E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

 

বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনার নমুনা সংগ্রহ করছেন ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম

২০২১ আগস্ট ০২ ১৭:০২:৩৭
বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনার নমুনা সংগ্রহ করছেন ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম

অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হরিশংকরপুর ইউনিয়নের ২২টি গ্রামে আনুমানিক ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে জ্বর, সর্দি ও কাশির প্রকোপ। এতে ইউনিয়নের বিভিন্ন হাটবাজারে গড়ে ওঠা ফার্মেসির দোকানগুলোতে প্যারাসিটামল, নাপা ও অ্যান্টিবায়োটিকজাতীয় ওষুধের চাহিদাও বেড়েছে।

এছাড়া জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি অনেকে গোপন রেখে পারিবারিকভাবে নিয়মিত ওষুধ সেবন করছেন। কখনো ভয়ে আবার কখনো সুযোগের অভাবে তারা করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। এতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে নিজ ইউনিয়নকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজেই নমুনা সংগ্রহ করছেন ঝিনাইদহের হরিশংকরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাসুম। তিনি স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগিতায় তিনদিন প্রশিক্ষণ নিয়ে ১৫ জুলাই থেকে নমুনা সংগ্রহে নেমে পড়েন।

প্রথম দিন বাড়িতে গিয়ে সাতজনের আর পরিষদ ভবনে আসা পাঁচজনের নমুনা সংগ্রহ করেন। এ পর্যন্ত ১৮ দিনে ছয় দফায় তিনি সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ১৭১ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে একই পরিবারের চারজনসহ ৪৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

হরিশংকরপুর ইউনিয়নের পানামী গ্রামের ইউপি সদস্য রওশন আলী জানান, তার গ্রামে ২ হাজার ৪০০ মানুষের বসবাস। তার মধ্যে ১ হাজারের অধিক মানুষের ঠান্ডা, কাশি, জ্বর হয়েছে। করোনা পরীক্ষা করিয়েছেন সর্বোচ্চ ৫০ জন। এখন চেয়ারম্যানের এ উদ্যোগে অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

গোবিন্দপুর গ্রামের আয়েশা বেগম জানান, ১২ দিন জ্বর আর ঠান্ডা নিয়ে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ অবস্থায় আনুমানিক ২২ কিলোমিটার দূরে হাসপাতালে যাওয়া খুবই কষ্টকর। তাই করোনা পরীক্ষা করাননি। চেয়ারম্যান বাড়িতে এসে পরীক্ষা করছেন এতে খুশি।

রাজধরপুর গ্রামের মোদাচ্ছের হোসেন জানান, তার গ্রামে ১ হাজার ৬০০ মানুষ বসবাস করেন। যার মধ্যে আনুমানিক ৪০০ মানুষের শরীরে করোনা উপসর্গ দেখা গিয়েছিল, কিন্তু পরীক্ষা হয়েছে সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৪০ জনের। এখন চেয়ারম্যানের এই উদ্যোগে অনেকে পরীক্ষা করছেন।

চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাসুম জানান, সদর উপজেলার হরিশংকরপুর ইউনিয়নে ২২টি গ্রামে আনুমানিক ৩০ হাজার মানুষ বসবাস করেন। যারা করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছেন। ঠান্ডা, কাশি আর জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এই সময়ে তার ইউনিয়নে বেশ কয়েকজনের শরীরে করোনা পজিটিভ এসেছে। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে একজন।

তিনি আরও জানান, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে দেখেছেন করোনার উপসর্গ নিয়ে অসংখ্য মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকে ঠান্ডা-জ্বরের ওষুধ খেয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তারা করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। এতে সংক্রমণ গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় তিনি স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা নেয়া এখন সম্ভব নয়। তখন নিজেই বাড়ি বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে একটি আবেদন করেন। তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হারুন-অর রশীদ প্রশিক্ষণের অনুমতি দেন। অনুমতি পেয়ে হাসপাতালে প্রশিক্ষণ শুরু করেন। তার সঙ্গে নেন ইউনিয়নের ডিজিটালসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা শাহিন কবির ও আরেক কর্মী আরিফুর রহমান সিকদারকে। তারা ১০, ১১ ও ১২ জুলাই প্রশিক্ষণ নেন, ১৩ ও ১৪ জুলাই অন্যের সহযোগিতা ছাড়াই নমুনা সংগ্রহ করেন। এরপর স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে অনুমতি নিয়ে ১৫ জুলাই বৃহস্পতিবার নিজ এলাকায় নমুনা সংগ্রহ শুরু করেন। দায়বদ্ধতা থেকে নয়, দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধ থেকে এ কাজ শুরু করেছেন।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. মো. শামিম কবির বলেন, চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাসুম একটা ভালো উদ্যোগ নিয়েছেন। এ উদ্যোগের কথা আমাকে জানালে আমি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করি। এছাড়া নমুনা সংগ্রহের জন্য কিছু সরঞ্জাম দিয়ে সহযোগিতাও করেছি। আশা করছি তার এ উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে। ইতিমধ্যে তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সচিব হেলাল উদ্দিন সাক্ষরিত প্রশংসা পত্রও পেয়েছেন।

(একে/এসপি/আগস্ট ০২, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test