E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

স্কুলছাত্রী প্রেমিকাকে গলাকেটে হত্যা করা সেই প্রেমিকের মৃত্যু

২০২১ অক্টোবর ২৮ ১৫:৫২:১২
স্কুলছাত্রী প্রেমিকাকে গলাকেটে হত্যা করা সেই প্রেমিকের মৃত্যু

মোঃ সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভার শামছুল হক ডিগ্রি কলেজের পাশে স্থানীয় খোকন ড্রাইভারের একটি নির্মাণাধীন ভবনের সিঁড়িতে স্কুলছাত্রী সুমাইয়া আক্তারের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধারের রহস্য ছায়া তদন্তের মাধ্যমে উদ্ঘাটন করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১২)।

র‌্যাবের তদন্তে প্রেমিক মনিরকে ছেড়ে অন্য এক ছেলের সাথে প্রেমে জড়ানোর কারণে স্কুলছাত্রী সুমাইয়া আক্তারকে গলাকেটে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করে বলে উল্লেখ করা হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুরুতর আহত প্রেমিক মনির হোসেনকে বুধবার (২৭ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭ টার দিকে গ্রেপ্তার দেখায়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আহত প্রেমিক মনির হোসেন চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) ভোরে মৃত্যুবরণ করেছে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে র‌্যাব-১২ জানায়, ঘটনার আকস্মিকতা ও চাঞ্চল্য বিবেচনায় র‌্যাবের সিপিসি-৩ টাঙ্গাইলের একটি চৌকষ টিম স্বপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত শুরু করে।

নিহত স্কুলছাত্রী সুমাইয়া আক্তার (১৫) কালিহাতী উপজেলার পালিমা গ্রামের ফেরদৌস রহমানের মেয়ে ও এলেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তারা এলেঙ্গা পৌরসভার মসিন্দা এলাকায় ভাড়া বাসায় পরিবারসহ বসবাস করতেন। গুরুতর আহত মনির হোসেন(১৭) এলেঙ্গা পৌরসভার মশাজান এলাকার মেহের আলীর ছেলে। তিনি ট্রাক চালকের সহকারী ছিলেন।

র‌্যাব-১২ জানায়, সিপিসি-৩ টাঙ্গাইলের কোম্পানী কমান্ডার লে. কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে গঠিত একটি চৌকষ টিম র‌্যাবের গোয়েন্দা টিমের সহযোগিতায় ঘটনার ১০ ঘণ্টার মধ্যে স্কুলছাত্রী নিহতের রহস্য উন্মোচন করেছে।

র‌্যাব-১২ আরও জানায়, ভিকটিম সুমাইয়া আক্তারের পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং বিভিন্ন লোকজনের সাথে প্রকাশ্য ও গোপনে কথা বলে র‌্যাবের টিম। তারা জানতে পারে ভিকটিম সুমাইয়ার সাথে ট্রাকের হেলপার মনির হোসেনের দীর্ঘ দুই বছর যাবত প্রেমের সম্পর্ক ছিল।

সম্প্রতি মনির তার প্রেমিকা সুমাইয়ার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য একাধিকবার প্রস্তাব দেয়। এতে রাজি না হওয়ায় মনির মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। মাদকাসক্ত অবস্থায় ইতোপূর্বে কয়েক দফায় সুমাইয়ার উপর শারীরিক নির্যাতনও করেছে। প্রায় দুই মাস আগে সুমাইয়া তার সাথে সম্পর্ক চ্ছেদ করে অন্য একটি ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এতে মনির অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়। ৫-৭ দিন আগেও ভিকটিম সুমাইয়াকে মনির রাস্তায় একা পেয়ে মারপিট করায় সুমাইয়া আহত হয়ে চিকিৎসা করায়।

ওই চড় থাপ্পরের দৃশ্য মনির ভিডিও করে রেখে তার বন্ধুদের দেখায়। ২৬ অক্টোবর রাতে মনির তার কয়েক বন্ধুকে নিয়ে এলেঙ্গা সামসুল হক কলেজের মাঠে বসে মিটিং করে এবং সুমাইয়া ও তার নতুন প্রেমিকের উপর প্রচন্ড ক্ষোভ প্রকাশ করে। এ সময় বন্ধুরা তাকে সুমাইয়ার পথ থেকে সরে যেতে পরামর্শ দেয়। এরপর থেকে মনির পাগলের মত আচরণ করতে থাকে এবং ২০-২৫ মিনিট পর সবাই বাড়ি চলে যায়।

র‌্যাব জানায়, সংশ্লিষ্ট বিবেচনায় একটি ভিডিও বিশ্লেষন করে দেখা যায়- ট্রাক হেলপার মনির একটি সুইচ গিয়ার সংগ্রহ করে এবং লাইকির জন্য ভিডিও তৈরি করে। বিভিন্ন স্টাইলে মনির ওই সুইচ গিয়ার ছুরির ব্যবহার করার ভিডিও করে। ওই সুইচ গিয়ারটিই ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ জব্দ করে।

প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হয়ে র‌্যাবের তদন্ত টিম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুরুতর আহত মনির হোসেনকে বুধবার রাতে গ্রেপ্তার দেখায়। কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোরে চিকিৎসাধীন মনিরের মৃত্যু হয়।

এলেঙ্গা পৌরসভার প্যানেল মেয়র সুকুমার ঘোষ জানান, পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে তিনি জানতে পেরেছেন- ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার ভোর রাতে মনির হোসেনের মৃত্যু হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে বৃহস্পতিবার বিকালে মরদেহ মশাজান গ্রামে আনা হবে।

(এসএম/এসপি/অক্টোবর ২৮, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test