E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অবশেষে দেবহাটার খলিশাখালির হাজার বিঘা সরকারি খাস জমি দখলে নিয়েছে ভূমিহীনরা

২০২১ সেপ্টেম্বর ১২ ১৮:২৪:০৪
অবশেষে দেবহাটার খলিশাখালির হাজার বিঘা সরকারি খাস জমি দখলে নিয়েছে ভূমিহীনরা

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার দেবহাটার খলিশাখালিতে ভূমিদস্যুদের হটিয়ে এক হাজার বিঘা বিলান জমি দখল নিয়েছে ভূমিহীনরা। খলিশাখালির বিস্তীর্ণ এসব জমি সরকারি সম্পত্তি উল্লেখ করে গত কয়েক যুগ ধরে তা বন্দোবস্তের দাবি করে আসছিল ভূমিহীনরা। শনিবার ভোররাতে খলিশাখালি সহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের অন্তত ৫শ পরিবার শান্তিপূর্ণ ভাবে ওই জমির দখল নেন।

এদিকে খাস জমি জবরদখলে রাখা ভূমিদস্যুরা শনিবার বিকেল সাড়ে ৬টার দিকে দেবহাটার সখীপুরে একটি বাড়িতে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে আলোচনায় বসেছেন।

খলিশখালি ভূমিহীন সমিতির সহসভাপতি গোলাপ ঢালী ও সদস্য রবিউল ইসলাম জানান, ১৯৪৭ সালের দিকে জমির সিএস মালিক ইশ্বরচন্দ্র ঘোষের ছেলে চন্ডীচরণ ঘোষ খলিশাখালির এক হাজার ৩২০ বিঘা জমি ফেলে রেখে চিরদিনের জন্য ভারতে চলে যান। পরবর্তীতে ওই সম্পত্তি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। তবে তথ্য গোপন রেখে দেবহাটার শিমুলিয়া এলাকার কাজী গোলাম ওয়ারেশের বাবা মালেক কাজী ও তাদের সহযোগীরা জাল জালিয়াতির মাধ্যমে সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে কাল্পনিক কাগজপত্র তৈরি করে আদালতের আশ্রয় নিয়ে কয়েকজন মিলে ওই জমি জবরদখল করে মাছ চাষ করে আসছেন।

২০১৭ সালে পারুলিয়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী সুধীন কুমার সরকার তার এক লিখিত প্রতিবেদনে খলিশাখালির অবৈধ দখলদার হিসেবে সাতক্ষীরার কামালনগরের শামছুর রহমানের ছেলে বশির আহম্মদ (৮০ বিঘা), দেবহাটার শিমুলিয়ার আব্দুল মালেক ওরফে মালেক কাজীর দুই ছেলে কাজী গোলাম ওয়ারেশ ও কাজী আব্দুর রফিক (৩০০ বিঘা), তার তিন মেয়ে কামরুন্নাহার, বদরুন্নাহার ও আদরুন্নাহার (১৫০ বিঘা), সখিপুরের আব্দুল করিমের ছেলে আইডিয়ালের পরিচালক নজরুল ইসলাম ও মিনহাজ উদ্দীন কারিকরের ছেলে আব্দুল মজিদ (১২০ বিঘা), সখিপুরের হাজী কেয়ামদ্দীনের ছেলে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম ওরফে সালামতুল্যাহ গাজী (১২০ বিঘা), একই গ্রামের আব্দুল মজিদ, আব্দুল আজিজ এবং আব্দুল গফফার (৪০ বিঘা), সখিপুরের ফজর আলী গাজীর ছেলে আনছার আলী ও মোকছেদ আলী (৪০ বিঘা), মান্দার বকস এর ছেলে আব্দুল জব্বার (৪০ বিঘা), আবুহারের ছেলে শফিকুল ইসলাম (৪০ বিঘা), শিমুলিয়ার হায়াত আলীর ছেলে মনিরুজ্জামান গাজী (১০০ বিঘা), পারুলিয়ার বাদশা মল্লিকের ছেলে ফরিদ হোসেন (২৪ বিঘা), খলিশাখালির মতিয়ার সরদারের ছেলে মোকছেদ সরদার (২০ বিঘা), গাজীরহাটের আনছার আলী আমিন’র ছেলে আব্দুল মজিদ (২০ বিঘা), সখিপুরের রাজাউল্লাহ সরদারের তিন ছেলে শফিকুল, এবাদুল ও আলম (৪০ বিঘা), পারুলিয়া সেকেন্দ্রার নেছার আলীর তিন ছেলে মৃত জামাত আলী, আমানাত আলী, জাহান আলী, ভাদড়ার আজিম সরদার ওরফে আজিজুর রহমানের ছেলে আব্দুল জলিল দারোগা (৯০ বিঘা), খেজুর বাড়িয়ার খলিলুর রহমান মিস্ত্রির ছেলে আনারুল ইসলাম (৯ বিঘা), সখিপুরের মৃত রহমতুল্যাহ গাজীর ছেলে আব্দুস সালেক (১৫ বিঘা), খলিশাখালির হাজের সরদারের ছেলে বাবু (১০ বিঘা), একই গ্রামের জামাত আলীর ছেলে নুর ইসলাম (১০ বিঘা), বাছতুল্যাহ মোড়লের ছেলে আব্দুর রহিম মোড়ল (৫ বিঘা), আছিমদ্দিন গাজীর ছেলে বাবু ও খোকন (১০ বিঘা) এবং সিরাজুলের ছেলে খোকন (৫ বিঘা) জমি ভোগদখল করছে বলে উল্লেখ করেন।

