E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গোয়ালন্দে মহাসড়কে ট্রাক ওজন স্কেল দেড়মাস ধরে বিকল

ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে চরম যানজট, কমে গেছে রাজস্ব আদায়

২০২১ অক্টোবর ১৯ ১৭:৩১:০৮
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে চরম যানজট, কমে গেছে রাজস্ব আদায়

এম এ হীরা, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) : রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা কোর্ট চত্ত্বরের সামনে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে স্থাপিত বিআইডব্লিউটিসি’র ট্রাক ওজন স্কেল দেড়মাস ধরে বিকল থাকলেও মেরামতের কোন উদ্যোগ নেই। স্কেলটিতে ওজন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সরকারী রাজস্ব আদায় কম হলেও দেখার যেন কেউ নেই।

স্কেলে ওজন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় রাজস্ব আদায় কম হলেও চাঁদাবাজী ঠিকই আছে। এতে করে মহাসড়কে ঘন্টায় ঘন্টায় যানজটসহ নানা বিড়ম্বনায় পড়ছেন এ রুটে চলাচলরত যানবাহনের যাত্রী ও চালকরা। প্রতিদিনই ট্রাকের চাপ বেড়ে গেলে স্কেলের দুই পাশে যানবাহনের লম্বা সিরিয়াল সৃষ্টি হয়। এ সময় উভয় পাশে শত শত গাড়ী আটকা পড়ে যান জটের সৃষ্টি হয়। এতে করে পথচারী ও স্কেলের পাশে থাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী নেয়া আনা দুরহ হয়ে পড়ে।

২০১৪ সালে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে স্কেলটি স্থাপন করা হয়। দেশের দক্ষিনাঞ্চল থেকে আসা ঢাকাগামী অতিরিক্ত মালমাল বোঝাই ট্রাকগুলো ফেরিতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট পার হওয়ার সময় ওজন নিয়ন্ত্রনের জন্য এটি স্থাপন করা হয়। স্কেলটি স্থাপনের ফলে দৌলতিদিয়াঘাট বিআইডব্লিউটিসি’র প্রতিদিন প্রায় ১ লক্ষ টাকা সরকারী রাজস্ব বৃদ্ধি পায় বলে তৎকালীন সূত্রে জানা যায়। স্কেলে ওজন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় রাজস্ব আদায় আগের মতো হচ্ছে না। কিন্তু স্কেলটি স্থাপনে ত্রুটি থাকায় মাঝে মাঝেই বিকল হয়ে পড়ায় মেরামত করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে আসছে। এ ছাড়া অপরিকল্পিত ভাবে মহাসড়ক লাগুয়া স্থাপিত হওয়ায় সড়কে সব সময় যানজট লেগেই থাকে। এতে করে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে যাত্রী ও চালকরা।

বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃক স্কেলটি স্থাপনকাল থেকেই এখানে হাইওয়ে পুলিশ, আনসার, বিআইডব্লিউটিসি’র কর্মচারীরা কাজ করে আসছিল। কিছুদিন পর বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ টার্মিনাল চার্জ আদায়ের জন্য এখানে কাউন্টার স্থাপন করে কর্মচারী নিয়োগ করে। ট্রাক চালকদের অভিযোগ রয়েছে স্কেলে দায়িত্বরত সকল কর্মচারীরা মিলে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন কৌশলে চাঁদা আদায় করে থাকে। চালকরা প্রতিবাদ করেও কোন লাভ হয় না। উল্টো কখনও কখনও তারা মারপিটের শিকার হন।

স্কেলটি মাঝে মধ্যে বিকল হলেও দ্রুত মেরামত করা হয়। কখনও এক সপ্তাহের বেশি ওজন কার্যক্রম বন্ধ থাকেনি। এ যাত্রায় গত মাসের ১ তারিখ থেকে বিকল হওয়ার পর দেড় মাসের বেশী সময় অতিবাহিত হলেও মেরামতে কর্তৃপক্ষের কোন উদ্যোগ নেই। এতে করে ঘন্টায় ঘন্টায় মহাসড়কে চরম যানজট সৃষ্টি হয়ে যাত্রী ও চালকদের ভোগান্তীর শিকার হতে হচ্ছে। তাছাড়া স্কেলে চাঁদাবাজী অনৈতিক কর্মকান্ডও বেড়ে গেছে।

