E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কুলিয়ারচরে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে অবৈধ মাল্টিপারপাস ব্যবসা

২০২১ সেপ্টেম্বর ১১ ১৪:৩০:৩৬
কুলিয়ারচরে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে অবৈধ মাল্টিপারপাস ব্যবসা

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার অলিতে-গলিতে, মোড়ে মোড়ে গড়ে উঠেছে অবৈধ মাল্টিপারপাস (সুদের) ব্যবসায়। এইসব অবৈধ মাল্টিপারপাস (সুদের) ব্যবসার চড়া সুদের ফাঁদে পড়ে অনেক নিরীহ মানুষ নানা-রকম হয়রানির শিকারসহ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। অনেকে কিস্তি দিতে না পাড়ার কারণে, তাদের সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে এইসব প্রতিষ্ঠানগুলো, ফলে সর্বস্ব হারিয়ে এলাকা ছাড়া হচ্ছে অনেকেই।

জানা যায়, কিছু অসাধু স্বর্ণের দোকানদার ও স্থানীয় কিছু অসাধু প্রভাবশালী লোক এইসব অবৈধ মাল্টিপারপাস ব্যবসার নামে চড়া সুদে দোকান খুলে বসেছে। সহজ ও দৈনিক কিস্তির লোভ দেখিয়ে, গ্রামের সহজ-সরল লেখাপড়া না জানা দিনমজুর, রিকশা চালকদের টার্গেট করেই মূলত গড়ে উঠেছে তাদের এসব প্রতিষ্ঠান।

এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে শুধুমাত্র পৌর শহরেই এ রকম প্রায় অর্ধশতাধিক অবৈধ, অনিবন্ধিত মাল্টিপারপাস ব্যবসা গড়ে উঠেছে। এইসব ব্যবসার কোনটির নেই সরকারি নিবন্ধন, যার ফলে সরকার হারাচ্ছে এই খাত থেকে বিপুল পরিমাণে রাজস্ব।

একটি তথ্যে দেখা গেছে যে, এসব মাল্টিপারপাস ব্যবসায় সহজ কিস্তির কথা বলে সর্বনি¤œ ২৫% হারে সুদ থেকে কোন ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০% হারেও সুদ আদায় করছে। যা গ্রামের সহজ সরল লেখাপড়া না-জানা মানুষগুলো না বুঝার কারণে, সহজেই এইসব ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রিকশাওয়ালার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি একবার মেয়ের বিয়ের সময় ১৫ হাজার টাকা নিয়েছিলাম, দুই মাস মেয়াদে ৩ হাজার টাকা লাভ দেওয়ার শর্তে। সেই ১৫ হাজার টাকা থেকে তারা আবার ৫০০ টাকা কেটে রেখেছে, খরচ বাবদ। লোন নেওয়ার পর দিন থেকেই শুরু হয় দৈনিক ৩০০ টাকা করে কিস্তি। এটাই ছিলো তাদের সর্বনিম্ন হারের লোন। তারপর থেকে একদিন কিস্তি দিতে একটু দেড়ি হলেই ফোনে অক্ষত ভাষায় গালাগালি শুনতে হতো। কোন কারণে কিস্তি দিতে না পারলে গায়ে পর্যন্ত হাত তুলতো এরা। কিন্তু কী করা টাকাতো কোথাও পাচ্ছিলাম না, তাই নিতেই হয়েছিলো। একবার ৩০০ টাকার দৈনিক কিস্তি দিতে গিয়ে মধ্যে কয়দিন দিতে পারিনি, এরপর তারা একদিন আমার গাড়ি তালা দিয়ে আটকে রাখে। পরে টাকা ম্যানেজ করে গাড়ি ছাড়িয়ে আনতে হয়েছিলো।

এই সময় তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, তিনশত টাকা করে ৬০ কিস্তিতে ১৮ হাজার টাকা দেওয়া শেষ হলে। তখন ওরা বলছিলো আমার না-কি মধ্যে অনেক কিস্তি গ্যাপ আছে। তাই আমার কাছে না-কি এরা আরও পাঁচ কিস্তি পায়। এই কথা শুনে আমার মাথায় হাত, তখন আমি বললাম গ্যাপের সব কিস্তিতো দিয়ে দিয়েছি, আপনারাই আদায় করে নিয়েছে। কিন্তু তারা কোন কথা শোনেনি, উল্টো বলছিলো আরও ৫ কিস্তি দিতে হবে নয়তো গাড়ি তালা মেরে রেখে দিবে। বাধ্য হয়ে তখন আরও পাঁচ কিস্তি (পনেরশত) টাকা দিতে হলো।

জানা যায়, এইসব মাল্টিপারপাস ও স্বর্ণের দোকানদারদের মূল টার্গেট হলো লেখাপড়া না জানা দিনমজুর রিকশা চালক। এসব মাল্টিপারপাস ও স্বর্ণের দোকানদারগণ লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও সরকার এই খাত থেকে কোন ধরণের রাজস্ব পাচ্ছে না। যেন এসব দেখার কেউই নেই। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা চান ভুক্তভোগীরা।

(এস/এসপি/সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test