২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি ওই সম্পত্তি সরকারি খাস জমি উল্লেখ করে সাতক্ষীরা জজকোর্টের সাবেক জিপি অ্যাড. গাজী লূৎফর রহমান আদালতে রিসিভার নিয়োগের আবেদন জানালে অ্যাড. বিকাশ কুমার কুণ্ডু চৌধুরী ও আশরাফুল আলম বাবুকে রিসিভার দেন আদালত। পরে এসব অবৈধ দখলদাররা রিসিভার বাতিলের জন্য দৌঁড়ঝাপ শুরু করলে উচ্চ আদালত রিসিভার আদেশ স্থগিত সহ নালিশী জমির নেচার এন্ড ফেচার এবং দখলের ওপর স্ট্যাটাসকো আদেশ দেন। এ বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে ২৫৬৮/২০১৭ লিভ টু আপিল দাখিল করলে বিচারপতি মোঃ ইম্মান আলী, বিচারপতি মীর্জা হুসেন হায়দার ও বিচারপতি আবু বক্কর ছিদ্দিক যৌথভাবে গত ৪ ফেব্র“য়ারী সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসককে ওই জমি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য আদেশ দেন। এরপর গত ১৩ এপ্রিল ওই এক হাজার ৩২০ বিঘা জমি ভূমিহীনদের নামে স্থায়ী বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্য রবিউল ইসলাম, গোলাপ ঢালী ও হাবিবুলÍাহ বাহার খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন।

এদিকে সরকারি খাস জমি ভূমিহীনদের দাবি করে শনিবার ভোরে দেবহাটার ন’পাড়া, পারলিয়া, নোড়ার চক , চারকুনি, ঢেবুখালি, বেজোরাটি, গাজীরহাট, বেদীশহর, কালীগঞ্জের তারালী, ইন্দ্রনগর, পাইকাড়া, নলতা, আশাশুনির বদরতলা, বসুখালি, শালখালিসহ বিভিন্ন এলাকার পাঁচ শতাধিক ভূমিহীন পরিবারে খলিষাখালির প্রায় এক হাজার বিঘা খাস জমি দখলে নেয়। দখলে নেতৃত্ব দেয় নোড়ার রবিউল ইসলাম, আনারুল ইসলাম, তার বাবা ইছহাক আলী, খোকা, বেজারাটির আবুল হোসেন, রফিকুল ইসলাম, ন’পার্ড়া অহিদুল ইসলাম।

খলিষাখালি ভুমিহীন সমিতির সহসভাপতি গোলাপ ঢালী বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি খাস জমি মুক্তিযোদ্ধা ও ভূমিহীনদের মধ্যে অগ্রধিকার ভিত্তিতে বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। অথচ ওই জমি গরীব ভূমিহীনরা না পেয়ে একদল ভূমিদস্যু কৌশলে দখল করে খাচ্ছেন। এটা মেনে নেওয়া যাবে না। তাই ভূমিদস্যুদের যে কোন ধরণের অপতৎপরতা রুখতে তারা সকলের সহযোগতিা কামনা করেন।

এ ব্যাপারে আইডিয়াল এর নির্বাহী পরিচালক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, তিনি ১২০ বিঘা জমি মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্র নিয়ে মাছ চাষ করে আসছেন। শুক্রবার রাতে জোরপূর্বক ভূমিহীনরা ওই জমি দখলে নিয়েছে।

এ ব্যাপারে দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সাহা বলেন, খলিশাখালিসহ আশপাশের এলাকায় পুলিশের নজরদারি রয়েছে। যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য সার্বিক বিষয় মনিটরিং করা হচ্ছে। তাছাড়া উভয় পক্ষকে আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বলা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান ওসি।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test