E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভৈরবে পাদুকা শিল্পের কমন সার্ভিস সেন্টার পরিদর্শন করলেন বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধি দল

২০২১ ডিসেম্বর ০৯ ১৫:২৪:০৭
ভৈরবে পাদুকা শিল্পের কমন সার্ভিস সেন্টার পরিদর্শন করলেন বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধি দল

মিলাদ হোসেন অপু, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) : গতকাল বুধবার বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মি. হার্টইউগ শ্যাফার কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবে পাদুকা ব্যবসাগুচ্ছের ক্ষুদ্র উদ্যোগসমূহ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে সহযোগী হিসেবে তার সাথে উপস্থিত ছিলেন, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. নমিতা হালদার এনডিসি, বিশ্ব ব্যাংক কান্ট্রি ডিরেক্টর মিস মার্সি মিয়াং টেম্বন, পিকেএসএফ অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদেরসহ বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্ব ব্যাংক ও পিকেএসএফ-এর সহযোগী সংস্থার প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিনিধিগণ।

বিশ্ব ব্যাংক এবং পিকেএসএফ-এর যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্ট (এসইপি)-এর মাধ্যমে পিকেএসএফ ভৈরবে পাদুকা প্রস্তুতকারী ব্যবসাগুচ্ছের ক্ষুদ্র উদ্যোগসমূহকে সহযোগিতা করে আসছে। ব্যবসাগুচ্ছে দশ হাজারের বেশি পাদুকা প্রস্তুতকারী ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা রয়েছে যারা প্রতিদিন প্রায় দুই লক্ষ জোড়া পাদুকা তৈরি করে থাকে। ভৈরবের পাদুকা প্রস্তুতকারী এই ব্যবসাগুচ্ছটি ইতোমধ্যে প্রায় এক লক্ষ বিশ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করেছে।

অনারারী ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে মি. হার্টইউগ শ্যাফারসহ অন্যান্য প্রতিনিধিগণ ভৈরবের পাদুকা প্রস্তুতকারী ক্ষুদ্র উদ্যোগসমূহের স্থানীয়ভাবে কারিগরি সহযোগিতা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে এসইপি এর অর্থায়নে নির্মিত সাধারণ সেবা প্রদানকারী সার্ভিস সেন্টার পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা সার্ভিস সেন্টারের সেবা প্রদানকারীদের সাথে কথা বলেন। আগত অতিথিদের সার্ভিস সেন্টার থেকে প্রদত্ত সেবাসমূহ সম্পর্কে অবহিত করা হয়। এসইপি এর সহযোগিতা প্রাপ্ত অন্যান্য ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সাথেও এসময় তারা মতবিনিময় করেন।

পরিদর্শন পরবর্তী আলোচনা সভায় পিকেএসএফ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. নমিতা হালদার এনডিসি প্রথমে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘এসইপি প্রকল্পের আওতায় স্বল্প আয়ের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের স্বল্প পরিমাণ উৎপাদনের দুষ্ট চক্র থেকে বের করে আনতে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়ন বা ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্সিং ছাড়াও উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, আধুনিক প্রযুক্তি হস্তান্তর, ভ্যালু চেইন সুসংহতকরণসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে সহায়তা প্রদান যা এসইপি প্রকল্পের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া এসইপি এর আওতাধীন সকল উপ-প্রকল্প এলাকায় নারীদের জন্য শোভন কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে পিকেএসএফ কাজ করছে যার দৃশ্যমান উদাহরণ আমরা এই ভৈরবে দেখতে পাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির কারণে যে সকল ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের জন্য অর্থায়ন প্রক্রিয়া আমরা সহজতর করেছি। আমরা শুধুমাত্র অর্থায়নে সীমাবদ্ধ না থেকে কর্মক্ষেত্রের সুযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্রতা দূরীকরণে ভূমিকা রাখতে চাই। এটা সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক যে কীভাবে একটি সাধারণ সেবা প্রদানের জন্য নির্মিত সার্ভিস সেন্টার একটি ব্যবসায়িক কমিউনিটিকে আধুনিক কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে। আমরা শোভন কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে একটি টেকসই ব্যবসায়িক পরিবেশ গড়ে তুলতে চাই। শুধুমাত্র অর্থায়ন সকল সমস্যার সমাধান নয়। এর জন্য প্রয়োজন বিশ্ব ব্যাংক ও পিকেএসএফ এর মত কাজ করার অঙ্গীকার ও অংশীদারিত্ব।’

