E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আওয়ামী লীগে বিএনপি কাউয়া

আবারো চাম্পাফুল ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক পেতে মরিয়া মোজাম্মেল গাইন 

২০২১ অক্টোবর ২২ ১৮:৩৩:৫৫
আবারো চাম্পাফুল ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক পেতে মরিয়া মোজাম্মেল গাইন 

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার চাম্পাফুল ইউনিয়ন বিএনপির এক সময়কার দাপুটে সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মোজাজম্মেল হক গাইন এখন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। আগামী  ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য তৃতীয় দফা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তার মত হাইব্রীড নেতাকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার সূযোগ না দিয়ে দলীয় ত্যাগী নেতা চম্পাফুল ইউপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক পরান মণ্ডলকে নৌকা প্রতীকে  মনোনয়ন দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

কালিগঞ্জ থানাধীন চাম্পাফুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিদ্দিক বিশ্বাস, সহসভাপতি রেজাউল ইসলাম বিশ্বাস, নবীননগরের শাহীনুর রহমান ও চাঁদখালির শফিয়ার রহমান শফি ও মোহাম্মদ আলী শেখসহ কয়েকজন জানান, চাঁদখালি গ্রামের শওকত আলী গাইনের ছেলে ২০০৩ সালের ২০ জুলাই চাম্পাফুল ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি হিসেবে মোজম্মেল হক গাইনের নেতৃত্বে ১৫ সদস্য বিশিষ্ঠ ইউনিয়ন বিএনপি’র কমিটি গঠিত হয়। এরপর থেকে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি তথা আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠণের লোকজন নির্যাতিত হতে শুরু করে। নিজের প্রভাব খাটাতে ২০০৩ সালে তিনি বিএনপি সমর্থিত চার দলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী তরিকুল ইসলামকে বিএনপি’র মিটিং এ ফুলের তোড়া দিয়েছেন। আবার মান্নান ভুঁইয়া, মোশাররফ হোসেনসহ বিএনপি মন্ত্রীদের পিছনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন। হয়েছিলেন কালিগঞ্জ উপজেলা কৃষকদলের যুগ্ম আহবায়কও।

ভূমিহীনদের প্রতিহত করতে এক লাখ টাকার কথিত চাঁদার দাবিতে ২০০৫ সালের ১৮ জুলাই উজিরপুর বাজারের নিজ দলীয় অফিস ও ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী অফিসে টাঙানো তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি’র চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী তরিকুল ইসলামসহ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দেয়ালে টাঙানো ছবি ভাঙচুর ও পদদলিত করার মিথ্যা অভিযোগে মোজাম্মেল হক গাইন কালিগঞ্জ থানায় বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সহসভাপতি সাইফুল্লাহ লস্করসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা (জিআর-১০২/০৫) করেন। এ মামলায় সাইফুল্লাহ লস্কর, আলী নুর খান বাবুল, আশরাফ মীর, মোশাররফ হোসেনসহ পাঁচ জনের দু’ বছর করে কারাদণ্ড হয়। যা বর্তমানে আপিল মামলা হিসেবে যশোর জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এরপর থেকে তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মোজাম্মেল হক গাইন ও প্রয়াত ভূমিহীন নেতা আশরাফ মীর চাপের মুখে ২০১২ সালে নলতা আহছানিয়া মিশন ডিগ্রী কলেজ মাঠে তৎকালিন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডাঃ আ.ফ.ম রুহুল হকের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ২০০৯ সালের ৫ ডিসেম্বর কৃষক নেতা সাইফুল্লাহ লস্কর হত্যা মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে রিমাণ্ডে নেয়। ২০১৫ সালে কালিগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত শেখ ওয়াহেদুজ্জামানের সান্নিধ্যে এসে সাবেক সভাপতি মতিয়ার রহমানসহ ত্যাগী নেতা কর্মীদের বাধা বিপত্তি স্বত্বেও চম্পাফুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মনোনীত হন।

