E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

কবি আজিজুর রহমানের ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

২০১৪ সেপ্টেম্বর ১২ ১৫:৪১:৩৩
কবি আজিজুর রহমানের ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : আজ ১২ সেপ্টেম্বর কবি আজিজুর রহমানের ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে কুষ্টিয়ার কোথাও কোন ধরনের কর্মসূচী গ্রহন করা হয়নি। এদেশের সর্বোচ্চ সম্মান ‘‘একুশ পদক’’ প্রাপ্ত কবি আজিজুর রহমানের মৃত্যুর ৩৬ বছর পার হলেও সরকারিভাবে তাঁর স্মৃতি সংরক্ষন ও স্মৃতি চারণে নেওয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপ।

অবহেলিত অবস্থায় পরে আছে তাঁর বাস্তভিটা ও সমাহিত চত্বর। একপর্যায়ে নিশ্ছিন্ন হতে বসেছে তাঁর সমাধিস্থলসহ সকল স্মৃতিময় স্থান ও কর্মকান্ড। কবি আজিজুর রহমান প্রায় ৩ হাজারের অধিক গান লিখেছেন।

তাঁর জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, (ভবের নাট্যশালায় মানুষ চেনা দায়রে), (কারো মনে তুমি দিওনা আঘাত), (সে আঘাত লাগে কাবার ঘরে), (আকাশের ঐ মিটি মিটি তারার সাথে কইবো কথা), (নাই বা তুমি এলে। পৃথিবীর এই পান্থশালায়, হায় পথ ভোলা কবি), (আমি রুপনগরের রাজকন্যা রুপের জাদু এনেছি), (বুঝি না মন যে দোলে বাশির ও সুরে), (দেখ ভেবে তুই মন, আপন চেয়ে পর ভালো), (পলাশ ঢাকা ককিল ডাকা আমারই দেশ ভাইরে) ইত্যাদি।

অথচ এই জনপ্রিয় গান গুলো আজ সংরক্ষেনের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই কবির গানগুলো সংরক্ষেনের উদ্যোগ নেয়ার জন্য এবং প্রতিবছর সরকারিভাবে জেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে কবি আজিজুর রহমানের জন্ম ও মৃত্যু দিবস পালনের জোর দাবী জানান এলাকাবাসী।

উল্লেখ্য, একুশে পদকধারী কবি, গীতিকার ও বেতার ব্যক্তিত্ব আজিজুর রহমান ১৯১৪ সালের ১৮ অক্টোবর কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর গ্রামের জমিদার বংশে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম-মরহুম বশির উদ্দিন প্রামানিক, মাতার নাম- সবুরুননেছা। গড়াই নদীর নির্সগ সৌর্ন্দয্য তাঁকে সব সময় মোহিত করে রাখত। ১২ বছর বয়সে কবি ১৯২৭ সালে পিতা হারা হন। উচ্চশিক্ষা লাভের ভাগ্য না থাকলেও প্রবল ইচ্ছা ও অনুসন্ধিৎসার ফলে বহু বিষয়ক পুস্তকাদি স্বগৃহে পাঠ করে তিনি একজন স্বশিক্ষিত ব্যক্তিতে পরিনত হন। সাহিত্য চর্চা শুরুর আগে নাটকের অভিনয়ে তাঁর উৎসাহ ছিল বেশী। তিনি পুরাতন অভিনেতাদের নিয়ে গড়ে তোলেন একটি নাট্য দল। সেই নাট্য দলটি অভিনয় করতেন শিলাইদহ এর ঠাকুর বাড়িতে। এই কাজের জন্য সে সময় কুষ্টিয়ার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তাঁর সুনাম ও খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। সে কালের বিশিষ্ট অভিনেতা ধীরেন দত্ত, উপেশ ঠাকুরসহ বিভিন্ন নামি দামি অভিনেতারা অংশগ্রহন করতেন তাঁর নাট্য দলে। সমাজ সেবায় কবি ছিলেন একজন নিবেদিত প্রাণ। হরিপুর গ্রামে গড়ে তোলেন চাঁদ স্মৃতি পাঠাগার। এটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি পাঠাগার ছিল। দুর দুরান্ত থেকে মানুষ বই এর খোঁজে আসতেন এই পাঠাগারে। তাঁর সাংগঠনিক ক্ষমতা ছিল প্রবল। বৈবাহিক জীবন-১৭ বছর বয়সে কবি ১৯৩১ সালে তিনি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার ফুলহরি গ্রামের এজহার শিকদারের কন্যা ফজিলাতুননেছাকে বিয়ে করেন।

