E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মামলায় আটকে রশিকপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার সম্পদ

২০২১ আগস্ট ১৮ ১৭:৩৮:৫২
মামলায় আটকে রশিকপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার সম্পদ

এস এ সাদিক, মেহেরপুর : মামলা জটিলতায় এখনো আলোর মুখ দেখতে পারেনি প্রায় কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার রশিকপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়। রশিকপুরসহ আশেপাশের গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে লেখাপড়া করতে যেতে হয় দূরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে। ১৫ বছর আগে নির্মাণ সম্পন্ন হলেও চালু না হওয়ায় বিদ্যালয়ের আসবাব পত্র চুরি হয়েছে, বিদ্যালয়ে ভবনের ভিতরে রাতের আধারে বসে মাদকের আড্ডা।

শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া গ্রাম মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার রশিকপুর। রশিকপুর থেকে ৫ কিলোমিটার চুয়াডাঙ্গার নাটুদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভৈরব পার হয়ে দুই কিলোমিটার বাগোয়ান মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ৩ কিলোমিটার দূরে টেংরামারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। অথচ নিজ গ্রামেই দ্বিতল ভবনের একটি বিদ্যালয় দাঁড়িয়ে আছে।

জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন বিঘারও বেশি জমিতে নির্মাণ করে বিদ্যালয়ের ভবন। বিদ্যালয়টির নাম দেওয়া হয় রশিকপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ২০০৩ সালে দেশের ৫৪টি উপজেলায় এ প্রকল্পের আওতায় ৫৪টি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর মধ্যে রশিকপুর ব্যতিত বাকি ৫৩টি বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত হয়েছে।

জানা গেছে, বিদ্যালয়টি করার জন্য স্থানীয় সুলতান শেখ তার স্ত্রী আম্মাতন নেছার নামীয় তিন বিঘা ৫কাঠা, আমির শেখ ১০ কাঠা এবং রতন শেখ ১০ কাঠা জমি দিয়েছিলেন। আম্মাতন নেছার তিন বিঘা জমির পরিবর্তে আবাদি পাঁচ বিঘা জমি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তৎকালীন স্কুল কমিটি জমি না দেওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ কারণে জমিদাতা আম্মাতন নেছা বাদি হয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা করেন। দির্ঘ ১৫ বছর মামলা চলার পরে কিছুদিন আগে মামলাটি নিস্পত্তি হয়।

জমির মালিক আম্মাতন নেছা বলেন, তিন বিঘা আমবাগানের গাছ কেটে আমি বিদ্যালয় নির্মার্ণের জমি দিয়েছিলাম। তৎকালীন বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি সঙ্গে কথা ছিল ওই জমির বদলে মাঠে আবাদ করা যায় এমন পাঁচ বিঘা জমি কিনে দেবে তারা। কিন্তু বিদ্যালয় নির্মাণ করার পরে জমি না পাওয়ায় আমি ২০০৪ সালে আদালতে মামলা করি। তবে মামলাটি নিস্পতি হয়েছে এমন তথ্য তিনি জানেন না।

স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য ও সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পাঠদান শুরু করার যাবতীয় উপকরণ ওই ভবনে ছিল। বিদ্যালয়ের সামনে বড় একটি খেলার মাঠ রয়েছে। কিন্তু আইনি জটিলতায় বিদ্যালয়টি উদ্বোধন করা যায়নি। গ্রামে এটি ছাড়া আর কোনা মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। গ্রামের তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে কয়েক কিলােমিটার দূরে গিয়ে পড়াশােনা করতে হচ্ছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে চুরি হয়েছে বিদ্যালয়টির আসবাব, বৈদুতিক পাখা, সুইচ, জানালার গ্রিল। কাচের জানালা ভাঙাচোরা। রাতের বেলায় ভবনে বসে মাদকসেবীদের আড্ডা। বিদ্যালয় ভবনের প্রতিটি জানালার কাচ চুরি হয়েছে। গ্রিল ভেঙে ভেতর থেকে চেয়ার, বেঞ্চ ও টেবিল নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। বৈদ্যুতিক পাখা ও সুইচ গায়েব হয়ে গেছে। দেয়ালে সুইচ লাগানো বোর্ডগুলোও চুরি হয়ে গেছে। টয়লেটের পানির কলও ভেঙে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা ।

রশিকপুর গ্রামের বাসিন্দা মাহাবুব শেখ বলেন, বিদ্যালয়টি চালু না হওয়ায় মূল্যবান জিনিস চুরি হয়ে গেছে। গ্রামের শিক্ষার্থীদের আগের মতো কষ্ট করে দূরের বিদ্যালয়ে যেতে হয়। সামান্য একটা সমস্যার কারণ দেখিয়ে ১৫ বছর ধরে বিদ্যালয়টি চালু করা হয়নি।

গ্রামের নাবিল আহমেদ নামের একজন ৭ম শ্রেণীর ছাত্র জানায়, গ্রামের স্কুল চালু না হওয়ায় তাকে ভৈরব নদী পেরিয়ে বাগোয়ানে যেতে হয় লেখাপড়ার জন্য। প্রতিদিন কয়েক কিলোমিটার তাকে যাতায়াত করতে হয়।

এ বিষয়ে মুজিবনগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কে এম মামুনুর রশিদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

মেহেরপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজুল হোসেন মামলা নিষ্পত্তির বিষয়ে বা স্কুল চালু করার বিষয়ে নতুন কোন তথ্য জানেন না।

মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান বলেন, জমি সংক্রান্ত বিষয়ে দির্ঘদিন মামলা থাকার কারনে স্কুলটি চালু করা সম্ভব হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে মামলাটি নিষ্পত্তি হয়েছে। এখন চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব স্কুলটি চালু করতে। ইতমধ্যে ইউএনও এবং শিক্ষা বিভাগ আইনই প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এছাড়া জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে সকল জটিলতা নিরসনের মাধ্যমে স্কুলটি দ্রুততম সময়ে যাতে চালু করা যায় তার ব্যবস্থা করতে।


(এসএএস/এএস/আগস্ট ১৮, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test