E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায় প্রতারণার অভিযোগে হত্যা ও নাশকতাসহ দেড় ডজন মামলার আসামী আলতাফ আটক 

২০২১ নভেম্বর ১৮ ১৫:৫০:৪৬
সাতক্ষীরায় প্রতারণার অভিযোগে হত্যা ও নাশকতাসহ দেড় ডজন মামলার আসামী আলতাফ আটক 

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : প্রতারণার অভিযোগে সাতক্ষীরার পলাতক জামায়াত নেতা হত্যা ও নাশকতাসহ কমপক্ষে দেড় ডজন মামলার আসামী আলতাফ হোসেন র‌্যাব এর হাতে আটক হয়েছেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার দিকে নারায়নগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার মধুখালি এলাকা একটি বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেন র‌্যাব সদস্যরা।
র‌্যাব-০১ এর অধিনায়ক জানান, আটক আলতাফ হোসেন রূপগঞ্জে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসার নামে জমির দালালি ও প্রতারণা করে আসছিল। এমন অভিযোগের ভিত্তিতেই তাকে আটক করা হয়। আটকের পর তারা জানতে পারেন যে তার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরার বিভিন্ন থানায় হত্যা ও নাশকতাসহ ১৫ টি মামলা এবং ৫টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।

সাতক্ষীরা শহরের রাজারবাগান এলাকার আহসান উল্যার ছেলে আলতাফ হুসাইন সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের সাবেক প্রচার সম্পাদক, সাতক্ষীরা সিটি কলেজের প্রভাষক ও সিটি কলেজ ছাত্রলীগের তৎকালিন সভাপতি এবিএম মামুন হোসেন হত্যা মামলার অন্যতম আসামী।

২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াত শিবিরের সহিংসতায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ৫০ জন জখম হয়। এদিন নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় সাতক্ষীরা সিটি কলেজের প্রভাষক ও সিটি কলেজ ছাত্রলীগের তৎকালিন সভাপতি এবিএম মামুন হোসেনকে। এরপর জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাসীদের হাতে একে একে খুন হয় ১৭ জন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। রাস্তা কেটে ও গাছ কেটে রাস্তার উপর ফেলে গোটা সাতক্ষীরাকে প্রায় ১০ মাস অবরুদ্ধ করে রাখে জামায়াত-বিএনপির দুর্ধর্ষ ক্যাডাররা। জেলাজুড়ে তান্ডব চালায় জামাত-বিএনপি।

আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশ বাদী হয়ে তৎকালিন জেলা জামায়াতের আমীর যুদ্ধাপরাধী মামলার আসামী অধ্যক্ষ খালেক মন্ডল, যুগ্ম-সম্পাদক জেনারেল আজিজুর রহমান, জামায়াতের প্রচার সম্পাদক ও দৈনিক আলোর পরশের তৎকালিন সম্পাদক আলতাফ হোসাইন, সদর উপজেলা জামায়াতের আমীর রফিকুল ইসলাম, সদর পশ্চিম থানা আমীর মাওলানা শাহাদাৎ হোসেন, কাশেমপুর হাজামপাড়া জামে সমজিদের ইমাম মোহাম্মদ আলী, কাশেমপুর গ্রামের মাওলানা ঈমান আলী, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলামের ভাই ফিংড়ির হাবিবুর রহমানসহ ১৯০জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

২০১৩ সালের ২৮ফেব্রুয়রি জামায়াত নেতা মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর রক্তাক্ত হয়ে উঠে সাতক্ষীরা। সকালে কদমতলা মোড়ে ঘোষণা দিয়েই সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা। রায় ঘোষণার পর বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে কদমতলা মোড়ে ফিংড়ি ইউপি’র তৎকালিন চেয়ারম্যান ও জামায়াতের রোকন হাবিবুর রহমান হাবিব ও আলতাফ হোসাইনের নেতৃত্বে ১০ হাজারের বেশি জামায়াত, শিবর ও বিএনপি নেতা কর্মীরা মিছিল করে সাতক্ষীরা শহরে ঢোকার চেষ্টা করলে সার্কিট হাউজ মোড়ে পুলিশ ও বিজিবি তাদের বাধ দেয়। এসময় মুহু মুহু টিয়ারসেল ফাটায় পুলিশ। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিজিবি গুলি চালাতে বাধ্য হয়। গুলিতে সাতজন জামায়াত শিবিরের কর্মী মারা যায়। শহরে ঢুকতে না পেরে জামায়াত শিবিরের লোকজন ফিরে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের অন্যতম নেতা সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি প্রভাষক এবিএম মামুনকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার মধ্য দিয়ে সাতক্ষীরা জেলায় শুরু হয় জামায়াত শিবিরের তান্ডবলীলা। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় মামুনের ঘরবাড়ি। সাতক্ষীরা সদরের আবাদেরহাটের গোপাল ঘোষাল, তাপস আচার্য, শিয়ালডাঙার নবকুমার মণ্ডল, দেবহাটার জগন্নথপুরের মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ ঘোষসহ শতশত হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করে পুড়িয়ে দেয় জামায়াত-শিবির। জামায়াত শিবিরের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে প্রশাসন।

২০১৩ সালের ডিসেম্বরের ১৬ নভেম্বর সাতক্ষীরায় জেলা প্রশাসক হিসেবে নাজমুল আহসান এবং পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির। এরপর আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির অপারেশন শুরু করলে আলতাফ হুসাইনসহ অন্যরা চলে যায় আত্মগোপনে। রাজধানী ঢাকায় আত্মগোপনে থেকে শুরু করেন হাউজিং ব্যবসা। তার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা সদর থানায় এসটিসি ১১১/২০১৯, এসটিসি ১১২/২০১৯, এসটিসি ১৩৩/২৯১৭সহ দেড় ডজন মামলা রয়েছে। এ ছাড়া রিয়েল স্টেটের ব্যবসা করতে যেয়ে আলতাফ হুসাইন ২০১৪ সালে ঢাকার একটি স্থান থেকে অপহৃত হয়েছেন বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

(আরকে/এসপি/নভেম্বর ১৮, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test