E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পানিতে থৈ থৈ করছে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল

২০২১ জুলাই ৩০ ১৮:১৯:০১
পানিতে থৈ থৈ করছে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : অতিবৃষ্টির কারণে ভেসে গেছে সাতক্ষীরার আমন ধানের বীজতলা, রোপা আমন, পুকুর, মাছের ঘের ও সবজি ক্ষেত। পানি থৈ থৈ করছে সাত উপজেলার ৭৮টি ইউনিয়ন আর দুটি পৌরসভার নিম্নাঞ্চল । মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার তিনদিনের বৃষ্টিতে ভেসে গেছে ২০ হাজারের মত ঘের। এতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন চিংড়ি চাষিরা। ইয়াসের ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ১৬ কোটি টাকার ক্ষতি হওয়ার পরে অতিবৃষ্টিতে শুধুমাত্র মাছের ক্ষতি হয়েছে ৫৩ কোটি টাকার।  তবে শুক্রবার সকালে রৌদ্র দেখা দেওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তির নিঃশাস ফেলতে দেখা গেছে।

সাতক্ষীরা পৌরসভার ইটাগাছা এলাকার বাসিন্দা আলী নূর খান বাবুল বলেন, সাতক্ষীরা পৌরসভার অধিকাংশ নিচু এলাকা এখনও পানির নিচে। যত্রতত্র খালে নেটপটা দেওয়া ও অপরিকিল্পিত চিংড়ি ঘেরের ফলে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ফলেসামান্য বৃষ্টিতে তাদের এলাকা তলিয়ে যায়। আর বৃহস্পতিবারের যে ব্যাপক বর্ষা হয়েছে তাতে চারিদিকে পানি থৈ থৈ করছে। চারিদিকে আটকানো। পানি বের হওয়ার সুযোগ নেই। মানুষকে এই ডুবন্ত অবস্থা থেকে উদ্ধারের কোন ব্যবস্থা নেই।

সাতক্ষীরা নাগরিক মঞ্চের এক সময়কার আহবায়ক অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু বলেন, পৌরসভায় পানি নিষ্কাশনের যথাযথ ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার কারণে মানুষ বছরের পর বছর ধরে জলাবদ্ধতায় ভুগছে। গত তিন দিনের টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে পৌরসভার ইটাগাছা, কামাননগর, রসুলপুর, মেহেদিবাগ, রথখোলার বিল, মধুমোল্লারডাঙ্গী, বকচরা, সরদারপাড়া, পলাশপোল, পুরাতন সাতক্ষীরা, রাজারবাগান, বদ্দিপুর কলোনি, ঘুড্ডিরডাঙি ও কাটিয়া মাঠপাড়া, ডেয়ের বিলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা।

এদিকে, সদর উপজেলার ধুলিহর, ফিংড়ি, ব্রহ্মরাজপুর, লাবসা, বল্লী, ঝাউডাঙা ইউনিয়নের বিলগুলোতে সদ্য রোপা আমন ও বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পানি অপসারনের কোন পথ না থাকায় বৃষ্টির পানি বাড়িঘরে উঠতে শুরু করেছে। সাতক্ষীরা শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রাণসায়ের খালও পানি টানতে পারছে না। প্লাবিত এলাকার কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে।

এদিকে অতিবৃষ্টির ফলে গদাইবিল, ছাগলার বিল, শ্যাল্যের বিল, বিনেরপোতার বিল, রাজনগরের বিল, কচুয়ার বিল, চেলারবিল, পালিচাঁদ বিল, বুড়ামারা বিল, হাজিখালি বিল, আমোদখালি বিল, বল্লীর বিল, মাছখোলার বিলসহ কমপক্ষে ২০টি বিল ডুবে গেছে। এসব বিলের মাছের ঘের ভেসে পানিতে একার হয়ে গেছে। বেতনা নদী তীরবর্তী এই বিলগুলির পানি নদীতে নিষ্কাশিত হতে পারছে না। এই পানি পৌরসভার ভিতরে ঢুকছে। অতিবৃষ্টিতে গ্রামাঞ্চলের সব পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। বেরিয়ে গেছে শত কোটি টাকার মাছ। সবজি ক্ষেতগুলি ভাসছে পানিতে। মানুষের যাতায়াতও ভোগান্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে, বৃষ্টির পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে উপকুলীয় উপজেলা শ্যামনগর, কালীগঞ্জ ও আশাশুনিসহ জেলার সাতটি উপজেলা। সেখানে প্রধান রাস্তার ওপর দিয়েও পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এসব এলাকার মাছের ঘের তলিয়ে গেছে।
আশাশুনির শ্রীউলা এলাকার ঘের ব্যবসায়ী আলাউল ইসলাম জানান, তার ৫০ বিঘার একটি ঘেরে আমপানে ২০ লাখ, ইয়াসে ৫ লাখ টাকা ও গত তিন দিনের অতি বর্ষণে তার ঘের ভেসে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। ঘের ব্যবসা আগামীতে বাদ দেবেন বলে জানিয়েছেন আলাউল ইসলাম।

শ্যামনগরের পদ্মপুকুর এলাকার ঘের ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান জানান, তার ১০০ বিঘার একটি ঘের রয়েছে। বৃহষ্পতিবার সেই ঘের ভেসে গেছে। ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকা। ব্যাংক সুদতো মাপ হয় না। বছরের কয়েকবার এমন ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান,জেলার আশাশুনি,শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ উপজেলার ১৯ হাজার ৪৫৯ টি মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ঘেরের আয়তন ১২ হাজার ৬৫ হেক্টর । মাছের ক্ষতির পরিমাণ ৫৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

এদিকে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আ ন ম আবু জার গিফারী বলেন, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষই পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা ২০ টন চাল দেওয়া হয়েছে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফতেমা তুজ জোহরা জানান, বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে তিনি জেনেছেন, পানিতে তেমন কোন ক্ষতি হয়নি।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ১৪৩ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গত ৫ বছরের মধ্যে এই অঞ্চলে এটাই সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড বলেও জানান তিনি।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরেরর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নূরুল ইসলাম বলেন, ভারি বর্ষণে জেলার নিম্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির রোপা আমন বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। ৮৬০ হেক্টর রোপা আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ৫০০ হেক্টর জমির সবজির ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি আর না হলে ক্ষতির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমবে বলে জানান তিনি।

সাতক্ষীরা জেলা ত্রান ও দুর্যোগ কর্মকর্তা আবু বাসেত জানান, কালীগঞ্জে ঝড়ে ১৯টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্য উপজেলায় ক্ষতির পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, ঘর-বাড়িসহ অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের কাজ চলছেসংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রাপ্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ শুক্রবারের মধ্যে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।। তখন কোথায় কেমন বরাদ্দ করতে হবে তা নিরুপণ করা হবে।

তিনি আরও জানান, চলমান অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে জেলা ব্যাপী ঘেরের সকল অবৈধ নেট-পাটা স্থাপনকারীকে স্ব-উদ্যোগে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে নেট-পাটা অপসারণ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় নেট-পাটা স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(আরকে/এসপি/জুলাই ৩০, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test