E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভৈরবে মধু চাষিদের কাছে কৃষি কর্মকর্তাদের চাঁদা হিসেবে মধু দাবি!

২০২২ জানুয়ারি ০৪ ১৯:১২:৫৫
ভৈরবে মধু চাষিদের কাছে কৃষি কর্মকর্তাদের চাঁদা হিসেবে মধু দাবি!

মিলাদ হোসেন অপু, ভৈরব : কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মধুচাষীর কাছে মধু চাঁদা চেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম ও উচ্চমান সহকারী (হেড ক্লার্ক) শাকিলসহ অন্যান্য অফিসারদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ৩ জানুয়ারি, সোমবার ভুক্তভোগী মধুচাষী ছফির উদ্দিন কৃষি অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অভিযোগের অনুলিপি পাঠান।

জানা যায়, শীতের মৌসুমে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মৌচাষীরা ভৈরবে আসেন। এবারও ভৈরবের বিভিন্নস্থানে কয়েকস্থানে মৌচাষীরা মধু সংগ্রহ করতে মৌবক্স স্থাপন করেন। এদের মধ্যেই ভৈরব উপজেলার কালিকাপ্রসাদ আদর্শপাড়া গ্রামের সরিষা মাঠে ৫০টি মৌবক্স স্থাপন করেন পাকুন্দিয়া উপজেলার ছফির উদ্দিন নামে এক মৌচাষী। মৌবক্স বসানোর পর থেকেই কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি অফিসার নাছরিন বেগম ছফির উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করেন কখন বক্স থেকে মধু সংগ্রহ করবেন। মধু সংগ্রহের তারিখ জানালে গত ২৩ ডিসেম্বর সকালে মধু সংগ্রহের দিন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম ও উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মাসুম মিয়াকে নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় উপ-সহকারী কৃষি অফিসার নাসরিন বেগম। ওইদিন তারা পরিদর্শেনের নামে মধুচাষীর কাছ থেকে সাড়ে ৬ কেজি মধু মেপে টাকা না দিয়ে নিয়ে আসতে চাইলে টাকা দেয়ার কথা বলেন চাষী। তখন কৃষি অফিসের লোকজন ওই চাষীকে মধুবক্স নিয়ে যাবেন বলে হুমকি প্রদান করেন এবং বিনামূল্যে মধু নিয়ে কিশোরগঞ্জের কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে গিফট দিবেন বলে তাদের নাম ভাঙ্গান।

ভুক্তভোগী মৌচাষী ছফির উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার প্রথম দিন মধুর অর্ধেক দাম পরিশোধের কথা বলেও টাকা না দিয়ে জোরপূর্বক মধু নিয়ে চলে আসেন উপজেলা কৃষি অফিসের লোকজন। টাকা চাওয়াতে ক্ষিপ্ত হয়ে বিনা অনুমতিতে বসানো মৌবক্স তুলে নিয়ে আসবেন বলে হুমকি প্রদান করা হয় বলে জানান।

পরবর্তীতে আবারো একসপ্তাহ পর ৩০ ডিসেম্বর মধু সংগ্রহের দ্বিতীয় দিন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তাসফিয়া সুলতানা, উচ্চমান সহকারী শাকিল আহমেদ ও উপসহকারী কৃষি অফিসার নাসরিন বেগম ঘটনাস্থলে যায়। এসময় উচ্চমান সহকারী শাকিল আহমেদ তাদের সাথে করে নিয়ে যাওয়া বিভিন্ন সাইজের বোতলে ১২ কেজি মধু মাপান। কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার সামনেই টাকা না দিয়ে চলে আসার সময় মধুচাষী বাধা দিলে তাদের মধ্যে হট্টগোল হয়। এসময় স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে চাপের মুখে কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার তাসফিয়া সুলতানা ২৫০টাকা কেজি দরে দাম পরিশোধ করার কথা বললে দেড় হাজার টাকা দিয়ে ৬ কেজি মধু নিয়ে আসেন। এ ঘটনার সময়ও ডিডি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনওকে মধু দিতে হবে বলে তাদের নাম ভাঙ্গান।

