E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মুকসুদপুর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে ভুয়া বিক্রেতা বানিয়ে কোটি টাকার জমির দলিল সম্পাদনের অভিযোগ

২০২১ জুলাই ২৬ ১৮:১৭:৪০
মুকসুদপুর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে ভুয়া বিক্রেতা বানিয়ে কোটি টাকার জমির দলিল সম্পাদনের অভিযোগ

ফরিদপুর প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জ জেলার মোকসেদপুর রেজিষ্ট্রি অফিসে জাল দলিল জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মোকসেদপুর সাব রেজিষ্টার অফিসে মোটা অংকের টাকা লেনদেনের মাধ্যমে জাল দলিল করে বিপাকে ফেলছেন সাধারণ মানুষকে। এমনি অভিযোগ নিয়ে মোকসেদপুর গেরাখোলা বাজারে সাধারন মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে বাকবিতন্ডা। জাল কারবারিদের ভয়ে আতঙ্কে রয়েছে সাধারন মানুষ ।

সরেজমিনে গিয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি তারিখে রেজিষ্ট্রি করা জাল দলিলের একটি কপি হাতে পাওয়া যায়, সেখানে উল্লেখ রয়েছে দলিল গ্রহীতা মাহামুদুল হাসান,পিতা মৃত: রকিবউদ্দিন আহম্মেদ, জাতীয় পরিচয় পত্র নং ৭৩৫১২০২৫৭২, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা সালিনা বক্স, উপজেলা : মুকসুদপুর, জেলা: গোপালগঞ্জ। দলিল দাতা হিসেবে উল্লেখ করা আছে আহাদুল আমিন লস্কর,পিতা মৃত: ডাঃ আবুল খায়ের, জাতীয় পরিচয় পত্র নং ৪৭১৬৯১৯৭৭৫২৩৫।স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা: সালিনা বক্স, উপজেলা : মুকসুদপুর, জেলা: গোপালগঞ্জ।

জমির বিক্রয়ের ইতিবৃত্তান্তে রয়েছে এস এ ১০নং, বি আর এস ১৩৩ নং খতিয়ানে ,সাবেক দাগ নং ১৫১৬, সাবেক বি আর এস দাগ নং২৪৬৭,জমির ধরন নাল, জমির পরিমান ১-১১শতক। জমিটির সনাক্তকারী হিসেবে উল্লেখ আছে মাসুদ লস্কর, পিতা মৃত আহাদ লস্কর,স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা সালিনা বক্স, উপজেল : মুকসুদপুর, জেলা গোপালগঞ্জ। স্বাক্ষী হিসেবে উল্লেখ আছে যথাক্রমে লুৎফর খা, পিতা : মৃত আলেপ খা, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা: সালিনা বক্স, উপজেলা: মুকসুদপুর, জেলা গোপালগঞ্জ ও মোঃ শওকত শেখ , পিতা: তারামিয়া শেখ, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা দাশের হাট ,সালিনা বক্স, উপজেলা মুকসুদপুর, জেলা গোপালগঞ্জ। এই দলিলের মুল মালিক আহাদুল আমিন লস্কর দেশের বাইরে বলে সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়। তাহলে জমির মালিক আহাদুল আমিন লস্কর সেজে কে জমিটি রেজিষ্ট্রি করে দিলো ?

এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ শফিকুল ইসলাম, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা সালিনা বক্স, উপজেলা মুকসুদপুর, জেলা গোপালগঞ্জ সাংবাদিকদের জানান, জমির আসল মালিক বাংলাদেশে নাই দীর্ঘদিন।কিন্তু তাহার অনুপস্থিতিতে নকল মালিক সেজে এই জমি রেজিষ্ট্রি করেছে। যা সকল কাগজপত্র তদন্ত করলেই সত্যতা মিলবে। তিনি আরো জানান এরকম আরো অনেক ব্যাক্তির নামে থাকা জমি জাল দলিলের মাধ্যমে একটি চক্র হাতিয়ে নিয়েছে।

জমিটির সনাক্তকারী মাসুদ লস্কর সাংবাদিকদের জানান,আমি অনেকের জমির সনাক্তকারী হই। এই দলিলে আমি জেনে বুঝেই সনাক্তকারী হয়েছি।

দলিলের স্বাক্ষী লুৎফর খা সাংবাদিকদের জানান, আমি জমির প্রকৃত মালিক আহাদুল লস্করকে জমি রেজিষ্টি করার সময় সামনে হাজির হতে দেখেছি তাই তার জমির সাক্ষী হয়েছি।

দলিলের স্বাক্ষী মোঃ শওকত শেখ সাংবাদিকদের জানান, জমিটির দলিলে প্রকৃত মালিকের মাধ্যমে রেজিষ্ট্রি হয়েছে তাই আমি সাক্ষী হয়েছি।

জমির গ্রহীতা মাহামুদুল হাসান সাংবাদিকদের জানান, আমি জমি দাতা আহাদুল আমিন লস্করের কাছ থেকে ১৬,২৪,০০০ ( ষোল লক্ষ চব্বিশ হাজার টাকা) লেনদেন করে জমিটি রেজিষ্ট্রি করেছি।

এ বিষয়ে মোকসেদপুর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের সাব রেজিষ্টার মোঃ কামরুল হাসানের সাথে কথা বললে তিনি সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টি নিয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। লিখিত কোনো অভিযোগ পেলে আমি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবো।

জাল দলিলের বিষয়ে মুকসুদপুর এস আর অফিসের দলিল প্রস্তুতকারী কবির হোসেন ( সনদ নং ০৩/২০১৬) সাথে কথা বললে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমি কাগজপত্র যাচাইবাছাই করে একটি দলিল প্রস্তুত করি। সে ক্ষেত্রে এই দলিল জাল নয়। কাগজপত্র সঠিক রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় অনেকেই সাংবাদিকদের জানান , মুকসুদপুর এলাকায় এভাবে একটি চক্র জমির দলিল জাল করে সাধারণ মানুষের জমি বিক্রি করে দিচ্ছে।

এ ব্যাপারে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস দেখায় না । জাল দলিল কারবাওে সম্পৃক্ত রয়েছে সাব রেজিষ্টার অফিসের বেশ কয়েকজন কর্মচারী। যাদের সহায়তা নিয়ে এই দালাল চক্র একের পর এক সাধারন মানুষকে ভিটেহীন করে দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী স্থানীয়বাসীদের।

(ডিসি/এসপি/জুলাই ২৬, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test