E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

‘ভয়ে রাতি ঘুমাতি পারি না’

২০২১ সেপ্টেম্বর ০৭ ১৬:২০:৪১
‘ভয়ে রাতি ঘুমাতি পারি না’

শেখ সাদ বীন শরীফ, নড়াইল : নদীর ভাঙনের দিকে তাকালে শিউরে ওঠেন সিনিয়র সিটিজেন কিশোরী পাল। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে গৃহহীন হয়ে যাওয়ার ভয় কাজ করে তাঁর মধ্যে। কারণ বাপ-দাদার ভিটেমাটি নদীতে চলে যেতে দেখেছেন তিনি। এই প্রতিবেদককে দেখে সেই আবেগই প্রকাশ করলেন।

কালিয়া উপজেলার মাউলি ইউনিয়নের ঘোষিবাড়িয়া গ্রামের বৃদ্ধ কিশোরী পাল (৮০) স্মৃতি হাতড়ে বলেন, আমার বাপ-দাদার ভিটেমাটি সব নবগঙ্গা নদীতে চলে গেছে। ৪ বিঘার জমির ওপর আমাদের বাড়িঘর ছিল। বড় উঠোন ছিল। কয়েক’শ মাটির কাঁচা হাড়ি-পাতিল তৈরি করে উঠোনের রোদে শুকাতে দিতাম। বাপ-দাদারা মারা গেছেন। গত বছর আমার তিনটা ঘর নদীতে চলে গেছে। আমি এখন গরিব মানুষ। আমার বাড়িঘর নাই। পরের জায়গায় একখান টিনের ছাপড়ার মধ্যে বাস করি। নদীর জলে এহন মেলা বেগ (স্রোত)। ভাঙ্গণও শুরু হইছে। ছাপরাডা কি জলেই চলে যায়! ভয়ে রাতি ঘুমাতি পারি না।’

মাউলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস,কে সাজ্জাদ হোসেন জানান, মাউলি ইউনিয়নের ঘোষিবাড়িয়া গ্রামে ২০০ পাল সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল। নদী ভাঙ্গণের কবলে পড়ে এখন সেখানে প্রায় ৫০ ঘর বসবাস করেন। এলাকার নবগঙ্গা নদীর মহাজন এলাকায় ভাঙ্গণ শুরু হলে সেখানে সিসিব্লক দিয়ে ভাঙ্গল রোধ করা হয়। এখন ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে ঘোষিবাড়িয়া গ্রামে। তিনি বলেন নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে ১০টি বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে ৪০টি পরিবার। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হলে তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, কালিয়া উপজেলার মাউলি ইউনিয়নের ঘোষিবাড়িয়া গ্রামটি নবগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। মহাজন খেয়াঘাট থেকে নদীটি ঘোণিবাড়িয়া গ্রামে বাঁক খেয়ে গাজীরহাট পিরোলিস্থানের আত্রাই নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। নদীতেেএখন প্রচন্ড স্রোত। স্রোতের কারণে ঘোষিবাড়িয়া গ্রামের এই বাঁকা স্থানে ভাঙ্গণ দেখা দিয়েছে।

নদীর এই ভাঙনরোধ এবং ভাঙন থেকে রক্ষার দাবিত গত বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় এলাকার মানুষ ভাঙ্গণ কবলিত স্থানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। নদীর ভাঙন রোধে গ্রামবাসীকে রক্ষার দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে কিশোরী পালও যোগ দিয়েছিলেন।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন মাউলি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এস,কে সাজ্জাদ হোসেন, প্যানেল চেয়ারম্যান মো.আশরাফুল মোল্লা, অনিতা পাল, জীতেন পাল, গোবিন্দ পাল, গোপাল চন্দ্র পাল, এসএসসি পরীক্ষার্থী সঞ্চিতা পাল প্রমুখ। বক্তারা এই পরিবারগুলোকে রক্ষা করতে নদীর ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

এসএসসি পরীক্ষার্থী সঞ্চিতা পাল বলেন, নদী ভাঙ্গণের কারণে রাতে অনেকে ঘুমাতে পারেন না। গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে হঠাৎ করে ভাঙ্গণের শব্দ শুনতে পাই। তখন আমি পড়তে ছিলাম। ঘর থেকে বের হয়ে দেখি সামনের সব কিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। ভয়ে সবাইকে ঘুম থেকে ডেকে তুলি।

কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.আরিফুল ইসলাম বলেন, মাউলি ঘোষিবাড়িয়া গ্রামের নদীভাঙনের বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে শুনেছি। ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

জানতে চাইলে নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন সিকাদার বলেন, ঘোষিবাড়িয়া এলাকার ভাঙ্গণের বিষয়টি কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাদের জানিয়েছেন। ভাঙ্গণ প্রতিরোধে আপদকালীণ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা জরুরিভিত্তিতে নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে অনেক স্থানে ভাঙ্গণ প্রতিরোধমুলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

(এস/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test