E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভৈরবে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনে চরম ভোগান্তি

২০২১ নভেম্বর ০২ ১৭:২২:২৮
ভৈরবে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনে চরম ভোগান্তি

মিলাদ হোসেন অপু, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) : দেশের সকল মানুষকে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের আওতায় আনতে সরকার চালু করেছে জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম। প্রথমে হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান করা হতো। বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধনের সনদ প্রদান করা হয়। তবে হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধন সনদ অনলাইন ভিত্তিক হবার পরই শুরু হয়েছে সীমাহীন দুর্ভোগ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাংলায় লেখা তথ্যাদি অনলাইনে আপলোড করে রাখা হয়েছে। তবে ওই সব তথ্য ইংরেজিতে না থাকায় তা সংশোধন করতে বলা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জটিল আরো বেশি। অনলাইনে কোন শিক্ষার্থীর জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে গেলেই চাওয়া হচ্ছে তার পিতা ও মাতার জন্ম সনদ। এ ক্ষেত্রে পাওয়া গেছে অনেক অসঙ্গতি। 

বাবা ও মায়ের জন্মনিবন্ধনের সাথে সন্তানের জন্মনিবন্ধন মিল না থাকলে আগে পিতা ও মাতার জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে হচ্ছে। পরে সন্তানের জন্মনিবন্ধনের নামে, জন্ম তারিখে বা পিতা-মাতার নাম ভুল থাকলে সংশোধন করতে হচ্ছে। আর জন্মনিবন্ধন সনদের এইসব তথ্য ভুলের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ভৈরব পৌর এলাকার শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সের অসংখ্য মানুষ। সনদের ভুল সংশোধন করতে ভৈরব পৌর মাতৃসদনে গিয়েও নানা ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে বলে জানান সেবাগ্রহীতারা।

সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি (শিক্ষার্থী পরিচয় পত্র) তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষার্থীর জন্ম নিবন্ধন সনদ ও পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন সনদ অনলাইন ভেড়িফাই কপিসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে খোঁজতে গিয়ে এ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়নি। আবার অনেকের মূল জন্ম সনদের সঙ্গে অনলাইন জন্ম সনদের হুবাহুব মিল নেই। এ কারণে অনেক ছাত্র-ছাত্রীকে ইউনিক আইডির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

বিশেষ করে ১৮-২০ বছরের ভেতর যাদের বয়স। যারা এখনো ন্যাশনাল আইডি কার্ড পাননি। তাদের বিভিন্ন কাজের জন্য জন্ম নিবন্ধনের ওপরই নির্ভর করতে হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের অনেকগুলো জন্ম সনদ মাতৃসদনে জমা পড়েছে। তার মধ্যে দু-চারটির তথ্য সঠিক এবং বাকি সব অনলাইনে থাকলেও তার নাম, পিতার নাম, জন্ম তারিখ অথবা নিবন্ধন নম্বর ১৫ সংখ্যা হিসেবে অনলাইনে আপলোড রয়েছে। তবে তা সঠিক নয়। এ কারণে অনেকেই জন্ম নিবন্ধন সনদের ভুল সংশোধন করতে ভিড় জমাচ্ছেন পৌর মাতৃসদনে। আর এর জন্য সেবাগ্রহীতাদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি।

এদিকে, কারও নাম সহজে সংশোধন করা গেলেও জন্ম তারিখের বেলায় হচ্ছে সমস্যা। কাগজ পত্রের তালিকায় এসএসসি সনদের কথা বলা হলেও যাদের বয়স ১৫ বছরের কম তাদের এসএসসি সনদ দাখিল করা অসম্ভব। যাদের শিক্ষাগত সনদ রয়েছে তাদের অনেকের বয়স সংশোধন করতে গিয়ে দেখা গেছে একাডেমিক সনদে যে বয়স রয়েছে তার পূর্বে জন্ম সনদ নিবন্ধিত হয়েছে। যে কারণে বয়স সংশোধন করতে অনেকেই পড়ছেন বিপাকে।

জিল্লুর রহমান মহিলা কলেজের এক শিক্ষার্থীর পিতা মহরম আলী বলেন, আমার মেয়ের জন্ম সনদে ভুল রয়েছে। এটি নজরে আসার পর এখন সংশোধনের জন্য আবেদন করি। আবেদনের সময় সাথে আরো বিভিন্ন ডকুমেন্ট দিতে হয়। যদি ডকুমেন্ট মিল না থাকলে তাহলে আবেদন নাকি বাদ হয়ে যায়। তাই সকল কাগজ মিল রেখে সংশোধন করতে হচ্ছে, না হলে সামনে বিপাকে পড়তে হবে।

জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে আসা ভৈরব সরকারি কেবি পাইলট মডেল হাই স্কুলের শিক্ষার্থীর অভিভাবক দুধ মিয়া বলেন, যখন জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তখন অনেক অনভিজ্ঞ লোক দিয়ে এ জরিপ করানো হয়েছে। তাই অনেকের নামের শুদ্ধ বানান বা জন্ম তথ্য সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করতে পারেনি। এছাড়া বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ না করে একই বাড়িতে বসে আশপাশের কয়েক বাড়ির তথ্য সংগ্রহ করার কারণে এ ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। জন্ম সনদে ভুলের কারণে বেশি বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।

