E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে জামায়াত নেতা লাপাত্তা

২০২১ নভেম্বর ১৩ ১৭:০৩:৩৯
কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে জামায়াত নেতা লাপাত্তা

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি : জামায়াত নেতা প্রকৌশলী মোঃ রকিবুল হাসান চৌধুরী রাজু সেবা প্রতিষ্ঠানের নাম করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।  টাকা হাতিয়ে নিয়ে তিনি এখন লাপাত্তা। এমন অভিযোগ সময় নামের একটি সামাজিক সংগঠনের মোঃ কবির মাহমুদসহ ৯ সদস্যের। শুক্রবার রাতে সভা করে সংগঠনের সদস্যরা জামায়াত নেতা রাজুকে সময়ের চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। জামায়াত নেতার সামাজিক সংগঠনের নামে প্রতারনা করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাতের বিষয় প্রশাসনকে খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থার দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

জানা গেছে, পিরোজপুর পৌর শহরের বাসিন্দা আমতলী উপজেলা সমাজসেবা অফিসে ইউনিয়ন মাঠকর্মী গোলাম আজম চৌধুরীর ছেলে প্রকৌশলী মোঃ রকিবুল হাসান চৌধুরী রাজু। বাবার চাকুরীর সুবাধে রাজুর বসবাস আমতলীতে। ছাত্রজীবন থেকেই রাজু শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকায় এবং পিরোজপুরে নিজের ও নানা বাড়ি হওয়ায় যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাইদীর হয়ে যান ঘনিষ্ঠ সহচর। ২০০৪ সালে জামায়াতের অর্থায়নে ঢাকা আমেরিকান ইউনিভাসিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করেন। জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতা ও অর্থায়নে কম্পিউটার প্রকৌশলী হিসেবে লেখাপড়া শেষ করেন। লেখাপড়া শেষে জামায়াত নেতাদের সুপারিশে তিনি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের আইসিটি বিভাগে প্রকৌশলী হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি পটুয়াখালী ইসলামী ব্যাংক শাখায় কর্মরত আছেন। ইসলামী ব্যাংকে চাকুরীতে যোগদানের পর থেকে আর তাকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি।

আমতলী পৌর শহরে, গাজীপুর বন্দর, ধানখালী ও তালুকদার বাজারে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাকিং আউটলেট শাখা স্থাপন করেছেন। ওই এজেন্ট ব্যাংকে জামায়াত ও শিবিরের লোকজনকে চাকরী দেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে আমতলীতে জামায়াত শিবির প্রতিষ্ঠিত করতে তিনি প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। ২০১৪ সালে আমতলীতে “সময়” নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠনের আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। ওই সংগঠন পরিচালনার জন্য ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়। ওই কমিটির চেয়ারম্যান হন জামায়াত নেতা প্রকৌশলী মোঃ রকিবুল হাসান চৌধুরী রাজু। সংগঠনের চেয়াম্যান হওয়ার পর থেকেই তিনি বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য সময় মেডিকেয়ার এন্ড হসপিস, সময় টেলিকমিউনিকেশন ও ব্রডব্যান্ড এবং সময় ইকো ব্রিকস এন্ড কনক্রিট প্রোডাক্ট ইন্ডাট্রিজ প্রতিষ্ঠানের নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ওই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার নামে তিনি সদস্যদের কাছ থেকে অন্তত দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। ওই টাকা দিয়ে তিনি কিছু কাজ করে অতিরিক্ত খরচ দেখিয়ে ৮১ লক্ষ ৪৫ হাজার এক’শ ৫০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

