E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিক্ষোভ-অবরোধে উত্তপ্ত কক্সবাজার, আতঙ্কে পর্যটকরা

২০২১ অক্টোবর ৩১ ২২:০৪:২০
বিক্ষোভ-অবরোধে উত্তপ্ত কক্সবাজার, আতঙ্কে পর্যটকরা

কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও যুবলীগ নেতা এমএ মোনাফ সিকদারকে গুলি করার নির্দেশদাতা হিসেবে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজারের পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে সদর থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা হয়েছে। বিকেলে মামলা হওয়ার পর সন্ধ্যার দিকে মামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে কক্সবাজার শহরের সব দোকানপাট, বাস কাউন্টার বন্ধ করে দেন মেয়র মুজিবুরের অনুসারীরা। পাশাপাশি সড়কের মাঝখানে পৌরসভার ময়লার গাড়ি রেখে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছেন তারা।

ভাঙচুর চালানো হয়েছে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে। এ নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে শহরবাসী ও পর্যটকদের মাঝে।

রবিবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে মেয়র মুজিবসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি করেন মোনাফের বড় ভাই। মামলায় আরও আটজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, বুধবার (২৭ অক্টোবর) রাতে শহরের কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্টে একটি মার্কেটের সামনে আড্ডারত মোনাফ সিকদারকে (৩২) গুলি করা হয়। তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকৎসাধীন।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় আহত মোনাফ ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমাকে মুজিবুর রহমান মেয়রের নির্দেশে গুলি করা হয়েছে। ওরা গুলি করার সময় বলছিল ‘তুই মুজিব চেয়ারম্যানের সাথে লাগছিস? মুজিব চেয়ারম্যানের সাথে আর লাগবি? এই বলে পেছন থেকে গুলি করে পালিয়ে যায়।’

ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।

এ ঘটনায় বক্তব্য নিতে সাংবাদিকদের ফোন না ধরলেও তার বাড়ির এলাকায় (বিমানবন্দর সড়কের মাথায়) একটি প্রতিবাদ সভায় মেয়র মুজিবুর রহমান, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মোনাফ সিকদারকে গুলি করার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন।

সমাবেশে মেয়র মুজিব বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। যে ছেলেটা গুলিবিদ্ধ হয়েছে, তাকে একজন শিখিয়ে দিয়ে বলতেছে, বলো, মেয়র মুজিবের নির্দেশে তোমাকে গুলি করা হয়েছে। সে শেখানো কথা বলেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি এ সমাবেশে বলতেছি, কারও যদি জায়গা বা একটা হোটেলও দখল করে থাকি প্রমাণ দেন, রাজনীতি ছেড়ে দেবো, এ শহর থেকে চলে যাব।’

শুক্রবার এ প্রতিবাদ সভার দুদিন পর রবিবার বিকেলে মোনাফ সিকদারকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। মামলায় হুকুমদাতা হিসেবে প্রধান আসামি হয়েছেন মুজিবুর রহমান।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, হত্যাচেষ্টার ধারায় মেয়র মুজিবকে প্রধান আসামি করে মামলা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে মেয়র মুজিবুরের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার খবর প্রচার হওয়ার পরপরই পুরো শহরে মেয়রের অনুসারী একদিকে বিক্ষোভ মিছিল করেছে অন্যদিকে দোকানপাট বন্ধ করে দিচ্ছেন। হোটেল-মোটেল জোনের কলাতলীর প্রধান সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন তারা। ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি দেখা না মেলায় শহরজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সন্ধ্যা ৭টার দিকে দেখা যায়, কক্সবাজার শহরের বাজারঘাটা থেকে শুরু করে ফিশারিঘাট পর্যন্ত ও বিমানবন্দর সড়ক থেকে কলাতলী পর্যন্ত দোকানপাট জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে চাননি তাদের হামলা করতে উদ্যত হন বিক্ষোভকারীরা। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে এবং পাথর রেখে রাস্তা বন্ধ করে রাখায় কলাতলী থেকে বাস টার্মিনাল ও কলাতলী থেকে বিমানন্দর সড়ক পর্যন্ত উভয় পাশে শত শত যানবাহন আটকে যায়।

সেখানে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ফেরা জিও-এনজিও কর্মকর্তাদের গাড়ির পাশাপাশি অনেক অ্যাম্বুলেন্স এবং পর্যটকদের গাড়িও ছিল। অনেক পর্যটক আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে হোটেলে ফিরেছেন। রাস্তার পাশের অনেক হোটেলের ফটক বন্ধ করে দেয় আতঙ্কিত কর্তৃপক্ষ।

ঘটনার বিষয়ে মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, আমাকে মিথ্যাভাবে ফাঁসানো হচ্ছে। আমি মোনাফকে গুলি করার নির্দেশ দেইনি। জেলা আওয়ামী লীগ থেকে আমরা গতকাল একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছি, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে প্রশাসকে সহযোগিতা করবো। কিন্তু সরকারদলীয় এক শীর্ষ নেতাকে প্রধান আসামি করে পুলিশ হত্যাচেষ্টা মামলা নথিভুক্ত করলো। এতে প্রতীয়মান হয়, আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হচ্ছে। মিথ্যা মামলার খবর পেয়ে নেতাকর্মীরা হয়তো মাঠে নেমে বিক্ষোভ করছে।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস বলেন, অপরাধীদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। কারও ইন্ধনে এ ঘটনা হলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে। কোনো নেতা নয়, ব্যক্তির অপরাধের পেছনে লড়বে প্রশাসন।

(ওএস/এএস/অক্টোবর ৩১, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test