E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

উচ্চফলনশীল সুমিষ্ট লাল ও হলুদ পেঁপের জাত উদ্ভাবন

২০২১ সেপ্টেম্বর ২১ ১৯:০২:২৯
উচ্চফলনশীল সুমিষ্ট লাল ও হলুদ পেঁপের জাত উদ্ভাবন

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের গবেষক অধ্যাপক নাসরীন আক্তার আইভী সুমিষ্ট লাল ও হলুদ পেঁপের নতুন দুইটি জাত উদ্ভাবন করেছেন। 

মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতটির উদ্ভাবক অধ্যাপক নাসরীন আক্তার আইভী জানান, ফলন ও পুষ্টিমান বেশি হবে এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে পাঁচ বছর গবেষণার পর তিনি সুস্বাদু ফল ও সবজি পেঁপের এমন দেশীয় জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।

পেঁপের জাত দুইটি গাইনাডোইওসিয়াস ধরণের (স্ত্রী ও উভয়লিঙ্গ বিশিষ্ট গাছ থাকবে। প্রতিটি গাছেই ফল ধরবে। প্রতিটি গাছে ৫০-৬০ টি ফল হয়। স্ত্রী গাছের ফলের আকার নাশপাতি আকারের এবং গায়ে লম্বালম্বি দাগ আছে। ফলন হয় হেক্টর প্রতি ৬০-৭০ টন, এ জাতের পেঁপেতে পেপেইন নিঃসরণ বেশি হয়। পাকা ফলের মিষ্টতা বেশি, পাকা ফলের ভিতরের রং একটিতে গাঢ় হলুদ থেকে গাঢ় কমলা রঙের, অপরটিতে লাল রংয়ের। পাকা পেঁপেতে যেমন প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও সি থাকে তেমনি কাঁচা পেঁপেতে রয়েছে পেপেইন নামক এক প্রকার হজমকারী দ্রব্য। যা ডায়াবেটিস রোগীর জন্যও খুব উপকারী। কাঁচা পেপে সবজি হিসাবেও খাওয়া যায়।

এ জাতের বীজ জানুয়ারি মাসে বপন করা হয় এবং মার্চে উৎপাদিত চারা রোপনের উত্তম সময়। চারা লাগানোর ৬০/৭০ দিনের মধ্যে ফল ধরে। এ জাতের পেঁপেতে রোগ প্রতিরোক্ষমতা অনেক বেশি।

পেঁপে বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান ফল, যা সবজি হিসেবেও খাওয়া যায় এবং সারা বছরই পাওয়া যায়। পেঁপের পুষ্টিমাণ অনেক বেশি হওয়ায় মানব দেহের রোগ প্রতিরোধে এটি ভালো ভূমিকা রাখে। এছাড়াও পেঁপে আরো নানা গুণের অধিকারী। কথায় আছে 'দৈনিক একটি করে পেঁপে খাও, ডাক্তার বৈদ্য দূরে তাড়াও।