বিভিন্ন সময়ে তিনি বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদে থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরমধ্যে-১৯৪৫ সালে তিনি কুষ্টিয়া ফুড কমিটির সেক্রেটারী নিযুক্ত হন। ১৯৫০ সালে তিনি হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ( প্রত্যক্ষ ভোটে) নির্বাচিত হন। প্রতিভা বিকাশের জন্য ১৯৫৪ সালে কবি ঢাকায় চলে যান এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ঢাকার মোহম্মদপুরের একটি সরকারী বাড়িতে বসবাস করতেন। সে সময় ঢাকায় গিয়ে তিনি কবি ফররুক আহমেদ এর সহায়তায় বিভিন্ন শিল্পী, কবি ও সাহিত্যিকদের সাথে পরিচিত হন। এসময় কবি ফররুক আহমেদ তাঁকে ঢাকা বেতারে নিয়ে যান। ১৯৫৪ সালে কবি আজিজুর রহমান ঢাকা বেতারে গীতিকার হিসেবে অনুমোদন পান। বেতারের সাথে যোগাযোগ কবি আজিজুর রহমানের সাহিত্যিক জীবনের এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। কবি আজিজুর রহমান কবিতা দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও গান রচনার মধ্যে তাঁর প্রতিভার পূর্ণ প্রকাশ ঘটে। তিনি প্রায় ৩ হাজার গান লিখেছেন।
যা আজও আমাদের দেশের মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। অসুস্থ্য হয়ে পড়ায় ১৯৭৮ সালের পর কবির হাতে তেমন আর কলম ওঠেনি। একাকি বিছানায় শুয়ে দিন কেটেছে তার। সে সময় তিনি বিছানায় শুয়ে-শুয়ে লিখেছিলেন ‘‘পৃথিবীর এই পান্থশালায়, হায় পথ ভোলা কবি, জলের লেখায় বালুকা বেলায়, মিছে একে গেলে ছবি এটাই ছিল কবির শেষ লেখা গান। অর্থাভাবে চিকিৎসাও তার ভাগ্যে জোটেনি।
১৯৭৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর কবি আজিজুর রহমান গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সে সময় তাঁকে ভর্তি করা হয় তৎকালীন ঢাকার পিজি হসপিটালে। সেখানে চিকিৎসার মাত্র ৩ দিনের মধ্যে ১২ সেপ্টেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আমাদের প্রিয় কবি আজিজুর রহমান। মৃত্যুকালে তিনি ৩ ছেলে-মৃত ফজলুর রহমান মনি, মুহাম্মদ শামছুর রহমান শামু ও সহিদুর রহমান বাচ্চু এবং কন্যা রওশন আরা বুড়ি, হোসনে আরা টুকু, আক্তার আরা বেবী, নাজমা রহমান বেলী ও ডালু বেগকে রেখে যান। কবির জীবন দর্শায় তেমন কোন সম্মাননা না পেলেও ১৯৭৯ সালে মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় সম্মানঃ ’একুশে পদক’-এ ভুষিত হন।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই কবির মৃত্যুবার্ষিকীতেও কোথাও তেমন কোন কর্মসূচী চোখে পড়ে না। এলাকাবাসীর দাবী প্রতি বছর সরকারিভাবে কবি আজিজুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচী পালন করা প্রয়োজন।

(কেকে/এটিআর/সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test