E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভৈরবে গ্রেফতার হয়েছিলেন ২২ জন

বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে মিলাদ দোয়া পড়ানো ছিল যাদের অপরাধ!

২০২১ আগস্ট ১৪ ১৮:৪২:৪৬
বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে মিলাদ দোয়া পড়ানো ছিল যাদের অপরাধ!

মিলাদ হোসেন অপু, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) : ভৈরবে বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে মিলাদ দোয়া পড়ানো ছিল যাদের অপরাধ।  সেদিন গ্রেফতার হয়েছিল ২২ জন।  দিনটি ছিল ১৯৭৬ সালের ১৫ আগষ্ট। ভৈরব হাজী আসমত কলেজের শহীদ আশুরন্জন ছাত্রাবাসে আয়োজন করা হয় মিলাদ দোয়ার। স্থানীয় যুবলীগ, ছাত্রলীগের কয়েক নেতাকর্মী এই আয়োজনটি করেছিল। এদিন বিকেল ৩ টায় ছাত্রাবাসে হুজুররা কোরআন খতম শুরু করে। কিছুক্ষণ পর একদল পুলিশ ছাত্রাবাসটি ঘেরাও করে ফেলে। ছাত্রাবাসটি ছিল ভৈরব বাজারের হুলুদ পট্রির দুতলায়। প্রায় ৩০/৪০ জন পুলিশ দুতলায় উঠেই বলতে লাগল তোরা কিসের মিলাদ কোরআন খতম করছিস?  এত বড় সাহস তোদের। একথা বলেই ২২ জনকে বন্দুকের বাট দিয়ে পেটাতে লাগল। পুলিশের নির্যাতনে সেদিন অনেকেই রক্তাক্ত ও আহত হলো। পরে হুজুরদেরসহ ২২ জনকে আটক করে ভৈরব থানায় নিয়ে গেল। ১৯৭৬ সালে ক্ষমতায় ছিল সামরিক সরকার। তখন সামরিক সরকারের নির্দেশেই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল বলে তারা জানায়। 

সেদিনের ঘটনায় যারা গ্রেফতার হয়েছিল তারা হলো তৎকালীন থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম আক্কাছ, ছাত্রলীগ কর্মী আসাদুজ্জামান ফারুক ( বর্তমানে সাংবাদিক), রুহুল আমিন, মাহাবুব, মতিউর রহমান, মফিজুর রহমান, মোশারফ হোসেন ( জজ মিয়া) , জিল্লুর রহমান জিল্লু, আসাদ মিয়া, আতাউর রহমান, আসাদুল হক শিশু, ফিরোজ মিয়া, দিলীপ চন্দ্র সাহা ও তার ভাই দিজেন্দ্র চন্দ্র সাহা, ফজলুর রহমান, আবদুল হামিদ, ইদ্রিছ মিয়া, মাহবুব আলম, রসরাজ সাহা, সুবল চন্দ্র কর, শাহজালাল হোসেন ও আজমল ভূইঁয়া।

থানায় নেয়ার পর ১২ জন হুজুরকে মুছলেকা নিয়ে পুলিশ তাদের ছেড়ে দিল। আর ২২ জনকে ভৈরব থানা হাজতে রাখল। পরদিন ১৬ আগষ্ট তাদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করে আটকাদেশ দিয়ে তৎকালীন কিশোরগন্জ মহকুমা আদালতে চালান দিল। আদালত তাদেরকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠাল।

তারপর কারা কর্তৃপক্ষ ফখরুল আলম আক্কাছ, আসাদুজ্জামান ফারুকসহ কয়েকজনকে কনডেম সেলে বন্দি করে রাখল। বাকিদেরকে কারাগারের একটি সেলে রাখল। এখানে উল্লেখ্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর কয়েক বছর এদেশে কেউ বঙ্গবন্ধুর নামটি উচ্চারণ করতে পারতনা। সেই সময়ে সাহসিকতার সাথে ভৈরবের ২২ জন যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও আ,লীগের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর নামে মৃত্যুবার্ষিকীর আয়োজনটি করেছিল বলে তারা জানায়।
তারপর তারা দীর্ঘদিন কারাগারে ছিল। কেউ ছয়মাস, কেউ আটমাস, কেউ এক বছর কারাভোগ করে। এরপর তারা সবাই জামিনে মুক্তি পায়।

সেদিনের আয়োজকদের নেতা ফখরুল আলম আক্কাছ এবিষয়ে বললেন, বঙ্গবন্ধুর মত মহান নেতাকে ঘাতকরা সপরিবারে হত্যা করেছিল। আর আমরাতো ছিলাম তুচ্ছ নেতা। আমরা সেদিন বঙ্গবন্ধুর নামে মিলাদ দোয়া পড়াতে পারলাম না।

সেদিনের ছাত্রনেতা ( বর্তমানে যুগান্তর সাংবাদিক) আসাদুজ্জামান ফারুক বলেন, ঘটনার দিন পুলিশের নির্যাতনের কথা আজও ভুলতে পারিনা। তখন সামরিক সরকারের এতটা ভয় ছিল এদেশে বঙ্গবন্ধুর কোন অনুসারী বা ভক্ত রাখা যাবেনা। তৎসময়ে আ,লীগের বড় বড় নেতারা সামরিক সরকারের ভয়ে পালিয়ে ছিল। আর আমরা সাহসীকতার সাথে সেদিন আয়োজনটি করেছিলাম।

সেদিনের গ্রেফতারকৃত আরেক ছাত্রলীগ নেতা রসরাজ সাহা বলেন, সেদিন দুঃসময়ে আমরা বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষীকীর আয়োজন করেছিলাম। আমার দুঃখ এখন আ,লীগ সরকার ক্ষমতায় কিন্ত আমাদেরকে কেউ স্মরণ করেনা। ১৫ আগষ্টে সরকারী বা দলীয় দাওয়াতটি পর্যন্ত আমরা পায়না। আমাদের দাবী সরকার আমাদের মূল্যায়নটি করুক।

(এম/এসপি/আগস্ট ১৪, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test