E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গ্রাম পুলিশ ও সমাজসেবা অফিসের পিয়নের প্রতারণার ফাঁদে নিঃস্ব শৈলকূপার মানুষ!

২০২১ অক্টোবর ০৭ ১৮:১২:৪৯
গ্রাম পুলিশ ও সমাজসেবা অফিসের পিয়নের প্রতারণার ফাঁদে নিঃস্ব শৈলকূপার মানুষ!

অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : দারিদ্র বিমচনে ক্ষদ্রঋণ, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বয়স্ক ভাতা ও মাসিক চালের কার্ড করে দেবার নামে শৈলকূপায় শ্রমিক শ্রেনীর নারীদের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এক গ্রাম পুলিশ ও সমাজ সেবা অফিসের পিয়ন। তাদের প্রতারণার ফাঁদে অনেকেই এখন নিঃস্ব। টাকা উদ্ধারের দাবিতে তারা এখানে ওখানে ধর্না দিচ্ছে। 

অভিযোগ উঠেছে ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার আবাইপুর ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ মিজানুর রহমান ও শৈলকূপা সমাজ সেবা কার্যালয়ের পিয়ন আবুল বাশার এই প্রতারণামূলক কাজের হোতা। তারা ভাতার কার্ড ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদানের নামে এই টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গ্রাম পুলিশ মিজানুর রহমান হাটফাজিলপুর গ্রামের সোনা মন্ডলের ছেলে ও বশির উদ্দিন শৈলকূপা সমাজসেবা কার্যালয়ের পিয়ন।

শৈলকূপা পৌর এলাকার হাজামপাড়া গ্রামের আব্দুর রশীদের স্ত্রী ভানু খাতুন অভিযোগ করেন, গত এক বছর আগে দেখা হয় তার পিতা গ্রাম হাটফাজিলপুর গ্রামের গ্রাম পুলিশ মিজানুরের সাথে। আমাকে ভাই পরিচয় দেয়। তখন সে আমাকে দারিদ্র বিমচনের লোন এবং বয়স্ক ভাতাসহ মাসিক চাল পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবে বলে জানায়। এজন্য অফিসে দেওয়ার জন্য তিনি তার কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা নেন। কিন্ত পরে বুঝতে পারি প্রতারক। টাকা ফেরত চাইলে সে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করতে থাকে। তার সাথে সমাজসেবা অফিসের বাশার নামের একব্যক্তি জড়িত বলে তিনি অভিযোগ করেন।

পৌর এলাকার হাবিবপুর গ্রামের রইচ মোল্যার স্ত্রী পারভীন খাতুন জানান, তার নানা বাড়ির গ্রামের মামা পরিচয়ে গ্রাম পুলিশ মিজানুর রহমান তার মাধ্যমে চাতালের নারী শ্রমিকদের বিভিন্ন ভাতার কার্ড দেওয়ার জন্য ৬ জনের কাছ থেকে ৩৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। কার্ড না হওয়ায় মিজানুরের কাছে টাকা চাইলে সে ভয়ভীতি দেখায়।

কবিরপুর গ্রামের বিল্লাল হোসেনের স্ত্রী হালিমা খাতুন জানান, গ্রাম পুলিশ মিজানুর তাকে প্রতিবন্ধী কার্ড দেওয়ার প্রলভন দেখিয়ে ৬ হাজার টাকা নেয়। পরে সেই টাকা ফেরত চাইলে সে বলে সমাজ সেবা অফিসের আবুল বাসারের দেওয়া হয়েছে কার্ড হয়ে যাবে। কিন্ত এখন কার্ডও নেই টাকাও নেই।

হরিদেবপুর গ্রামের দবির উদ্দিনের স্ত্রী চায়না খাতুন বলেন, গ্রাম পুলিশ মিজানুর তাকে ১ লাখ টাকার সরকারী লোন দেওয়ার নামে জামানত হিসাবে ২০ হাজার টাকা নিয়ে হারিয়ে যায়।

ছোট ধলহরাচন্দ্র গ্রামের জাবেদ আলীর ছেলে আকাশ রহমান জানান, গ্রাম পুলিশ মিজানুর ও সমাজ সেবা অফিসের আবুল বাশার তার স্ত্রীর গর্ভবতী ভাতার জন্য ৬ হাজার ও লোন দেওয়ার জন্য ১২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এক বছর অপেক্ষার পর এখন টাকা চাইলে সে ভয়ভীতি দেখায়।

বিভিন্ন প্রকার সরকারী ভাতার কার্ড দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ার ঘটনায় ১১ নং আবাইপুর ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ মিজানুর রহমান বলেন, তিনি বেশ কিছু নারীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে সমাজসেবা অফিসের পিয়ন আবুল বাশারকে দেন। কিন্ত পরে আবুল বাশার অস্বীকার করায় তিনি আর টাকা ফেরত পাননি। নিজের বেতনের টাকা থেকে পাওনাদারদের কিছু অর্থ পরিশোধ করছেন। তবে কোন পাওনাদারকে তিনি ভয় ভীতি দেখান নি বলে জানান।

এ ঘটনায় আবাইপুর ইউনিয়নের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য মোছা ভানু বেগম বলেন, গ্রাম পুলিশ মিজানুরের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ তারাও শুনেছেন।

শৈলকূপা সমাজসেবা কার্যালয়ের পিয়ন আবুল বাসার বলেন, তিনি ভাতার কার্ড দেওয়ার নামে গ্রাম পুলিশ মিজানুরের কাছ থেকে কোন অর্থ নেননি। তিনি মিজানুরের কাছ থেকে কিছু অর্থ হাওলাত নেন। যা পরে ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে জানান।

শৈলকূপা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাসুদ আহম্মেদ জানান, গত ৭/৮ মাস আগে আবুল বাসারের বিরুদ্ধে তিনি এধরনের কথাশুনে ছিলেন। তাকে ডেকে সতর্ক করা হয় এবং বলা হয় কোন লিখিত অভিযোগ এলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শৈলকূপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কোন ভূক্তভোগী লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(একে/এসপি/অক্টোবর ০৭, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test