সময় সংগঠনের নামে ইকো ব্রিকস এন্ড কনক্রিট প্রোডাক্ট ইন্ডাট্রিজ নির্মাণের কথা থাকলেও তিনি সদস্যদের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে তার সন্তানের নামে রুহী ইকো এন্ড রুশান টাইলস নামে ইন্ডাট্রিজ গড়ে তোলেন। ইকো ব্রিকস সময় সংগঠনের নামে না করে তার সন্তানের নামের করায় সংগঠনের সকল সদস্য নড়েচরে বসেন। বের হতে শুরু করে তার অর্থ আত্মসাতের চিত্র। সময় মেডিকেলয়ার এন্ড হসপিসের জন্য আলট্রা মেশিন কেনার নামে এক লক্ষ পঁচাত্তর হাজার টাকা নিয়ে মেশিন ক্রয় না করেই ওই সমুদয় টাকা আত্মাসাৎ করেন। তিনি সময় সংগঠনের চেয়ারম্যান হওয়ায় প্রতিমাসে বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে ১৫ হাজার টাকা নেয়। যা অন্য সদস্যরা কেউ অবগত নন। হসপিস নির্মাণ কালে তিনি অতিরিক্ত মুল্য দেখিয়ে অন্তত ৬১ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এভাবেই তিনি গত ৭ বছরে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এমন অভিযোগ সময় সংগঠনে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সদস্য কবির মাহমুদ, পলাশ তালুকদার, আব্দুল কাইয়ূম, তৌহিদুল ইসলাম, মাহতাবুর রহমান, মোঃ আব্দুল্লাল আল মামুন, মামুন অর রশিদ, মাসুম বিল্লাহ ও মোসাঃ রাহিমা বেগম ঝুমুর। শুক্রবার সময় সংগঠনের ১৩ সদস্যের কমিটির মধ্যে ৯ সদস্য সভা করে চেয়ারম্যান রাকিব চৌধুরী রাজুকে চেয়ারম্যান পদ থেকে বহিস্কার করেছেন। একই সাথে সংগঠনের সদস্য মোঃ কবির মাহমুদকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়ে ৭ সদস্য বিশিষ্ঠ কমিটি গঠন করেন তারা।

নারী সদস্য মোসাঃ রাহিমা বেগম ঝুমুর বলেন, রাজু সময় ইকো ব্রিকস করার কথা বলে আমার কাছ থেকে ২০ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু এখন ওই ব্রিকস সময় সংগঠনের নামে না করে তার মেয়ে রুহি ও ছেলে রুশানের নামে করেছেন। প্রতারক রকিবুল চৌধুরী রাজু শাস্তি দাবী জানান তিনি।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ পলাশ তালুকদার বলেন, সময় সংগঠন গড়ে তোলার পর থেকেই রাজু সদস্যদের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। ওই টাকা দিয়ে তিনি নাম মাত্র প্রতিষ্ঠান করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি আরো বলেন, আমার কাছ থেকে প্রতারনা করে রাজু ৩০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ টাকার কোন হদিস নেই।

সময় সংগঠনের বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ কবির মাহমুদ বলেন, সেবার নাম করে সেবামুলক সময় সংগঠন করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে রাজু কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। টাকা হাতিয়ে নিয়ে তিনি এখন আত্মগোপনে আছে। সংগঠনের সদস্যদের সাথে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, ইকো ব্রিকস করার কথা বলে টাকা নিয়ে তার দুই ছেলে ও মেয়ের নামে ব্রিকস করেছেন। সংগঠন থেকে প্রতারনা করে ৮১ লক্ষ ৪৫ হাজার ১’শ ৫০ টাকা আত্মসাত করেছেন। রাজুর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জামায়াত নেতা ইসলামী ব্যাংকে চাকুরীরত প্রকৌশলী মোঃ রকিবুল হাসান চৌধুরী রাজুর মুঠোফোনে (০১৭৯৯৪৩৯৯৯৯, ০১৭১৩৪১০৮৬৬, ০১৬৬৬৭৩৮৯৬) যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

আমতলী থানার ওসি একেএম মিজানুর রহমান বলেন, প্রকৌশলী মোঃ রকিবুল হাসান চৌধুরী রাজুর অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এস/এসপি/নভেম্বর ১৩, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test