সরে জমিনে গিয়ে দেখা গেছে যে, স্কেলে ওজন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। মালভর্তি ট্রাক চালকদের চালান স্লিপ দেখে ওজন স্লিপ হাতে লিখে দেয়া হচ্ছে। এতে করে বোঝাই সব ট্রাকের অতিরিক্ত মাল নির্নয় করা সম্ভব হচ্ছে না। চালকদের ওজন স্লিপ দেখে ওজন স্লিপ দেয়ায় রাজস্ব আদায় কম হচ্ছে। এ সময় বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসি’র লোকজন একই রুমে বসে টার্মিনাল চার্জ আদায় করতে দেখা যায়। এ ব্যাপারে চালকরা অভিযোগ করে বলেন স্কেলে ওজন স্লিপ দেয়া হয় না অথচ স্কেল কর্মচারীদের চাঁদা ঠিকই দিতে হয়। চালকরা অভিযোগ করে বলেন, যেহেতু স্কেলে ওজন হয় না আমাদের চালান দেখে ওজন স্লিপ হাতে লিখে দেয়া হচ্ছে। তাহলে এখানে অযথা সিরিয়ালে দাড় করে রেখে সময় নষ্ট কোন মানে হয়। এ বিষয়ে একটি ঔষধ কোম্পানীর কাভার্ড ভ্যান চালক উচমান গণি আক্ষেপ করে বলেন, এই স্কেলে ওজন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এখানে চাঁদা দেয়া আর সময় নষ্ট করে যানজট বাঁধানো ছাড়া কোন কাজ নেই। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন টার্মিনাল চার্জ আদায় ও চালান অনুযায়ী ওজন দেখার কাজ দৌলতদিয়া ঘাটে করা যায়। স্কেলের অ্যাপ্রোস সড়ক ভাঙ্গাচোড়া মোটা রড দেখিয়ে তিনি আরো বলেন, অযথা স্কেলে গাড়ী তোলার সময় সড়কের খানাখন্দে পানি জমে থাকায় লোহার মোটা রড ঢুকে ট্রাকের চাকা ফুটো হলে ক্ষতি পূরন কে দেবে । একটা টায়ারের দাম ৩৫- ৪০ হাজার টাকা কে পুশিয়ে দেবে।

তবে যাত্রী, চালক ও অভিজ্ঞ মহল স্কেলটি মেরামত না হওয়া জন্য দৌলতদিয়া ঘাট বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষকে দায়ি করছেন। তাদের দাবি ইতিপূর্বে স্কেল বিকল হওয়ার আগেই বিআইডব্লিউটিসি’র কর্মকর্তা মেরামতের ব্যবস্থা করতেন। এখন বিকল হওয়ার দেড়মাস অতিবাহিত হলেও মেরামতের কোন উদ্যোগ নেই। স্থানীয় ভূক্তভোগীদের দাবি স্কেলটি হয়ত দ্রুত সংস্কার করা হোক নয়ত অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হোক।

এ বিষয়ে দৌলতদিয়াঘাট বিআইডব্লিউটিসি ম্যানেজার শিহাব উদ্দিন জানান মহাসড়কে যানজট নিরসনের লক্ষে স্কেলটি স্থানান্তর করে অনত্র স্থাপনের সম্ভাবনা আছে। তাই উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষ এই মহুর্তে হয়ত মেরামত কাজ করছে না। তবে কবে নাগাদ এই স্কেলের ব্যাপারে সিন্ধান্ত হবে তা তিনি বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্টেট মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের স্কেলটি সরিয়ে নেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। তবে যেহেতু যে কাজের জন্য স্কেলটি স্থাপন করা হয়েছিল সেকাজ এখন আর হচ্ছে না। তাই ট্রাকগুলো এখানে না থামিয়ে সরাসরি দৌলতদিয়া যেতে দেয়া উচিত। নইলে স্কেলে দায়িত্বরত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ শেষ হবে না।

(এইচ/এসপি/অক্টোবর ১৯, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test