E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও যেতে পারছে না কুড়িগ্রামের নদী ভাঙন কবলিত হাজারো শিক্ষার্থী 

২০২১ সেপ্টেম্বর ১১ ১৯:০৬:৫০
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও যেতে পারছে না কুড়িগ্রামের নদী ভাঙন কবলিত হাজারো শিক্ষার্থী 

প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) : প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর অবশেষে রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দেশব্যাপি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলেও কুড়িগ্রাম জেলার ৯ উপজেলায় প্রায় ১০৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানের গন্ডিতে পা রাখতে পারছে না। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে ৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভাঙ্গনের মুখে ১৫টি বিদ্যালয়। আর বন্যার কারণে পাঠদানের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ৮০টি বিদ্যালয়।

দেশের উত্তরের বৃহত্তর নদ-নদী বেষ্টিত জেলা কুড়িগ্রামে রয়েছে অর্ধশতাধিক নদ-নদী। চলতি বর্ষা মৌসুমে বন্যার তেমন প্রভাব না পড়লেও থেমে নেই ভাঙ্গনের তীব্রতা। এতে করে বিলিন হচ্ছে ঘরবাড়ি আর ফসলি জমির পাশাপাশি একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নদীর পানি বৃদ্ধি-হ্রাসের সাথে ভাঙ্গন আরও ভয়াবহ রূপ নেয়ায় হুমকিতে পড়েছে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার এবং গঙ্গাধর নদীর পেটে গেছে ৪ উপজেলার ৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেগুলো হলো-উলিপুর উপজেলার পশ্চিম বজরা, চেরাগের আলগা, বগুলা কুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

নাগেশ্বরীর-আকবর আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাজারহাটের গতিয়াশাম বগুড়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রৌমারীতে-গত বছর ভাঙ্গনের স্বীকার হয়ে স্থানান্তরিত হলে চলতি বন্যাতেও ফলুয়ার চর এবং ঘুঘুমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আবারও ভাঙ্গনের স্বীকার হয়। এছাড়াও ঝুঁকিতে রয়েছে আরও ৭টি উপজেলার ২২টি বিদ্যালয়। এরমধ্যে ভূরুঙ্গামারীতে-১১টি, রাজিবপুরে ৩টি, উলিপুরে-২টি এবং সদর, নাগেশ্বরী, রাজারহাট ও চিলমারী একটি করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ উলিপুরে-১টি মাদ্রাসা এবং ১টি উচ্চ বিদ্যালয়।

ভাঙনের কবলে পড়া স্কুলগুলোর মালামাল পড়ে আছে খোলা আকাশের নিচে। স্কুল নির্মাণের জমি না পাওয়ায় কোমল মতি শিশুদের লেখাপড়া নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। বিলিন হওয়া স্কুল নির্মাণের জন্য নতুন করে জমি না পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ঝুঁকিপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রক্ষার জন্য বালু ভর্তি জিও ব্যাগ এবং জিও টিউব ফেলে হলেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না ভাঙ্গনের তীব্রতায়। বিলিন হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশে পাশে কোন স্কুল না থাকায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর লেখাপড়া নিয়ে অনিশ্চতায় পড়েছেন অভিভাবকবৃন্দ। করোনায় দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত। অপরদিকে নদী ভাঙ্গনে বিদ্যালয় বিলিন হয়ে যাওয়া সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বাড়তি দুশ্চিন্তায় অভিভাবক মহল।

শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, ভূরুঙ্গামারী ২নং পাইকেরছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি দুধকুমার নদীর ভাঙ্গন থেকে মাত্র ২০ফুট দূরে রয়েছে। বিদ্যালয়ের আসবাব পত্র সবকিছুই জরাজীর্ণ অবস্থায় তালা বদ্ধ হয়ে পড়েছে। কোন শিক্ষকের নেই খোঁজ।

ওই এলাকার বাসিন্দা জলিল মিয়া বলেন, এ স্কুল ভেঙ্গে গেলে হামার সন্তানের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে। সরকার যদি দ্রুত ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা না নেয় তাহলে স্কুলও ভাঙবে পাশাপাশি গ্রামটাও বিলীন হবে।

নাগেশ্বরী উপজেলার ১১৮বছর বয়সের রঘুরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও গঙ্গাধর নদীর ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। শতবর্ষের উপর এই বিদ্যালয় থেকে নদী মাত্র ৫০মিটার দূরে রয়েছে। দ্রুত ভাঙ্গন রোধে কার্যকরি পদক্ষেপ না নিলে বিদ্যালয়টি যেন কোন মূহুর্তে বিলিন হবার শঙ্কা রয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লস্কর আলীর বলেন, স্কুল ঘর ভেঙ্গে সরঞ্জামাদি বাড়ির আঙ্গিনা এবং রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত স্কুল পূর্ণ নির্মাণের জায়গা না পাওয়ায় স্কুলটি নির্মাণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভের খাস ইউপি চেয়ারম্যান আকমল হোসেন বলেন, প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিলিন হয়ে গেলে সন্তানদের পড়ালেখা বন্ধ হবে এবং অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার শঙ্কা করেন তিনি।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শহিদুল ইসলাম জানান, জেলায় করোনাকালীন সময়ে ১৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙ্গনের মুখে ১৫টি এবং বন্যাকবলিত আছে ৪৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

অথচ চলতি বছর উলিপুর উপজেলায় ৩টি, রৌমারীতে ৪টি ও রাজারহটে ১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। কুড়িগ্রামে তীব্র নদীর ভাঙ্গনে বিলিন হচ্ছে একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। হুমকির মুখে রয়েছে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

ভাঙনে বিলীন স্কুল গুলো পুণর্নিমানের জন্য স্থানীয় ভাবে জায়গা নিধার্রণের নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি ভাঙনের মুখ পড়া স্কুল গুলো রক্ষার জন্য জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলীকে চিঠি দেয়া হয়েছে। আর স্কুল খুলে দেয়ার ব্যাপারে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক মোজাহেদুল ইসলাম কুড়িগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলের বিদ্যালয়ের বাস্তব অবস্থা সরেজমিন পরিদর্শনে আসছেন।

এছাড়া শিক্ষা বিভাগের সকল কর্মকর্তাকে কমপক্ষে ৫টি করে বিদ্যালয় পরিদর্শনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামছুল আলম বলেন, চলতি বন্যায় এখন পর্যন্ত মাধ্যমিক ও মাদরাসা বিলিন হয়নি এবং নদী ভাঙ্গনের ঝুঁকিতেও নেই। জেলার মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ মিলে ৩৭৪টি এবং ২২২টি মাদরাসা প্রস্তুত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য।

(পিএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test