E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরা সিটি কলেজে এমপিও নীতিমালা উপেক্ষিত

দুই শিক্ষককে একইসাথে দুই প্রতিষ্ঠানে সরকারি আর্থিক সুবিধা গ্রহণের ব্যবস্থা করেছেন অধ্যক্ষ আবু সাঈদ!

২০২১ ডিসেম্বর ০১ ১৭:৪৩:৫০
দুই শিক্ষককে একইসাথে দুই প্রতিষ্ঠানে সরকারি আর্থিক সুবিধা গ্রহণের ব্যবস্থা করেছেন অধ্যক্ষ আবু সাঈদ!

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সিটি কলেজে সদ্য এমপিও ঘোষিত কৃষি ডিপ্লোমা শাখায় এমপিভুক্ত শিক্ষক মোঃ আব্দুল জলিল ও মোঃ শামছুর রহমানের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা উপেক্ষা করে একই সাথে দুটি প্রতিষ্ঠানে সরকারি আর্থিক সুবিধা গ্রহনে তালিকা ভুক্তির ক্ষেত্রে অধ্যক্ষ আবু সাঈদের তথ্য জালিয়াতির বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের দাবিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। গত ২৮ নভেম্বর সিটি কলেজের এক সময়কার শিক্ষক বিধান চন্দ্র দাশ এ আবেদন করেন। 

আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সাতক্ষীরা সিটি কলেজে গত ২০০৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর গঠিত নিয়োগ বোডে প্রথম স্থান অধিকারী পদার্থ বিজ্ঞানের প্রভাষক মোঃ আব্দুল জলিলকে কৃষি ডিপ্লোমা শাখায় পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০০৫ সালের ১৫ জানুয়ারি তিনি যোগদান করেন।এরপর এই শাখা থেকে এমপিওভুক্তির পুর্ব সময় পর্যন্ত কলেজ ফান্ড থেকে নিয়মিত বেতন ভাতা গ্রহন করে যাচ্ছেন। এই শাখায় চাকুরিরত অবস্থায় উক্ত নিয়োগ ও যোগদান দেখিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অধিভুক্ত সাতক্ষীরা সিটি কলেজের বিএসসি শাখায় পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে ২০১১ সালের ১৩ নভেম্বর প্রজ্ঞাপনের পর অনুমোদিত বিষয়ের দ্বিতীয় শিক্ষক হিসেবে তালিকাভুক্ত হন আব্দুল জলিল। এই শাখায় তালিকাভুক্ত হওয়ার পর (ব্যাইনবেস থেকে প্রাপ্ত তথ্য) পর এই শিক্ষকের পূর্বের নিয়োগ ও যোগদানের তারিখ পরিবর্তন করে ২০১৫ সালের ৩ আগষ্ট বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর দেখানো হয়েছে। এই নিয়োগ ও যোগদান অনুসারে গত ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক কলেজ ৩ এবং উপপরিচালক কলেজ ২ স্বাক্ষরিত এমপিও তালিকায় ৭৭০ জন শিক্ষকের মধ্যে এই শিক্ষকের নাম ডিগ্রী স্তরের শিক্ষক হিসেবে তালিকা ভুক্ত করা হয়েছে। আবার একই সাথে এই শিক্ষক ২০২০ সালের ২৯ এপ্রিল এমপিও ঘোষিত কারিগরি অধিদপ্তরের অধিভুক্ত একই কলেজের কৃষি ডিপ্লোমা শাখায় পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে এমপিও ভুক্ত হয়েছেন। চলতি ডিসেম্বর মাসে ২৭ মাসের বকেয়া বেতনসহ বেতন উত্তোলন করবেন। এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা বহির্ভুত।

