E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দেলদুয়ারে মাদ্রাসার জমির বিরোধে সমাজ বিভক্ত

২০২১ জুলাই ৩১ ১৮:৩১:৩৫
দেলদুয়ারে মাদ্রাসার জমির বিরোধে সমাজ বিভক্ত

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি ইউনিয়নে একটি মাদ্রাসার জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে তাতশ্রী জামে মসজিদ ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। বিভক্ত ওই সমাজে দুই পক্ষের বিরোধ প্রকাশ্যে এসে দাঙ্গা-হাঙ্গামার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।  

জানা যায়, বিগত ১৯৯৬ সালের ১৬ জুন তাতশ্রী মৌজার ১৮১ ডিপি খতিয়ানের (সাবেক খতিয়ান ১৩৯) ৪৬৮ হাল দাগের (সাবেক দাগ ২৯৭) ২০ শতাংশ ভূমির মালিক খোরশেদ আলীর কাছ থেকে স্থানীয় মো. নায়েব আলী, আব্দুল কাইয়ুম, মো. মনির উদ্দিন, মো. মাহফুজুর রহমান ও মো. সুলতান আহাম্মেদ সাব কবলা দলিলমূলে কিনে নেন। পরে ওইদিনই তারা ক্রয়কৃত ওই ২০ শতাংশ ভূমি তাতশ্রী দুখী হাজী এবতেদায়ী মাদ্রাসার নামে ওয়াক্ফ দলিলমূলে দান করেন। একই সাথে ভূমির মূল মালিক খোরশেদ আলী তার ৪ শতাংশ ভূমিও একই দলিলের মাধ্যমে মাদ্রাসার নামে ওয়াক্ফ করে দেন। ওই ভূমির কিয়দংশে মাদ্রাসা রেখে উত্তর-পশ্চিমাংশে ২০০৫ সালে মাদ্রাসার আয় বাড়ানোর জন্য পাঁচ কক্ষ বিশিষ্ট একতলা মার্কেট নির্মাণ করা হয়।

মার্কেটের কক্ষগুলোর মধ্যে স্থানীয় আব্দুল কাইয়ুম দুইটি ও মিজানুর রহমান একটি দোকান ভাড়া নেন। আব্দুল কাইয়ুম তার নেওয়া দোকান দুইটির জামানত হিসেবে মাদ্রাসা কমিটিকে দুই লাখ টাকা দেন। আব্দুল কাইয়ুম তার নেওয়া দোকান দুইটি পরিচালনার জন্য স্থানীয় ওসমান গনির কাছে ভাড়া দেন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দোকান তিনটি যথারীতি ভাড়া পরিশোধ করে পরিচালনা করা হয়। পরে কৌশলে দোকানের ভাড়া দেওয়া বন্ধ করে দিয়ে ওসমান গনি ও তার দুই ভাই বাদী হয়ে দোকান ঘরের মালিকানা দাবি করে টাঙ্গাইলের সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলার নোটিশ পাওয়ার পর মাদ্রাসা ও মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে একাধিকবার বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করা হয়।

সর্বশেষ গত ৩ এপ্রিল(শুক্রবার) বাদ জুমআ তাতশ্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে লাউহাটি ইউপি চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম ফিরোজের সভাপতিত্বে এক গ্রাম সালিশের আয়োজন করা হয়। সালিশে ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম, ওসমান গনি, ইয়াছিন আলী, শাহ আলম, মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি মো. মনির উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান খান, স্থানীয় আব্দুল হালিম, মসজিদের ইমাম মওলানা ফিরোজ কবীর সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও গ্রামবাসী উপস্থিত ছিলেন। সালিশে মাদ্রাসার দোকান তিনটি ওসমান গনি ও তার ভগ্নিপতি মিজানুর রহমান মাদ্রাসা কমিটির কাছে তুলে দিবেন বলে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। সালিশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওসমান গনি তার দখলে থাকা দুইটি দোকান প্রকৃত মালিক আব্দুল কাইয়ুমের কাছে হস্তান্তর করলেও মিজানুর রহমানের দখলে থাকা দোকানটি তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

তাতশ্রী দুখী হাজী এবতেদায়ী মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি মো. মনির উদ্দিন, স্থানীয় সাহাদাৎ হোসেন খান(৭২), তোফায়েল আহাম্মেদ(৬৫), মহর খান(৬৫), নুরনবী আলামিন(৫৫), নাজিম উদ্দিন(৪৫), আব্দুল হালিম(৪৫), মেহেদী হাসান(১৮), সাহাবুদ্দিন(২২), আবুল হাসেম মিয়া(৬৫), সেকান্দার আলী(৪৫) সহ গ্রামের অনেকেই জানান, তাতশ্রী জামে মসজিদের আওতাভুক্ত সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের দেওয়া দান-অনুদানে দুখী হাজী এবতেদায়ী মাদ্রাসার মার্কেটটি নির্মাণ করা হয়েছে।

নির্মাণকালীন বা অন্য কোন সময় ওসমান গনি বা অন্য কেউ মাদ্রাসায় তাদের ভূমি বা সম্পত্তি আছে তা দাবি করেনি। মার্কেট নিমাণ হওয়ার পরও দাবি করেনি। ভাড়া বাকি থাকার পর হঠাৎ করে দোকানের মালিকানা দাবি করাটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তাছাড়া দুখী হাজী এবতেদায়ী মাদ্রাসার নামে ২৪ শতাংশ ভূমির বিএস রেকর্ড রয়েছে। ভূমির খাজনা-খারিজ ও ডিসিআর মাদ্রাসর সাধারণ সম্পাদকের নামে রয়েছে।

মামলার অন্যতম বাদী ইয়াছিন আলী জানান, পৈত্রিকসূত্রে তারা মাত্রাসার ২৪ শতাংশের মধ্যে ১২ শতাংশের মালিক। তার চাচা মরহুম খোরশেদ আলী জীবদ্দশায় তার বাবা আহাদ আলীর অংশ সহ মাদ্রাসায় ওয়াক্ফ করে গেছেন। তাই তারা ভূমির স্বত্ত্ব দাবি করে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।

লাউহাটি ইউপি চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম ফিরোজ জানান, তাতশ্রী দুখী হাজী মাদ্রাসার ভূমি যথারীতি ওয়াক্ফকৃত। গ্রাম্য সালিশে মাদ্রাসার মার্কেটের দোকান মাদ্রাসা কমিটির কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে মাদ্রাসাটি ‘দুখী হাজী’র নামে প্রতিষ্ঠা করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি অসুস্থ থাকায় বিষয়টি সমাধান হয়নি, দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে বিষয়টির মিমাংসা করা হবে।

(আরকেপি/এসপি/জুলাই ৩১, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test