তিনি আরো বলেন, পেঁপে একটি পরপরাগায়িত ফল। পেঁপের ৩২ লিঙ্গের গাছ থাকলেও পুরুষ, স্ত্রী ও উভয় লিঙ্গের গাছই পাওয়া যায়। এদের মধ্যে আমরা শুধু স্ত্রী ও উভয় লিঙ্গের পেঁপের জাত উন্নয়নে কাজ করছি। স্ত্রী ও উভয় লিঙ্গের পেঁপে গাছে ফল ধরে। উভয়লিঙ্গ গাছের ফল লম্বাটে হয়। প্রতিটি গাছে ৫০-৬০ টি ফল হয় এবং প্রতিটি পেঁপের ওজন হয় ১.৫-৩.৫ কেজি। বাণিজ্যিকভাবে চাষের ক্ষেত্রে আমাদের দেশের চাষীগণ পরপরাগায়িত বীজ ব্যবহার করেন। সাধারণ পেঁপের বীজ থেকে উৎপাদিত চারার ৫০ ভাগই পুরুষ গাছ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা থেকে কোন ফল পাওয়া যায় না। তাই অধিক ফলবান গাছ পাওয়ার আশায় পেঁপে চাষীগণ এক্ষেত্রে প্রতি মাদায় বা ভিটে ৩/৪টি চারা একত্রে রোপণ করে থাকেন। ফুল আসার পর পুরুষ গাছ কেটে বাদ দেয়ার পরে জমিতে রাখা হয় শুধু স্ত্রী ও উভয় লিঙ্গের গাছ। পুরুষ গাছ মটি থেকে পুষ্টি ও সার গ্রহণ করায় অন্য গাছেও সার-পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়। এতে একদিকে ফলন যেমন অনেক কমে যায় তেমনি উৎপাদন ব্যয়ও বেড়ে যায়। চাষীগণ যাতে প্রতিটি মাদায় ১টি মাত্র চারা রোপণ করে রোপণ সব চারাতেই ফল পান এবং ফলন ও পুষ্টিমান বেশি হয়- এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তার নেতৃত্বে টানা ৫ বছর গবেষণা চালিয়ে সুস্বাদু ফল ও সবজি পেঁপের এমন দেশীয় জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।

দেশের ক্রমাগত কৃষি জমি হ্রাস ও জনসংখ্যার বৃদ্ধিতে ফল ও সবজি চাহিদা পূরণের বিষয়টি বিবেচনায় এনে ২০০৮ সালে পেঁপে গবেষণার কাজ হাতে নেওয়া হয়। দেশীয় পেঁপের কৌলিসম্পদ ব্যবহার করে নতুন জাত উদ্ভাবনের কাজ শুরু করা হয়। দেশীয় পেঁপের পরপরাগায়িত বীজ হতে চারা উৎপাদন করে প্রজনন ও জেনেটিক পিওরিফিকেশন এর মাধ্যমে। গাইনোডোইওসিয়াস ধরণের কয়েকটি উন্নত লাইন বাছাই করা হয়। বাছাইকৃত লাইনগুলো হতে শতভাগ ফলবান পেঁপে গাছ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। চীন, অস্ট্রেলিয়া ও তাইওয়ানে এ ধরণের গবেষণা হয়েছে এবং সেই গবেষণার ফল কাজে লাগিয়ে চাষাবাদও হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়া জানান, পেঁপে হলো আমাদের একটি খুব প্রিয় ফল। এর পুষ্টিমান খাদ্য নিরাপত্তায় বিশেষ ভ’মিকা রাখে। প্রতিটি পেঁপে গাছে যাতে ফলন হয়, সে ব্যাপারে গবেষকরা কাজ করছেন। ইতিমধ্যে কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ থেকে বিইউ পেঁপে-১ ও বিইউ পেঁপে-২ নামে দুইটি পেঁপের জাত ছাড়করা হয়েছে। পরবর্তীতে উক্ত জাতগুলোর গুনগতমান ঠিক রেখে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে জেনেটিক পিওরিফিকেশন করে সুপ্রীম সীড কোম্পানীর মাধ্যমে বীজ উৎপাদন করে কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য দেয়া হয়। বিইউ পেঁপে-১ জাতটি বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের ব্যাপারে কৃষক পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে।

সেপ্টেম্বর অক্টোবরে যখন দেশে ফল কম থাকে তখন উফশী ও প্রচুর মিষ্ট জাতের এ পেঁপে মানুষের ফলের যোগান দেয়। এ পেঁপে কৃষি অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে এবং আমাদের দেহের পুষ্টি তথা স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও পুষ্টিতে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। পুষ্টি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমাদের পেঁপের এ জাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। কৃষকরাও স্বাবলম্বী হচ্ছেন। পেঁপে ছাড়াও এ বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা লেখাপড়া করানোর পাশাপাশি এ যাবত ৬০টি বিভিন্ন শ্যস্যের জাত উদ্ভাবন করেছেন। তিনি গবেষণার ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়ার পাশপাশি লেখাপড়ার মান উন্নয়নের সার্বক্ষণিক তত্ববধান করছেন বলেন উপাচার্য।

(এস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test