আওয়ামী লীগ না করলেও নিজেদের অস্তিত্ব ঠেকিয়ে রাখতে আওয়ামী লীগ বহির্ভুত কয়েকজনকে কমিটির সদস্য করায় আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা কর্মীরা একপর্যায়ে কোনঠাসা হয়ে পড়ে। দুস্থ ও অসহায়দের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ১০ টাকা চাল বিতরণে অনিয়ম ও দূর্ণীতির কারণে ২০১৭ সালের ১৪ জুন দু’দকের সহকারি পরিচালক রাজ কুমার সাহার দায়েরকৃত মামলায় ওই বছরের ২৬ আগষ্ট মোজাম্মেল হককে জেলে যেতে হয়। ১৩ নভেম্বর উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে গাড়িবহর নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় কালীবাড়ি বাজারে গোদাড়া গ্রামের তানভিরের ভুষির দোকান ও দীঘির মোড়ে নজরুলের ওষধের দোকান ছাড়াও চারটি নির্মাণাধীন দোকান ভাঙচুর ও দু’ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুটপাটের ঘটনায় ১৪ নভেম্বর নজরুল ইসলাম বাদি হয়ে মোজম্মেল হক গাইনসহ ৪৫ জনের নামে মামলা (১৫ নং) দায়ের করেন।

আত্মসাতকৃত চালের টাকা জমা দিয়ে মামলা থেকে অব্যহতি পেলেও বর্তমানে ওই মামলা মহামান্য হাইকোর্টে রিভিশন করা হয়েছে। উজিরপুর কালিমন্দির সংলগ্ন সাত শতক ও বাজারের ভিতর সরকারি পুকুরের ৪৭ শতক জমি নিজের বাবা মৃত শওকত গাইনের নামে বর্তমান জরিপে রেকর্ড করিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে মোজাম্মেল হক গাইনের বিরুদ্ধে। ২০০৫ সালে শোভনালী ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলামের সঙ্গে যোগসূত্র করে উজিরপুর বাজারে তার বিএনপি দলীয় অফিসে টর্চার সেল বানিয়ে বসুখালি, চিংড়িখালি ও বৈরাগীর চক এলাকার ভূমিহীনদের হাতুড়িপেটা করে কয়েকজনকে পঙ্গু করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে মোজাম্মেল হক এর বিরুদ্ধে। এসবের পরও আগামি ইউপি নির্বাচনে এক ধরনের সুবিধাভোগী নেতাদের ম্যানেজ করে মোজাম্মেল হক গাইন আবারো চম্পাফুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কাণ্ডারী হিসেবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তাকে নৌকা প্রতীকে ভোট করার সূযোগ দিলে দলীয় নেতা কর্মীরা সমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।

তারা জানান, ২৮ নভেম্বর ইউপি নির্বাচিনকে সামনে রেখে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার জন্য উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মোজাম্মেল হক গাইন ও পরান মণ্ডলের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। দুর্দিনে দলের কাণ্ডারী হিসেবে পরান মণ্ডল যথেষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন। দেশজুড়ে সংখ্যালঘুদের বর্তমান প্রেক্ষাপটে পরান মণ্ডলের ভূমিকা অপরীসীম।

জানতে চাইলে চম্পাফুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাম্মেল হক গাইন ইতিপূর্বে সাংবাদিকদের মুঠোফোনে (০১৭১৫-২৫১৮৪৮) বলেন, ২০০২ সালের আগে তিনি বিএনপি ও জাতীয় পার্টি করতেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগের নীতি ও আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে তিনি ওই দলে যোগদান করেছেন। তার বিরুদ্ধে আনীত কোন অভিযোগের ভিত্তি নেই দাবি করে তিনি বলেন, সাইফুল্লাহ লস্কর হত্যা মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হলেও পরে তাকে ওই মামলা থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। তার পৈতৃক জমি মন্দিরের নামে রেকর্ড করিয়ে দিয়েছেন তিনি। আগামি ইউপি নির্বাচিনকে ঘিরে প্রতিপক্ষরা তার সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা করছে।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ২২, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test