E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চরজালালপুর আশ্রয়ন প্রকল্পের ১০০ পরিবার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত

২০১৪ সেপ্টেম্বর ১১ ১৪:২৫:৩১
চরজালালপুর আশ্রয়ন প্রকল্পের ১০০ পরিবার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত

শরীয়তপুর  প্রতিনিধি : শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার আলাওলপুর ইউনিয়নের চরজালালপুর মৌজায় নির্মিত আশ্রয়ন প্রকল্পের এক শতটি হতদরিদ্র পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে। এক যুগ আগে নির্মাণ করা এই দরিদ্রাবাসের প্রায় ৭ শত জন বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ বঞ্চিত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় প্রায় সবকটি মৌলিক অধিকার থেকে। প্রকল্পের শতাধিক শিশুর শিক্ষা জীবন ব্যাহত হবার উপক্রম হয়েছে। চিকিৎসা সেবা পৌছায় না পরিবার গুলোর কাছে।

এক দিকে পদ্মা আরেক দিকে মেঘনা। পাশেই দূর্গম চরাঞ্চল জেলার গোসাইরহাট উপজেলার আলাওলপুর ইউনিয়নের চরজালালপুর গ্রামটি। এই গ্রামের দক্ষিনে বরিশালের হিজলা উপজেলা আর পূর্বে অবস্থিত চাঁদপুরের হাইমচর । কয়েকটি ইউনিয়নের নদী ভাঙ্গায় সর্বস্ব হারানো মানুষের জন্য ১৯৯৮ সালে এই মৌজার প্রায় ২০ একর খাস জমিতে নির্মান কাজ শুরু হয় চরজালালপুর আশ্রয়ন প্রকল্প। খাস ভূমির ৬ একর করে ১২ একর জমি থেকে প্রথমে মাটি তুলে খনন করা হয় দুইটি দীঘি। দীঘি দুইটির চার পাড়ে দশটি করে পরিবার থাকার উপযোগী করে নির্মান করা হয় একেকটি দৃষ্টি নন্দন ব্যারাক।

এভাবে দশটি ব্যারাকে ২০০০ সালে ঠাই করে দেয়া হয় একশটি পরিবারের। প্রতিটি পরিবারকে দেয়া হয় ৭ শতাংশ করে জমি । দুটি দীঘির মাঝ খানে নির্মান করা হয় একটি কমিউনিটি সেন্টার। যেখানে নিয়মিত বসার কথা অন্তত একজন চিকিৎসকের। সমবায় ভিত্তিতে দীঘিতে মাছ চাষ, চারপাশে সব্জি ও ফলের বাগান, গবাদী পশু ও হাঁস মুরগী পালন সহ বিভিন্ন আয় বর্ধক কর্মসূচি বাস্তবায়নের স্বপ্ন তুলে দেয়া হয় দরিদ্র মানুষ গুলোর দুই চোখে। কিন্তু তাদের হাতে দেয়া হয়না পর্যাপ্ত মূলধন। কিছুদিন সামান্য ঋণের ব্যবস্থা করা হলেও পরে আর খোঁজ রাখা হয়নি এ লোক গুলোর। দুই বছর পার না হতেই আবার অভাবের তাড়নায় পরতে হয় তাদের।
মাত্র ৩/৪ মাস কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসক যাতায়াত করলেও এর পরে আর দেখা মিলেনি কারুরই। এখন প্রতিটি ব্যারাকের প্রতিটি ঘরের টিনের চালা ও বেড়াগুলো ভেঙ্গে বসবাসের অযোগ্য হয়ে গেছে আবাসস্থল।

সামান্য বৃষ্টি হলেই ভেসে যায় ঘরগুলোর মেঝে। শিশুদের শিক্ষা দানের জন্য গ্রহন করা হযনি কোন ব্যবস্থা। সবগুলো পরিবারের লোকই এখন দিন মুজুরী কেটে জীবন চালাচ্ছে। বেশীরবাগ মানুষই নদীতে শিশু সন্তানদের নিয়ে মাছ শিকারের কাজে ব্যস্ত থাকে। নারীদের বেশীরভাগ ও কিছু পুরুষ খাটচে কৃষি শ্রম।

স্থানীয়রা মনে করছেন, সরকারি সহায়তা ও পরিচর্যার সুযোগ পেলে এই আশ্রয়ন প্রকল্পটি একটি সম্ভাবনাময় প্রকল্পে রুপান্তরিত হতে পারে।

আশ্রয়নের বাসিন্দা ৮৫ বছর বয়সী শরীয়ত নেছা বলেন, আমার চার কুলে কেউ নেই। আমি ভিক্ষা করে খাই। চেয়ারম্যান মেম্বাররা আমারে একটা বয়স্ক ভাতার কার্ডও দেয়না। বৃষ্টি নামলে ঘর থাকতে পারিনা। এক যুগ আগে ঘর বানাইছে, পাঁচ বছর না যাইতেই ঘররের সব টিন নষ্ট হইয়া গেছে। । এখন থাকতেও পারিনা খাওনও জোটেনা। বাচুঁম ক্যামনে জানিনা।

অপর বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমাদের প্রকল্পে দুইটি বড় বড় দীঘি আছে। বর্ষার সময় পানি হলেও শুষ্ক মৌসুমে দীঘিগুলো ভরাট হয়ে যায়। ২০১২ সাােল কয়েক লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল দীঘি খননের জন্য। ঠিক মত খনন করা হয়নি। আমাদের আর্থিক সহায়তা দিলে আমরা এই প্রকল্প থেকে অনেক আয় করতে পারতাম।

মুসলিমা খাতুন জানান, আমাদের ছেলে মেয়েদের পড়া লেখার কোন ভাল ব্যবস্থা নেই এখানে। অসুস্থ্য হলে ডাক্তার পাইনা। টয়লেট গুলি সব অকেজো হয়ে গেছে। আমাদের চেয়ে অনেক গবাদী পশুও বেশ ভালো ভাবে বাচে।

আলাওলপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বেপারী বলেন, প্রথম দিকে এই প্রকল্পের লোকদের স্বল্প সুদে কিছু ঋণ সুবিধা দিলেও এখন তা বন্ধ রয়েছে। এলাকায় কাজ কর্ম না থাকায় দরিদ্র মানুষগুলো আরো সমস্যায় পরেছে। আমি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে আশ্রয়ন প্রকল্পে যথাযথ সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করবো।

গোসাইরহাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাম্মাৎ কামরুন্নাহার বলেন, চরজালালপুর আশ্রয়ন প্রকল্পটি একটি সম্বাকনাময় প্রকল্প। সরকারি সকল দপ্তরের সহায়তা নিয়ে আমি প্রকল্পের দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াবো।

(কেএনআই/এএস/সেপ্টেস্বর ১১, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test