একইভাবে ২০০৫ সালের ১১ মার্চ সালে গঠিত নিয়োগ বোডে প্রথম স্থান অধিকারী মোঃ শামছুর রহমানকে কৃষি ডিপ্লোমা শাখায় গণিত বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ তিনি যোগদান করেন।এরপর এই শাখা থেকে এমপিওভুক্তির পুর্ব সময় পর্যন্ত কলেজ ফান্ড থেকে নিয়মিত বেতন ভাতা গ্রহন করতেন। এই শাখায় চাকুরিরত অবস্থায় উক্ত নিয়োগ ও যোগদান দেখিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অধিভুক্ত সাতক্ষীরা সিটি কলেজের বিএসসি শাখায় গণিত বিভাগে ২০১১ সালের ১৩ নভেম্বর প্রজ্ঞাপনের পর অনুমোদিত বিষয়ের দ্বিতীয় শিক্ষক হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। এই শাখায় তালিকাভুক্ত হওয়ার পর (ব্যাইনবেস থেকে প্রাপ্ত তথ্য) এই শিক্ষকের পূর্বের নিয়োগ ও যোগদানের তারিখ পরিবর্তন করে ২০১৫ সালের ৩ আগষ্ট বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর দেখানো হয়েছে। এই নিয়োগ ও যোগদান অনুসারে চলতি বছরের ৭ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক কলেজ ৩ এবং উপপরিচালক কলেজ ২ স্বাক্ষরিত এমপিওযোগ্য তালিকায় ৭৭০ জন শিক্ষকের মধ্যে এই শিক্ষকের নাম ডিগ্রী স্তরের দ্বিতীয় শিক্ষক হিসেবে তালিকা ভুক্ত করা হয়েছে। আবার একই সাথে এই শিক্ষক ২০২০ সালের ২৯ এপ্রিল এমপিও ঘোষিত কারিগরি অধিদপ্তরের অধিভুক্ত একই কলেজের কৃষি ডিপ্লোমা শাখায় গণিত বিষয়ে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে এমপিও ভুক্ত হয়েছেন। তিনি ডিসেম্বর মাসে ২৭ মাসের বকেয়া বেতনসহ বেতন উত্তোলন করবেন। এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা বহির্ভুত।

সাতক্ষীরা সিটি কলেজের কৃষি ডিপ্লোমা শাখা ২০০৪ সালের জুলাই কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধিভুক্ত হয় । এরপর ২০০৪ ও ২০০৫ সালে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি যুদ্ধাপরাধী অধ্যক্ষ খালেক মাওলানা এবং জামায়েত পন্থী অধ্যক্ষ ইমদাদুল হক সাহেবের আমলে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান জামায়েত শিবিরের বিভিন্ন অঞ্চলের প্যাডধারী বিভিন্ন পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা। অধ্যক্ষ মোঃ আবু সাঈদ ২০১৫ সালের ২৬ জানুয়ারি যোগদানের পর ইমদাদুল হকের সময় নিয়োগকৃত প্রভাষকদের নিয়োগ বোর্ড ছাড়াই বিজ্ঞাপন ,নিয়োগ ও যোগদান সম্পর্কিত তথ্য জালিয়াতি করে সিনিয়র ইনসটেকটর পদ দেখিয়ে বেন বেজে নামের তালিকা পাঠান। ২০২০ সালের ২৩ জুন কারিগরি অধিদপ্তরের যুগ্মসচিব এসএম ফেরদৌস আলম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে উক্ত তালিকায় প্রেরিত শিক্ষক কর্মচারীদের নিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে ত্রুটি উল্লেখ করেন।

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধিভুক্ত কৃষি ডিপ্লোমা শাখায় ২০০৫ সালে গণিত বিভাগের শিক্ষক শামছুরহমানকে নিয়োগ বোর্ড ছাড়াই ২০১৫ সালে মাউশির বিএসসি শাখায় সৃষ্টপদে দ্বিতীয় শিক্ষক হিসেবে নাম পাঠিয়ে ডিগ্রী স্তরের শিক্ষক হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছেন। একইভাবে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে মোঃ আব্দুল জলিলের নাম পাঠিয়ে ডিগ্রী স্তরের সৃষ্টপদে দ্বিতীয় শিক্ষক হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছেন। একজন শিক্ষক একই নিয়োগ ও যোগদানে দুটি শাখায় কিভাবে কর্মরত আছেন তা কারও বোধগম্য না হলেও অধ্যক্ষ আবু সাঈদ যোগদানের পর থেকে সেই অসম্ভবকে অর্থের বিনিময়ে সম্ভব করছেন। আসলে সাতক্ষীরা সিটি কলেজে শিক্ষক নিয়োগ ও এমপিওকরনে বর্তমানে অধ্যক্ষ মোঃ আবু সাঈদের কাছে অসম্ভব বলে কিছুই নেই। তিনি তথ্য জালিয়াতি করে কেবলমাত্র ছেলেকে মেয়ে এবং মেয়েকে ছেলে বানাতে পারেন না। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে তিনি মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করে যাচ্ছেন। এখন সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রবীন শিক্ষকবৃন্দ মনে করেন অধ্যক্ষ জনাব মোঃ আবু সাঈদ শিক্ষার সাথে জড়িত সকল প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখাচ্ছেন। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি পরিপত্রের মাধ্যমে ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর এমপিভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ করে দেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সাঈদ বলেন, বিধান চন্দ্র দাসের অভিযোগ সম্পর্কে তার জানা নেই। তদন্ত হলে তদন্তকারি কর্মকর্তার কাছে জবাব দেবেন।

(আরকে/এসপি/ডিসেম্বর ০১, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

৩০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test