E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দুর্গাপুর ইউনিয়নবাসী এক পরিবারের দলীয় শাসন থেকে মুক্তি চায়

২০২১ অক্টোবর ১৬ ১২:৫৪:০৭
দুর্গাপুর ইউনিয়নবাসী এক পরিবারের দলীয় শাসন থেকে মুক্তি চায়

মোঃ সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ও এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠেছে। তাদের ক্ষমতার দাপটে এলাকার চা-দোকানী থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা পর্যন্ত অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে। স্থানীয় আ’লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা ইউনিয়ন কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের জন্য জেলা আ’লীগের কাছে লিখিত আবেদন করেছে। আবেদন সূত্রে জানা গেছে, দুর্গাপুর ইউনিয়নের পটল গ্রামের ওসমান গনির পরিবারে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ায় ক্ষমতার দাপটে এলাকায় নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়াচ্ছে।

সূত্রমতে, ওসমান গনির এক ছেলে আবু বকর সিদ্দিকী ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি, তার ভাই আনোয়ার হোসেন প্রামাণিক কালিহাতী উপজেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌকা মনোনীত দুর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান। তাদের ভাতিজা শহিদুল ইসলাম ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি, অপর ভাতিজা হাসান মাহমুদ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। জেলা আ’লীগের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগে প্রকাশ, একই পরিবারের আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের তিনজন সভাপতি এবং একজন ইউপি চেয়ারম্যান থাকায় ওই পরিবারটি ক্ষমতার দাপটে এলাকায় নানা অনৈতিক কর্মকান্ড করে থাকে। তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্থানীয় আ’লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদেরকে কোণঠাসা করে রেখেছে। তাদের কথামতো না চললে কিংবা তাদের কোন অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করলে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় অভিযুক্ত করে হয়রানী করা হয়। এ বিষয়ে একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

সূত্রমতে, দুর্গাপুর ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিকী ইতোপূর্বে ইউনিয়ন বিএনপি ও জাতীয়পার্টির সভাপতি ছিলেন। তিনি আওয়ামীলীগে একজন অনুপ্রবেশকারী। তার ভাই ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন প্রামাণিক প্রকাশ্যে মদ্যপান করে পটল বাজারের এক চা-দোকানীকে মারপিট করেছেন এবং তার শরীরে গরম পানি ঢেলে দিয়ে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন। একই পরিবারে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের তিন জন সভাপতি ও দলীয় প্রতীকে (নৌকা) নির্বাচিত চেয়ারম্যান থাকায় তারা ব্যাপক ক্ষমতাশালী হওয়ায় যাচ্ছেতাই করছে।সরেজমিনে স্থানীয়রা জানায়, তাদের অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ইতোমধ্যে স্থানীয় আবু তালহা, জুবায়ের, আব্দুল মজিদ, আইয়ুব আলী, নাজমুল হাসান, মানিক বসাক, আব্দুল হাই সহ অর্ধশত ব্যক্তি তাদের বাহামভুক্ত লোকদের হাতে আহত ও লাঞ্ছিত হয়েছেন। ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন প্রামাণিকের নানা অনিয়মের বিষয়ে সংবাদ প্রচার করায় সম্প্রতি চ্যানেল এস এর কালিহাতী প্রতিনিধি আব্বাস আলীর উপর হামলা করা হয়। ওই ঘটনার প্রতিবাদে এলাকাবাসী স্থানীয় পর্যায়ে মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করে।

এ বিষয়ে মামলা দায়ের করেও তাদের ভয়ে আব্বাস আলী পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এ বিষয়ে দুর্গাপুর ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিকী জানান, তাদের বংশ অনেক বড়। নেতৃত্ব আসে জনসমর্থনের উপর ভিত্তি করে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সমর্থন নিয়েই তারা সভাপতি হয়েছেন। যারা নানা অভিযোগ করে তারা প্রতিক্রিয়াশীল এবং জনসমর্থন শূণ্য ব্যক্তি। ইউনিয়ন সভাপতি হিসেবে তাদের সম্পর্কে কোন মন্তব্য করা উচিত হবেনা।দুর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন প্রামাণিক জানান, তিনি জেলার বাইরে রয়েছেন। সম্পূর্ণ নিয়মনীতি মেনে তিনি পরিষদ পরিচালনা করে থাকেন। এলাকার কারো সাথে তার কোন বিরোধ নেই। গণমাধ্যমকর্মী আব্বাস আলী এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ বিষয়ে জনসাধারণের সাথে প্রতারণা করছিলেন। তিনি বাঁধা দেওয়ায় উভয়পক্ষের মধ্যে সাময়িকভাবে ভুলবোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুল আলম জানান, দুর্গাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আবু বকর ও তার ভাইদের নানা অপকর্মে এলাকাবাসী মারাত্মকভাবে অতিষ্ঠ। পটলবাজার কেন্দ্রীক সকল সংগঠনকে তারা নিজেদের আত্মীয়দের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। তাদের অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে গেলেই শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও মিথ্যা মামলার শিকার হতে হয়। এর শ’ শ’ সাক্ষীপ্রমাণ আছে। দুর্গাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের বড় ভাই আবু শামা (মেম্বার) একটি প্রকল্পের ১০০ বস্তা সরকারি চাল আত্মসাতের অভিযোগে জেল-হাজত খেটেছে (মামলা চলমান)। তারা এলাকার মানুষকে নিজেদের আজ্ঞাবহ বানাতে চায়। ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পরিষদের ৯ জন ইউপি সদস্য নানা অভিযোগে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছিল। চেয়ারম্যানের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদে স্থানীয় পর্যায়ে মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে। এলাকাবাসী ওই এক পরিবারের দলীয় শাসন থেকে মুক্তি চায়।

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম খান জানান, এটি লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সাংগঠনিক অনিয়মের প্রমান পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ইতোমধ্যে দুর্গাপুর ইউনিয়নে ছাত্রলীগের সম্মেলনে সভাপতি পদ থেকে হাসান মাহমুদ ছিটকে পড়েছে।

(এসএমএল/এএস/অক্টোবর ১৬, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test