E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হাসপাতালের ডোবায় করোনা রোগীর মরদেহ, শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত!

২০২১ আগস্ট ২১ ১৮:০৪:০২
হাসপাতালের ডোবায় করোনা রোগীর মরদেহ, শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত!

কাজী নজরুল ইসলাম, শরীয়তপুর : শরীয়তপুরের জাজিরায় হাসপাতালের পাশের ডোবায় করোনা রোগী মোঃ সোনামিয়া ফকির (৭০) নামে এক সিনিয়র সিটিজেনের লাশ পাওয়া গেছে। আজ শনিবার সকাল নয়টার সময় জাজিরা সোনালী ব্যাংক মোড় ও জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের পার্শবর্তী একটি ডোবায় লাশটি ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়।

সকাল দশটার সময় পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করেন। সুরতহাল করে পুলিশ দেখতে পায় মৃত সোনামিয়া ফকিরের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাত রয়েছে। সোনামিয়া ফকির জাজিরা পৌরসভার পূর্ব আড়াচন্ডি গ্রামের মৃত আমির ফকিরের ছেলে।

নিহতের পরিবার ও জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ আগষ্ট দুপুরে করোনা পজিটিভ সোনামিয়া ফকিরকে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে তার চিকিৎসা চলছিল। ১৬ আগষ্ট রাত ১১টার দিকে নিহতের পূত্র আব্দুর রহমান তার পিতাকে ঔষধ খাইয়ে বাড়ি চলে যান। বাড়ি যাওয়ার পর রহমান তার বাবাকে রাত ১২ টার দিকে একাধিকবার ফোন করলে তার বাবা ফোন ধরেননি। রাত তিনটার দিকে ঘুম ভাঙলে আব্দুর রহমান তখনো তার বাবাকে ফোন দিলে ফোন ধরেননি। ১৭ আগষ্ট সকালে হাসপাতালে এসে তার বাবাকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করে কোথাও না পেয়ে জাজিরা থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন।

আজ (শনিবার) সকালে পথচারীরা সোনালী ব্যাংক সংলগ্ন ডোবার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় লাশটি দেখতে পেয়ে থানায় খবর দিলে জাজিরা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করেন।নিহত সোনা মিয়া ফকিরের হাতে ক্যানোলা পরানো ছিল।

নিহত সোনা মিয়া ফকিরের ছেলে আব্দুর রহমান(৩০) বলেন, আমি প্রতিদিনের মত বাবাকে ঔষধ পথ্য খাইয়ে শুইয়ে দিয়ে রাত ১১টার সময় বাড়ি চলে গেছি। এরপর রাত ১২টার দিকে বাবাকে কয়েকবার ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ভেবেছি ঘুমিয়ে গেছে। রাত ৩টার দিকে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলে তখনো ফোন করলে রিসিভ করেননি। সকাল ৮টার দিকে হাসপাতালে এসে দেখি আমার বাবা সীটে নেই। বাবার পাশের সীটে আরেকজন রোগী ছিলেন, তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। সকালে উঠে তোমার বাবাকে আমি দেখিনি। এরপর হাসপাতাল ও বাহিরে বিভিন্ন স্থানে খুঁজেও বাবাকে পাইনি। হাসপাতালের ডাক্তাররা বলেছেন তোমার বাবাকে পাহারা দিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের না। এরপর আমি জাজিরা থানায় সাধারণ ডায়েরী করি। আমার বাবাকে খুন করা হয়েছে। আমার বৃদ্ধ বাবার কোন শত্রু ছিলনা। বাবার শরীরে অনেকগুলো কোপের চিহ্ন পাওয়া গেছে। হাসপাতাল থেকে গভীর রাতে ধরে নিয়ে কে আমার বাবাকে হত্যা করেছে আমি জানি না। আমি সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক এই ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তি ও বিচার চাই।

জাজিরা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোঃ সামসুল হক বলেন, আমি নিহতের মরদেহের সুরতহাল করেছি। উদ্ধারকৃত লাশের কানে, হাতে, মাথায়, পিঠে কোপের চিহ্ন দেখতে পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেছি।

জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ মাহমুদুল হাসান বলেন, রোগীর সাথে তার কোন স্বজন ছিল না। এমতাবস্থায় গভীর রাতে উক্ত রোগী হাসপাতাল থেকে বের হয়ে চলে যায়। এখন সে হয়তো ঔষধ-পথ্যও আনতে যেতে পারে বা অন্য কোন প্রয়োজনে বাইরে যেতে পারে। করোনা ওয়ার্ড তিন তলায়। নার্সদের থাকার জায়গা চার তলায়। রোগী কিভাবে হাসপাতালের বাইরে গেছে তা কেউ দেখেনি। হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরা দীর্ঘদিন থেকে বিকল থাকায় ফুটেজও উদ্ধার করা যায়নি। তবে আমরা পরের দিনই বিষয়টি জাজিরা থানাকে অবহিত করেছিলাম, কিন্তু মৃত ব্যাক্তির পরিবার জিডি করায় আমরা আর জিডি করিনি।

জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, হাসপাতালে ভর্তিকৃত সোনামিয়া ফকির নামে একজন রোগীর নিখোঁজ হওয়া বিষয়ে জাজিরা থানায় নিখোঁজ ব্যক্তির ছেলে একটি সাধারাণ ডায়েরী করেন। ডায়েরী নং ৭১৫/২০২১। আজ শনিবার সকালে জানতে পারি হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তির লাশ পাওয়া গেছে। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধারের ব্যবস্থা করি। এখন তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

(কেএনআই/এসপি/আগস্ট ২১, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test