এছাড়া আরেক অভিভাবক হোসাইন সোহরাব বলেন, আমার ভাগিনীর জন্ম নিবন্ধন ডিজিটাল করতে মাতৃসদনে আবেদন জমা দেওয়া হলে অনলাইনে দেখা যায়, ১৯৯৩ সাল দেওয়া কিন্তু কাগজে ২০০৮ সাল দেয়া। তাদের ভুলের কারণে আমাদের এখন ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে। এর সমস্যার জন্য বার বার মাতৃসদনে এসেও এই সমস্যা সমাধান পাচ্ছি না।

ডিজিটাল করতে অনেক হয়রানি হতে হচ্ছে। স্কুল থেকে ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন জমা দেওয়ার জন্য বলছে। এখন সনদ ডিজিটাল করার সময় আবেদন পত্রের সাথে আসল জন্ম নিবন্ধন নিয়ে গেছে। এখন স্কুলে কাগজ জমা দিতে বার বার বলতেছে। কিন্তু ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন না পাওয়ায় জমা দিতে পারতেছি না। এমনকি কয়েকবার মাতৃসদনে পুরোনো জন্মনিবন্ধনটাও পাচ্ছি না। অনেক হয়রানি হতে হচ্ছে। পৌর এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, একটি নতুন জন্ম সনদ তৈরী বা ভুল সংশোধন করে তা হাতে পেতে তাদের এক মাসেরও অধিক সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ফলে তারা সময় মত তাদের কাজ করতে পারছেন না। এছাড়া কোনও ব্যক্তির মৃত্যু সনদ তৈরি করতে গেলেও জন্ম সনদের প্রয়োজন হচ্ছে। জন্ম সনদ না থাকলে নতুন করে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। এগুলো পেতে দিনের পর দিন এমন কী মাসের পর মাসও লেগে যাচ্ছে। তারা মনে করেন বিষয়টি আরো সহজিকরণ করা প্রয়োজন। তা না হলে থামবেনা এই দুর্ভোগ।

এছাড়া ভোক্তভোগীরা বলেন, বর্তমানে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরির কারণে সমস্যা বেশি হচ্ছে। নিবন্ধন তৈরির প্রক্রিয়াটা ভৈরব পৌরসভার অধীনে থাকলে জনগণের ভোগান্তি অনেক কম হতো। কিন্তু কিশোরগঞ্জ থেকে হয়ে আসার কারণে সময় ও ঝামেলা বেশি হচ্ছে।

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের ডিডিএলজি পৌরসভাগুলোর নিয়ন্ত্রণ করায় জন্ম নিবন্ধন সংশোধন, ডিজিটাল বা নতুন যাই করা হোক পৌর মাতৃসদনে আবেদন করার পর কিশোরগঞ্জ থেকে কাগজগুলো হয়ে আসতে এক সপ্তাহ থেকে তিন-চার মাস পর্যন্ত সময় লেগে যাচ্ছে। যার কারণে এই সমস্যা আরো তীব্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া জন্ম নিবন্ধন পাওয়ার পর অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন ধরণের ভুল রয়েছে। সেই ভুল সংশোধন করতে গেলে আরও সময় লেগে যায়। এ কারণে পৌর এলাকার মানুষকে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। পৌর এলাকার সেবাগ্রহীতা শুধু একটি নাম সংশোধনের জন্য যে জায়গায় অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ওই জায়গায় জন্ম নিবন্ধনের সকল কাজ স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের তত্ত্বাবধানে হওয়ায় ইউনিয়নবাসী কোনো ভোগান্তি ছাড়াই সমাধান করতে পারছে।

এ ব্যাপারে পৌর স্যানেটারি ইন্সপেক্টর নাসিমা বেগম বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পরিচয় পত্র তৈরির জন্য স্কুল-কলেজগুলোতে ডিজিটাল জন্মসনদ চেয়েছে। যার কারণে এনালগ জন্ম নিবন্ধনগুলোকে ডিজিটাল ও ভুল সংশোধন করার জন্য মানুষ মাতৃসদনে ভীড় করছে।

জন্ম সনদগুলো ঠিক হয়ে আসতে ১৫ থেকে ২০ দিন এমনকি মাস খানিক গেলে যেত এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এতো দিন জন্মনিবন্ধনের কাজগুলো কিশোরগঞ্জ ডিডিএলজি অধীনে হয়ে থাকত যার কারণে দেরি হত। এই সমস্যা সমাধান হয়েছে এখন থেকে ভৈরব উপজেলা অধীনে কাজগুলো সম্পন্ন হবে। যদি সার্ভার এর কোনো সমস্যা না হয় তাহলে এখন থেকে আর সেবাগ্রহীতাদের বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না এবং তাদের ভোগান্তি কমবে।

(এম/এসপি/নভেম্বর ০২, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test