E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

মামলা কারায় মূল আসামির হুমকি 

মাদারীপুরে শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে জোরপূর্বক বিয়ে, গ্রেফতার ২ 

২০২১ আগস্ট ১৪ ১৮:৩২:২৬
মাদারীপুরে শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে জোরপূর্বক বিয়ে, গ্রেফতার ২ 

ওহিদুজ্জামান কাজল, মাদারীপুর : দীর্ঘদিন ধরে উত্যাক্ত কারার পরে কলেজ পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক বিয়ে এক প্রতারক। পরে পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে বাধ্য হয়ে কথিত স্বামীকে একতরফা তালাক দেয় ওই শিক্ষার্থী। এরপর আবার কথিত স্বামী তাকে অপহরনের করে। থানায় মামলা কারায় ভূক্তভোগী পরিবারকে দিনের পর দিন হুমকি। মামলার প্রধান আসামী বাবু হাওলাদার (২২) পালাতক রয়েছে। বখাটে বাবু সদর উপজেলা কালিকাপুর ইউনিয়নের হোসনাবাদ এলাকার ফারুক হাওলাদারের ছেলে। বাবু অপহরন মামলার প্রধান পালাতক আসামী হলেও ভূক্তভোগী পরিবারকে এখানো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়েই যাচ্ছে। পুলিশ মামলার ২ আসামীকে গ্রেফতার করেছে।

মামলার বিবরণ ও পারিবারিক স্যত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে উত্যাক্ত করে আসছিল বাবু হাওলাদার (২০) নামে এক বখাটে। একাধিকবার মেয়ের পরিবরের কাছে বিয়ের প্রস্তাবও দেন সে। এলাকায় মাদকসহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত থাকায় বিয়ের প্রস্তাবে সাড়া দেয়ননি মেয়ের পরিবার। তাতেই ক্ষিপ্ত হয় বাবু এবং যেকোনো মূল্যে তাকে বিয়ে কারার প্রতিজ্ঞা করে। ২০২০ সালের (২ এপ্রিল) সন্ধ্যার দিকে সে তরুনী বাড়ির পাশে তার বান্ধবীর বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে ফিরছিল।

ওই সময় বাবু পূর্বপরিকল্পিত ভাবে আরো দুজন সহযোগী নিয়ে একটি মোটরসাইকেলে জোরপূর্বক ওই তরুনীকে তুলে নিয়ে যায়। তাৎক্ষনিক ভাবে শিক্ষার্থীর পরিবার অনেক খোঁজাখুজির পরে তার কোন সন্ধান না পেলেও লোকলজ্জার ভয়ে বিষয়টি কাউকে বলতে পারেনি এবং বাবুর এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় থানায় তাদের কিরুদ্ধে অভিযোগ করতে সাহস পায়নি। ঘটনার দুই মাস পরে ওই শিক্ষার্থী তার পরিবারের কাছে ফিরে এসে সম্পূর্ন বিষয়টি খুলে বলেন, বাবু হাওলাদার তাকে জোর পূর্বক অপহরণ করে শিবচর পাঁচ্চর এলাকায় একটি বাসায় আটকে রাখে এবং পরে সুযোগ পেয়ে সেখান থেকে পালিয়ে আসে।

ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০২০ সালের ৯ এপ্রিল মাদারপুর শিবচর উপজেলা বাঁশকান্দি ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান নামের এক কাজির মাধ্যমে মেয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া সত্তেও জোর পূর্বক বিবাহ করতে বাধ্য করে বাবু। তখন বাবু ওই মেয়ের নামে নকল একটি জন্মনিবন্ধন তৈরি করে কাজি আব্দুল মান্নানকে দেয়। প্রকৃত জন্ম তারিখ ২০০৩ সালের ৩ জানুয়ারি গোপন রেখে ২০০০ সালের ৩ জানুয়ারি উ্েল্লখ করে একটি ভূয়া জন্ম নিবন্ধন করা হয়। অথচ মেয়ের মূল জন্মনিবন্ধনে বয়স এবং মেয়ের স্কুল সার্টিফিকেট এবং এস এস সি সার্টিফিকেট সনদে একই জন্মতারিখ রয়েছে। তখন ওই শিক্ষার্থীর বয়স মাত্র ১৭। কিন্তু বাবু হাওলাদার একটি নকল কাবিন নামা তৈরি করে এলাকার সবাইকে দেখিয়ে বলছেন এ মেয়ে তার বিবাহ করা স্ত্রী। শিক্ষার্থী তার পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে বখাটে বাবুকে একতরফা তালাক দেয়।

পরে রাতেই নির্যাতিতার মা বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় বাবুকে প্রধান আসামি করে ১৩ জনের নামে মামলা করেন। এর পর শুক্রবার ( ১৩ আগস্ট) রাত ১০ টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রিপন হাওলাদার নামে মামলা ৮ নং আসামিকে আটক করে মাদারীপুর সদর মডেল থানা পুলিশ। এর আগে বাবুর সহযোগি বেলায়েত খান (৪৫) নামে এক আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মামলার প্রধান আসমী বাবু হাওলাদারসহ অন্যরা এখনো পালাতক রয়েছে। বাবু হাওলাদার জোরপূর্বক ও প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে বিয়ে করানোর ব্যাপারে তার এর বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা দায়ের করবেন বলের জানিয়েছেন ভূক্তভোগী পরিবার।

ওই শিক্ষার্থী বাবা বলেন, ‘বাবু আমার মেয়েকে সবময় বিরক্ত করতো। ওর কারনে আমরা এলাকায় মুখ দেখাতে পারতাছি না। আমরা মামলা করার পর থেকে সবসময় হুমকি দিয়ে আসতেছে। আমারা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগতেছি। বাবু আমার মেয়ের জীবনটা নষ্ট করে দিছে। আমরা এর বিচার চাই।’

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম মিঞ বলেন, ‘আমারা ইতিমধ্যেই মামলার দুজন আসামীকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। বাকি আসমীদের ধরতে আমার জোর চেষ্টা চালাচ্ছি। আশা করি পালাতক আসামীদের দ্রুত সময়ের মধ্েেয আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারবো।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আসাদুজ্জামান এর কাছে উক্ত কাজির আইন বহির্ভূত বিবাহ রেজিস্টার এর ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিবাহ রেজিস্টার এর ব্যাপারে তার কোন কোন গাফলতি থাকলে সেটা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখবো এবং আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করবো।

(ওকে/এসপি/আগস্ট ১৪, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test