নারী ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টা ও উদ্দীপনার প্রশংসা করে মিস মার্সি মিয়াং টেম্বন বলেন, ’আমি সেই সব মহিলাদের সাথে সাক্ষাৎ করে খুবই আনন্দিত যারা শুধুমাত্র নিজেদের জন্যই কাজ করছে না; বরং অন্য নারীদের জন্যও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। সেই আলোকে এসইপি প্রকল্পটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পিকেএসএফ দেশব্যাপী এই প্রকল্পের মাধ্যমে একটি চমৎকার কাজ করছে।’

পাদুকা-প্রস্তুতকারী ক্ষুদ্র উদ্যোগসমূহের টেকসই অগ্রগতিতে এসইপি-এর ভূমিকায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে মি. হার্টইউগ শ্যাফার বলেন, ‘এটা সত্যিই দেখতে ভালো লাগছে যে কিভাবে একটি কমিউনিটির সক্ষমতা বৃদ্ধি করে ভালো কিছু করা যায়।’

মো. ফজলুল কাদের এসইপি এর কর্মপরিধি, বিশেষ করে পাদুকা প্রস্তুতকারী ব্যবসাগুচ্ছে প্রকল্পের ভূমিকা বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা প্রদান করেন।

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র উদ্যোগসমূহের বাজারজাতকরণ ও ব্র্যান্ডিং করার সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ, ব্যবসাগুচ্ছে পরিবেশবান্ধব টেকসই ব্যবসায়িক অনুশীলন সংযোজনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় এবং বিশ্ব ব্যাংক ও পিকেএসএফ এর যৌথ অর্থায়নে মাঠ পর্যায়ে পিকেএসএফ এসইপি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। পাঁচ বছর ব্যাপী এই প্রকল্পের মোট বাজেট ১৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার মধ্যে বিশ্ব ব্যাংক ১১০ মিলিয়ন ও পিকেএসএফ ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়ন করবে। কৃষি ও ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরের আওতাধীন লীড সাব-সেক্টরভুক্ত অগ্রসরমান ব্যবসাগুচ্ছের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, এসইপি প্রকল্পের আওতায় ৩০টি সাব-সেক্টরের আওতাধীন সর্বমোট ৬৪টি উপ-প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পিকেএসএফ এর সহযোগী সংস্থা পিপলস্ ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন (পপি) ‘ভৈরবে ঝুঁকিপূর্ণ ফুটওয়্যার মাইক্রো এন্টারপ্রাইজে পরিবেশগত অনুশীলন প্রতিষ্ঠা করা’ শীর্ষক উপ-প্রকল্পটি কিশোরগঞ্জ জেলায় বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ১ হাজার ১০০ ক্ষুদ্র উদ্যোগে পরিবেশবান্ধব টেকসই অনুশীলনসমূহ বাস্তবায়িত হয়েছে। এছাড়া সাধারণ সেবার আওতায় সফটওয়্যার ভিত্তিক পাদুকা ডিজাইন; গুচ্ছ ভিত্তিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিশুদ্ধ খাবার পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধির ব্যবস্থাপনা, হস্তশিল্পজাত পণ্যের প্রবর্তন, ই-কমার্স, ব্র্যান্ডিং প্রভৃতি সেবাসমূহ এসইপি প্রকল্পের মাধ্যমে কমিউনিটিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে।

পরিদর্শনকারী অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন পিকেএসএফ উপ-মহাব্যবস্থাপক এসইপি প্রকল্প সমন্বয়কারী জহির উদ্দিন আহম্মদ, পিপলস্ ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন (পপি) নির্বাহী পরিচালক মোর্শেদ আলম সরকার, এসএসএইএন এবং টিটিএল, এসইপি সিনিয়র এনভায়রনমেন্টাল স্পেশালিস্ট ইউন জু অ্যালিসন ই, এসএসএইএন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ বুশরা নিশাত, এসএসএএ১, টিটিএল এমএফএএফপি সিনিয়র এগ্রিকালচার ইকোনমিস্ট ক্রিশ্চিয়ান বার্গার, ইসিআরএসএ এক্সটারনাল অ্যাফেয়ার্স অ্যাসোসিয়েট শিল্পা ব্যানার্জী, জিসিএসজিও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জ্যাকব ফিনম্যান ভিউফ, এবং এসএআরভিপি অপারেশন বিশ্লেষক ডিলডোরা পুলাতোভা প্রমুখ।

(এম/এসপি/ডিসেম্বর ০৯, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test