরোজ হোসেন ও চিংড়িখালির শহীদুল ইসলাম বলেন, তারা সরকারের কাছ থেকে পাওয়া খাস জমিতে মাছের ঘের করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে হাবড়া নদীর সুন্দরখালী স্লুইসগেট নষ্ট । পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগ-১ এর বিভাগী প্রকৌশলী ওবয়াদুল হককে বলেও কোনো ফল হয়নি। তারপরও ছাড়িয়ে যাওয়া ডালাটি দড়ি দিয়ে বেধে রেখে কোনো রকমে পানি নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলের। গত তিনদিন আগে ডালাটি একেবারে ছাড়িয়ে যায়। ফলে পূর্ণিমার জোয়ারে হাবড়া নদীর পানিতে তাদেরসহ ৩৮টি ঘের তলিয়ে গেছে। তাদের বাড়ি আঙ্গিনায় দুই ফুট পানিতে তলিয়ে রয়েছে। রান্না ঘরে পানি ঢুকেছে। মাছের ঘের তলিয়ে যাওয়ায় কমপক্ষে দেড় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই করোনার মধ্যে তার সামনের দিনগুলোতে না খেয়ে মরতে হবে।

তিনি জানান, পানি আটকাতে না পারায় শুধু বৈরাগীর চক ও চিংড়িখালি নয়, শনিবার পূর্ণিমায় বরেয়ার নীচের অংশ, তালতলা, জোহরাবাদ, হালিরাবাদ, জলমারি, চিংড়িখালি, ভূঁইয়ার চকের কিছু কিছু মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। অনেকের ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে।

চিংড়িখালি গ্রামের আমজাদ সরদার ও বৈরাগীর চকের আব্দুল গফফার জানান, মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তারা তাদের জমিসহ অন্যের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে ৬ বিঘা করে ১২ বিঘা জমিতে মাছের ঘের করেছিলেন। ঘেরে মাছ ভালো হয়েছিল। শুক্রবার সকালে ঘেরের সব মাছ ভেসে গেছে। তার এতে কমপক্ষে তিন লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। শনিবার আবারো পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনটি সমিতি থেকে নেওয়া কিস্তির টাকা কিভাবে পরিশোধ করবেন তা তারা বুঝতে পারছেন না।

এ অবস্থা শুধু ফিরোজ, শহীদুল এর নয়, রেজাউল ইসলাম, আব্দুল কাদের, রবিউল ইসলাম বুল্লাহ, শওকত হোসেন, জামের আলী, লিয়াকত, মোহাম্মদ আলীসহ অনেকের। তারা জরুরি ভিতিতে নতুন জলকপাট লাগানোর দাবি জানান।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগ-১ এর বিভাগীয় প্রকৌশলী ওবয়াদুল হকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, শুক্রবার বিকেল পাঁচটার দিকে শুনেছেন। তারালি ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক, ভূহিহীন নেতা শহীদুল ইসলাম আপনাকে একাধিকবার জানিয়েছেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আসলে ওই দায়িত্ব তার নয়। তারপরও তিনি লোক পাঠাচ্ছেন বিকল্প কি করা যায়।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, বিষয়টি তাকে কেউ অবহিত করেনি। দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেবেন।

(আরকে/এসপি/জুলাই ২৪, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test