E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কুলিয়ারচরের ভাটিপাড়া রাস্তায় লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া, জনদুর্ভোগ চরমে

২০২১ আগস্ট ০৭ ১৫:৪৭:২২
কুলিয়ারচরের ভাটিপাড়া রাস্তায় লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া, জনদুর্ভোগ চরমে

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার গোবরিয়া আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর ভাটিপাড়া গ্রামের অবহেলিত মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তায় স্বাধীনতার ৫০ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। কাদাময় হয়ে বেহাল অবস্থার কারণে এ রাস্তা দিয়ে চলাচলে জনগণের ভোগান্তি ক্রমেই বেড়ে চলছে। বিভিন্ন সময়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এ রাস্তার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা ছিল গুড়ে বালি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গোবরিয়া আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষ্মীপুর ভাটিপাড়া ইছু বাড়ির পাকা রাস্তা হতে টুনপাড়া খোকন মাস্টারের বাড়ি পর্যন্ত (রাস্তা কোড নম্বর-৩৪৮৫৪৫০০৫) সরকারি রেকর্ডভূক্ত ১ কিলোমিটার রাস্তাটি বহুদিনের পুরানো এবং কাঁচা। গ্রামের বিশাল জনগোষ্ঠির নিত্যদিনের পারিবারিক, সামাজিক, ব্যবসায়িক ও শিক্ষার্থীদের আসা যাওয়ার জন্য মেঠো পথের সঙ্গী আজও। বর্ষার মৌসুমে সামান্য বৃষ্টি হলেই হাটু পর্যন্ত কাদার সৃষ্টি হয়। এছাড়াও কাঁচা রাস্তার বিভিন্ন অংশে ভাঙ্গন ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ রাস্তা দিয়ে জনসাধারণ ও যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে সদাই।

লক্ষ্মীপুর ভাটিপাড়া গ্রামের ফাহাদুল (২২), ফারুক মিয়া (৩০), আমির হোসেন (৩০), বোরহান উদ্দিন (৩৫) ও রফিকুল ইসলাম (৪৫) জানান, ১ কিলোমিটার রাস্তা কাদাযুক্ত ও ভাঙ্গনের কারণে এ অঞ্চলের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে বিক্রি করতে সমস্যা হচ্ছে। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। কোন মুমূর্ষু রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী বেলাবো উপজেলার মানুষ এ রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করে থাকে। সামান্য বৃষ্টি হলেই তাদের সাথেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

এ রাস্তার পার্শ্ববর্তী এলাকার জনগণ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি আলহাজ্ব জিল্লুর রহমান ও তাঁর পুত্র বিসিবি সভাপতি আলহাজ্ব নাজমুল হাসান পাপনকে সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোট দিয়ে লক্ষ্মীপুর ভাটিপাড়া কেন্দ্র থেকে বিজয়ী করে আসছেন। স্থানীয় উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে বিপুল ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন। নির্বাচনের আগে ও পরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা রাস্তার সংস্কার, মেরামত ও পাকাকরণের কথা দিলেও তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি।

স্থানীয় গোবরিয়া আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে এই রাস্তায় একাধিক বার বালু ফেলা হয়। এছাড়াও স্থানীয় যুবক ফাহাদুল (২২), সৌদি প্রবাসী মো. ইকবাল হোসেন (৩৫), ফারুক (৩২), জাকির (৩২), সুলতান মিয়া (৪০) ও মোখলেস (৪০)সহ পশ্চিম আব্দুল্লাহপুর গ্রামের শরীফ (৩৫) নামে ৭ যুবক তাদের নিজস্ব অর্থায়নে ওই রাস্তায় একাধিকবার বালু, মাটি, ইট ও কংক্রিট ফেলে জন সাধারণের চলাচলে কিছুটা উপযোগী করে গেলেও নদীর পাশে রাস্তাটি হওয়ায় বর্ষার মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে রাস্তাটি কাদায় কদাকার হয়ে জনদুর্ভোগ চরম পর্যায়ে চলে যায়। অবহেলিত গ্রামীণ ১ কিলোমিটার এ কাঁচা রাস্তাটি সংস্করণ ও পাকাকরণের দাবি জানিয়ে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার লিখিত আবেদন করেও কোন প্রকার ফল পায়নি বলে জানান স্থানীয়রা।

হ্যাঁ আমরা খুব কষ্টে আছি, আমাদের ভোগান্তি ও কষ্ট বুঝার মতো মানুষ নেই। একথা বলে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে ফাহাদুল (২২) নামে স্থানীয় যুবক তার মনের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে, ১৯৯৬ সাল থেকে এই পর্যন্ত বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয় লাভ করা এলাকা লক্ষ্মীপুর ভাটিপাড়া। এ এলাকায় আওয়ামী লীগের কর্মী পরিচয় দিতে এখন এক প্রকার লজ্জা ও ঘৃণা লাগে। কারণ এ রাস্তা নিয়ে ভোগান্তির চরম শীর্ষে আমরা। জনপ্রতিনিধিসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অনেক আকুতি মিনতি ও লিখিত আবেদন করার পরও রাস্তাটি সংস্করণ কিংবা পাকাকরণে এগিয়ে আসেনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি কিংবা সরকারি কর্মকর্তারা। কষ্ট বলার মতো বড় কোন পদদারী কোন নেতাও নাই এ এলাকায়। যারা সম্মান ও উচ্চ পর্যায়ে আছে তারা শহরে থাকার কারণে তাদের তেমন মাথা ব্যথাও নেই। আমরা তেমন সিনিয়রওনা যে, উচ্চ পর্যায়ে বড় গলায় চাওয়া পাওয়ার দাবি নিয়ে দাঁড়াবো। এ প্রতিনিধিকে উদ্দেশ্য করে সে আরো বলে, আপনার লেখনির মাধ্যমে যদি কাজ না হয় তাহলে এলাকার ছেলেদের নিয়ে এবার সরাসরি এমপির কাছে যাবো। দরকার হলে এমপির পায়ে ধরে রাস্তা ভিক্ষা চাইবো। আপাদত আমরা এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে এ রাস্তায় ইট, কনা ও বালি দিয়ে কিছুটা মেরামতের ব্যবস্থা করেছি। সবসময়তো আর আমাদের দ্বারা এ রাস্তা সংস্কার করা সম্ভব হবেনা। সে এলাকাবাসীর পক্ষে রাস্তাটি সংস্কারসহ পাকাকরণের জোর দাবী জানান।

স্থানীয় গোবরিয়া আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্বাস উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জনগণের চলাচলের জন্য রাস্তাটি সংস্কার ও পাকাকরণ একান্ত প্রয়োজন। এ রাস্তা সংস্করণ ও পাকাকরণের জন্য আমি নিজে গত ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর স্থানীয় এমপি আলহাজ্ব নাজমুল হাসান পাপন সাহেবের ডিও লেটার নিয়ে ১৯ নভেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ও প্রধান প্রকৌশলী কার্যালয় আগারগাঁও-এ একটি আবেদন জমা দিয়ে এসেছি। যাহার রিসিভ কপি আমার নিকট রয়েছে। অচিরেই রাস্তাটি সংস্কার ও পাকা করণের অনুমোদন হবে। অনুমোদন পেলেই রাস্তার কাজ শুরু করা হবে।

(এস/এসপি/আগস্ট ০৭, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test