E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ই-অরেঞ্জে বিনিয়োগ করে বিপাকে সখীপুরের দুই শতাধিক পরিবার 

২০২১ সেপ্টেম্বর ০৯ ১৮:১৯:৫১
ই-অরেঞ্জে বিনিয়োগ করে বিপাকে সখীপুরের দুই শতাধিক পরিবার 

মোঃ সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান  ই-অরেঞ্জে বিনিয়োগ করে একই গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার বিপাকে পড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কেউ ঋণ, কেউ জমি বন্ধক আবার কেউ স্বর্ণ ও গরু বিক্রি করে দ্বিগুণ মুনাফা পাওয়ার লোভে প্রায় ১৫ কোটি টাকার বিভিন্ন পণ্য এই ই-অরেঞ্জ প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রয় করেছেন বলে জানা গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাদিঘী গ্রামে।

সরেজমিনে ওই গ্রামে গেলে সাংবাদিক আসার খবর পেয়ে ভুক্তভোগী একাধিক ব্যক্তি ছুটে আসেন সেখানে। এ সময় অনেকের চোখেই ছিলো বুকফাঁটা কষ্টের ছাপ। এসময় সর্বস্বান্ত হওয়ার আক্ষেপ জানান তারা। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ওই গ্রামের কৃষক, দিনমজুর, ভ্যানচালক, প্রবাসী, প্রবাসীর স্ত্রী, চায়ের দোকানদারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার দুই শতাধিক পরিবার ই-অরেঞ্জে বিনিয়োগ করেছেন। ভুক্তভোগীরা ঋণ, কিস্তি, জমি বিক্রি, জমি বন্ধক, স্বর্ণ ও গরু বিক্রিসহ বিভিন্নভাবে টাকা সংগ্রহ করে দ্বিগুণ মুনাফা পাওয়ার লোভে প্রায় ১৫ কোটি টাকার বিভিন্ন পণ্য ক্রয় করেছেন। এই পণ্য ক্রয়ের প্রায় ৪ থেকে ৬ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো কেউই পণ্য পায়নি। এ ঘটনায় ওই গ্রামের একাধিক গ্রাহক ই-অরেঞ্জ কোম্পানির বিরুদ্ধে ঢাকার গুলশান থানায় ও ভোক্তা অধিকার অধিদফতরে অভিযোগ করেছেন।

ইছাদিঘী গ্রামের ভুক্তভোগী নাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জে পাঁচটি মোটরসাইকেল ক্রয় করে প্রথমবার পেয়েছি। এরপর তাদের সাইটে মোটরসাইকেলের ওপরে বিশেষ অফার আসে ডবলটাকা ভাউছার নামে। তাদের ক্যাম্পেইন থেকে ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার ২৯টি মোটরসাইকেল ক্রয় করেছি। সেই ভাউছারগুলো ডবলটাকা হয়ে ওয়ারলেটে জমা হয়। লকডাউনের নাম করে তারা বাকি ডেলিভারিগুলো স্থগিত করে দিয়েছে। টাকাগুলো আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে এনে এই কোম্পানিতে মোটরসাইকেল ক্রয় করেছি। এখন আমি নিঃস্ব। এ ঘটনায় অরেঞ্জ কোম্পানির বিরুদ্ধে ঢাকার গুলশান থানায় ও ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি। এই এলাকার দুই শতাধিক পরিবার বিভিন্ন পণ্য ক্রয়ের জন্য ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা জমা দিয়েছেন।’

মাইনুদ্দিন নামের এক অটোভ্যান চালক বলেন, ‘আমি গরু বিক্রি করে লাভের আশায় ই-অরেঞ্জ কোম্পানিতে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। আমি মোটরসাইকেল ক্রয় করেছি, কিন্তু এখনো পাইনি। আমি গরিব মানুষ। আমার কাছে এই ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো। আমি টাকাগুলো ফেরত চাই।

রানা নামের এক দিনজমুর বলেন, ‘এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে গরু কিনেছিলাম। সেই গরু বিক্রি করে আমি লাভের আশায় ই-অরেঞ্জে মোটরসাইকেল ক্রয় করেছি। এখন টাকাও পাচ্ছি না, মোটরসাইকেলও পাচ্ছি না। আমি কামলা (শ্রম বিক্রি) দিয়ে টাকাগুলো পরিশোধ করছি।’

শাহানাজ নামের এক প্রবাসীর স্ত্রী বলেন, ‘আমার স্বামী সৌদিতে থাকেন। আমাদের ঋণ পরিশোধও হয়নি। এলাকার অনেকেই এই কোম্পানিতে পণ্য কেনার জন্য টাকা জমা দিয়েছেন। এজন্য আমার স্বামীর কাছ থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা এনে মোটরসাইকেল ক্রয় করেছি। চার মাস চলে গেছে এখনো মোটরসাইকেল পাইনি।’

পারভীন বেগম নামের এক নারী বলেন, ‘আমি এই কোম্পানিতে দুই লাখ পাঁচ হাজার টাকার পণ্য ক্রয় করেছি। আমার প্রবাসী স্বামী বাড়িতে ঘর দেয়ার জন্য টাকাগুলো দিয়েছিলেন। কিন্তু অতি লোভে এই কোম্পানি থেকে পণ্য কয় করেছি। পণ্য পেলে আবার তাদের কাছেই বিক্রি করা যেতো এজন্য আরো আগ্রহ হয়ে মোটরসাইকেল ক্রয় করেছি। এখন টাকাও পাচ্ছি না, মোটরসাইকেলও পাচ্ছি না।’

গজারিয়া ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্য শিউলী আক্তার বলেন, ‘আমি নিজেও তিন লাখ টাকার পণ্য ক্রয় করেছি। এলাকার অধিকাংশ পরিবার এই পণ্য ক্রয় করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই এলাকায় প্রায় ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার মতো ই-অরেঞ্জ কোম্পানি হাতিয়ে নিয়েছে। আমরা টাকাগুলো দ্রুত ফেরত চাই।’

সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একে সাইদুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। তবে কেউ অভিযোগ করেনি।’

(এসএম/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test