E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেক জালিয়াতির মামলায় কালের কণ্ঠের বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি আটক

২০২১ আগস্ট ২৫ ১৮:৪৮:৪৭
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেক জালিয়াতির মামলায় কালের কণ্ঠের বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি আটক

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : চেক চুরি করে জালিয়াতির মাধ্যমে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের ৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে শেখ আমিনুর রশিদ সুজন নামের এক বিজ্ঞাপন প্রতিনিধিকে গ্রেপ্তার করা হওেয়ছে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সাতক্ষীরা পুলিশ লাইনের প্রধান ফটকের সামনে সাতক্ষীরা - কলারায়া সড়ক থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বাবার নাম সৈয়দুল আলম। তিনি দি স্যান পত্রিকার সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ও দৈনিক কালেরকন্ঠ পত্রিকার সাতক্ষীরার বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বপালন করে আসছেন।

সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা খলিলুর রহমান জানান, তাদের অফিস থেকে সোনালী ব্যাংকের সাতক্ষীরা শাখার একটি চেক বইয়ের ০১৮২৩০০, ০১৮২৩৪৯ ও ০১৮২৩৫০ নম্বরের তিনটি পাতা হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি গত বছরের ২৭ আগষ্ট তাদের নজরে আসে। এ ঘটনায় তাদের হিসাবরক্ষক আবু হুরাইরা ওইদিন রাতে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে খবর নিয়ে তারা জানতে পারেন যে গত বছরের ২৩ জুলাই আশরাফ হোসেন নামে ০১৮২৩০০ নম্বরের চেকের পিছনে সাক্ষর করে একটি মোবাইল নং বসিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও তৎকালিন প্রধান নির্বাহী মোঃ সাদিকুর রহমানের সাক্ষর ও সিল জাল করে ৬ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

একইভাবে ওই বছরের ২৫ আগষ্ট জনৈক আবুল হোসেনের পক্ষে অ্যাডভাইস করে ০১৮২৩৪৯ নম্বর চেকটিতে একইভাবে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহীর সাক্ষর ও সিল জাল করে ছয় লাখ ১০ হাজার টাকা তোলার জন্য ব্যাংকের জ্যেষ্ট কর্মকর্তা সাঈদুর রহমানের কাছে জমা দিলে সাক্ষর সঠিক না থাকায় উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠান তিনি। এরই ফাঁকে আবুল হোসেন নামের ওই ব্যক্তি কাউণ্টার থেকে সটকে পড়েন। এ ঘটনায় তিনি ওই বছরের ২৯ আগষ্ট বাদি হয়ে কারো নাম উল্লেখ না করে সদর থানায় একটি প্রতারণার মামলা(৭২নং) করেন। মামলাটির তদন্তভার সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক হাবিবুর রহমানের উপর বর্তায়। পরবর্তীতে তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হওয়ায় মামলার তদন্তভার গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক জহিরুল ইসলামামের উপর ন্যস্ত হয়।

তিনি আরো জানান, মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি গোয়েন্দা পুলিশের অফিসে যেয়ে শেখ আমিনুর রশিদ সুজন নামের এক সাংবাদিককে পুলিশ কর্মকর্তাদের সামনে বসে থাকতে দেখেন। তার দেহের পিছনের দিকের সঙ্গে সোনালী ব্যাংকের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে মিল দেখা যায়। এমনকি সুজন ও স্বীকার করে। তবে ভিডিওতে তার মুখ দেখা যায়নি। তবে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাত দিনের রিমাণ্ড আবেদন করেছে বলে তিনি জেনেছেন। জেলা পরিষদের চেক বই এর পাতার কি ডানা হয়েছে যে আলমারি থকে উড়ে সুজনের কাছে গেল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জেলা পরিষদেরও কেউ এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। তদন্তে সব বেরিয়ে পড়বে বলে তিনি মনে করেন।
সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিন আলম চৌধুরী জানান, সোনালী ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখায় জেলা পরিষদের নামে খোলা একাউন্টের চেকের তিনটি পাতা চুরি হয়। সেই চেকের পাতায় জাল স্বাক্ষর করে সোনালী ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখা থেকে একটি পাতায় ৬ লাখ টাকা উত্তোলনের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে আরও একটি চেক নিয়ে টাকা উত্তোলনকালে ঘটনাটি জেলা পরিষদকে অবহিত করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ঘটনাটি বুঝতে পেরে প্রতারক ব্যাংক থেকে সটকে পড়ে। এ ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের ভিডিও ফুটেজ যাঁচাই করে সুজনকে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পুলিশ লাইনের প্রধান ফটকের সামনে সাতক্ষীরা- কলারোয়া সড়ক থেকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় ভিডিও ফুটেজের সঙ্গে তার দেহের ও পেটের ছবির মিল থাকায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাত দিনের রিমাণ্ড আবেদন জানিয়ে বুধবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পরিষদের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবর রহমানের দীর্ঘ ২৬ বছর চাকুরিকালে চেক জালিয়াতি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প জালিয়াতি, খেয়াঘাটের ইজারার টাকার জমা স্লিপ জালিয়াতিসহ বিভিন্ন বিভাগে জালিয়াতি ছিল সর্বজনবিদিত। এক লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের সময় কর্মচারি টুটুল দুদকের হাতে আটক হন। পরে তিনি সাড়ে ছয় কোটি টাকা দূর্ণীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আড়াই মাস জেল হাজতে ছিলেন। ওই জালিয়াতির মামলায় বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা দূণীতিবাজ এসএম মাহাবুবর রহমান ভগ্নিপতি খলিলুর রহমানসহ তিনজন মহামান্য হাইকোর্টে জামিন আবেদন করলে সাড়ে ৬ কোটি টাকা দূর্ণীতির ঘটনায় কেন তিনজন কর্মচারি জড়িত? কেন কোন কর্মকর্তার নাম দুদক জানাতে পারেনি এসব নিয়ে মাহামান্য হাইকোর্ট এক রুল জারি করে। এরপরও চেক জালিয়াতি হচ্ছে। জেলা পরিষদের কোন কর্মচারি বা কর্মকর্তা জড়িত না থাকলে এটা সম্ভব হয়নি বলে তিনি মনে করেন।

এ ব্যাপারে শেখ আমিনুর রশীদ সুজন বলেন, তাকে মোবাইল ফোনে আসতে বলায় মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলা গোয়েন্দা পুৃলিশের কার্যালয়ে আসেন। সেখানে সোনালী ব্যাংকের ভিডিও ফুটেজে এক ব্যাক্তির শরীরের পিছনের অংশের সঙ্গে তার শরীরের মিল রয়েছে বলে মনে করেন গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না বলার পরও তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমাণ্ড চেয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হচ্ছে। তাকে অহেতুক হয়রানি করা হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।

(আরকে/এসপি/আগস্ট ২৫, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test