E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বন্যার পানি নেমে গেলেও রয়ে গেছে ক্ষত চিহ্ন

২০২১ অক্টোবর ২৫ ১৮:৪৩:২১
বন্যার পানি নেমে গেলেও রয়ে গেছে ক্ষত চিহ্ন

রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতনিধি : বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর কুড়িগ্রামের রাজারহাটে চরাঞ্চলে ক্ষত চিহ্ন রেখে গেছে। বালুর নীচে পড়ে আছে আবাদী ফসল, টিন, আসবাবপত্র, শ্যালো মেশিন, নৌকাসহ বিভিন্ন জিনিষপত্র। একরের পর একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। মাটিতে নুয়ে পড়েছে ধান গাছ। তার উপর পড়েছে বালুর স্তর।

সোমবার (২৫অক্টোবর) সকালে রাজারহাট উপজেলার চর তৈয়ব খাঁ ও চরবিদ্যানন্দে গিয়ে দেখা যায়, বিধ্বস্ত অবস্থা। যত্রতত্র পরে আছে গাছপালা, ঘড়ের চাল, জমিতে পড়ে আছে কাঁচা পাকা ধান, বাদাম, মরিচ, বেগুন, শাকসবজি ও মাস কালায়ের গাছ গুলো। অধিকাংশের উপর কাঁদা বালু পড়েছে।

চর বিদ্যানন্দের কৃষক মোফাজ্জল হোসেন জানায়,‘গতবার বন্যা কম হওয়ার আগুর ধান, আলু, বাদাম, মাস কালাই লাগাই। আমি এক একর জমিতে এসব ফসল করেছিলাম সব শেষ হয়ে গেছে। চরের মানুষ কৃষির উপর নির্ভর করি বাঁচে। যে ক্ষতি হইলো কোন মতে পোষার উপায় নাই। ’

একই চরের পশ্চিমে একরের পর একর জমিতে বাদাম মাটিতে শোয়ান। উপর দিয়ে বালি পড়েছে। কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি দুই একর জমিতে আগাম বাদাম আবাদ করেছি সব নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েক লাক্ষ টাকা ক্ষতি। এখন পর্যন্ত কোন ত্রাণ পাইনি, কৃষি বিভাগের কোন লোক আসেনি।

চর তৈয়বখাঁর কৃষক আবুল হোসেন বলেন, জমিতে খাল হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে তীব্র বেগে পানির স্রোত পাক খায়া আসি সব লন্ড ভন্ড করি দেয়। পাকা ধান কাটি বাড়ীত রাখি সব স্রোতে ভেসে গেছে।

কয়েক দিন পানির নীচে থাকা পঁচে যাওয়া পাকা ধান শুকাচ্ছে কমলা বেগম। পাশেই তার স্বামী হাজির উদ্দিন ঘর ঠিক করছিলেন। এ সময় তিনি বলেন ধান কাটি বাড়ীর উঠানে রাখি। সকালে দেখি কিছু নাই। ভাসে নিয়া গেইছে। জমিতে যে টুকু ছিল পঁচে গেছে। কোন রকমে আনি সুকপার নাগছি। একেই অবস্থা জালাল উদ্দিনের।

এদিকে ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চর গতিয়াসামে গিয়ে দেখা যায়, একই অবস্থা। চরের জাবেদ আলী ও শাহাদুল ইসলাম বাড়িঘর নিশ্চিহ্ন হয়েছে স্রোতের তোড়ে। শুধু ভিটে মাটি টুকু পড়ে আছে। তার মা জাহেরা বেওয়া জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর হঠাৎ ধেয়ে আসে তিস্তার পানি। চিৎকার করতে থাকি। জামাইকে রিং দেই তাই নৌকা নিয়ে আসি উদ্ধার করে। পানি কমে যাবার পর ,বাড়ি ফিরে দেখি কোন চিহ্নমাত্র নেই। ঘর মালামাল, কাপড়, আসবাবপত্র কিছুই নেই। খালি ভিটা পরি আছে। তিনি বলেন হামরাএ্যালা কোটে যাম।

চরের বাসিন্দারা জানায়, পশ্চিম প্রান্তের ১১টি পরিবারের ভিটে বাড়ী তলিয়ে আছে বালুর নিচে। শহিদুল ইসলাম বালুর নীচে চাপা পড়া মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা করছিলেন। এ সময় জানায়, ধান, চাল, আলুসহ বাড়িতে অনেক কিছুই ছিল। এখন কিছুই নেই। প্রতিবেশী কাফি মিয়া বলেন, চারটি ঘর, শ্যালোমেশিন, ধান, চাল সব বালুর নিচে চলে গেছে। মালামাল নিয়ে যাওয়ার সময় ঘূর্নি স্রোতে ডুবে যায় একটি নৌকা। মাটি খুঁড়ে সেটি তোলার চেষ্টা করছি।

গতিয়াসামের কৃষক জোবাইদুল ইসলাম জানায়, ৪০ শতক জমিতে মরিচের চাষ করেছিলেন। দুই দফায় ১৫ হাজার টাকা খরচও হয়েছে। কিন্তু মরিচ ক্ষেতের উপর এতো বালু জমেছে যে অন্য ফসল আবাদের কথা ভাবতে পারছেন না তিনি। তার সামনে এখন শুধুই অনিশ্চয়তা। চরের আরেক কৃষক শাহেদুল ইসলাম জানান, ছয়জন মিলে ১১ একর জমিতে আলুর চাষ করেছিলেন। প্রতি একর জমি ৩৩ হাজার টাকা লিজ নিয়ে আলুর চাষ করেছিলেন। খরচ পড়েছে ৬ লাখ টাকা। এখন সব শেষ।

এ বিষয়ে রাজারহাট উপজেলা কৃষি অফিসার সম্পা আকতার বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূরে তাসনিম জানায়, বন্যায় প্রায় ৩ হাজার পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দেয়ার জন্য প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া নদীর ভাঙন ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ এক হাজার পরিবারের জন্য ঢেউটিন বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

(পিএমএস/এএস/অক্টোবর ২৫, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test