এদিকে ভৈরব পৌর এলাকার জগন্নাথপুর এলাকায় সরিষা মাঠে মৌবক্স বসান কিশোরগঞ্জের মৌচাষী মো. গণি মিয়া মেম্বার। দীর্ঘ ৭ বছর ধরে ভৈরবের বিভিন্ন এলাকায় তিনি বক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করেন। বিগত দিনে কৃষি অফিসের কেউ মধু চাঁদা চায়নি তার কাছে।

মৌচাষী গণি মেম্বার জানান, গত ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে মধু বক্স পরিদর্শনে যায় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম। সাথে ছিলো কৃষি অফিসের অন্যান্য লোকজন। ওই দিন তার কাছে ডিডি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনওর নাম ভাঙ্গিয়ে ১০ কেজি মধু নিয়ে আসেন টাকা দেয়ার আশ্বাস দিয়ে। মধুর টাকা নিতে উপজেলা কৃষি অফিসে আকলিমা বেগমের কাছে আসলে তখন টাকা দেয়নি এবং বিনামূল্যেই মধু দিতে হবে বলে মৌচাষীকে জানান তিনি। এছাড়াও তার কাছ থেকে অন্যান্য মৌচাষীকে দেয়ার জন্য ১৫ ফ্রেম মৌমাছি ক্রয় করেও বিক্রয় মূল্যের চেয়ে টাকা কম দেন। কৃষি অফিসের লোকজনের যন্ত্রণা ও হয়রানির কারণে তিনি ভৈরব থেকে চলে যান। এসব হয়রানি থেকে পরিত্রান চান ভুক্তভোগী মধুচাষীরা।

এ বিষয়ে উপ-সহকারী কৃষি নাছরিন বেগম বলেন, আদর্শপাড়ায় মৌচাষী ছফির উদ্দিনের এখানে ২৩ ডিসেম্বর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মাসুম মিয়াকে নিয়ে পরিদর্শনে যান। তখন সাড়ে ৬ কেজি মধু তারা ২৫০ টাকা দরে কিনে নিয়ে আসেন। এছাড়াও ৩০ ডিসেম্বর কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার ও উচ্চমান সহকারীকে নিয়ে যায় মধুবক্স পরিদর্শনে যান। ওই দিনও ২৫০ টাকা দরে কেজি মধু আনা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয় বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার তাসফিয়া সুলতানা জানান, টাকা দিয়ে মধু কিনে এনেছি। আমাদের বিরুদ্ধে মধুচাষী যে মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন তা সত্যিই দুঃখজনক।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম বলেন, ভৈরবে মৌবক্স স্থাপন করা মধুচাষীদেরকে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। সরকারি উদ্যোগে মৌবক্স প্রদান করা হয়েছে কয়েকজন মধুচাষীকে। পরিদর্শেনে গেলে মৌচাষী ছফির উদ্দিনের কাছ থেকে মধু কিনতে চাইলে সাড়ে তিনশ টাকা করে দাম চাইলেন। ২৫০ টাকা কেজি দরে মধু কিনে আনি। ওই সময় কৃষি অফিসের লোকজনের সাথে সে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয় দিয়ে খারাপ আচরণ করে বলে জানান।

কৃষি অফিসার জানান, আমরা নিজের টাকায় কিনেই উপজেলার বিভিন্ন অফিসারদেরকে গিফট হিসেবে মধু দিয়ে থাকি। মধুচাষী আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছেন তা আদৌ সত্য নয়। আমাদেরকে ভুল বুঝার কারণে হয়ত এমন অভিযোগ করেছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার মধু নেয়ার বিষয়টি আপনাদের কাছ থেকে জেনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।

(এম/এসপি/জানুয়ারি ০৪, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test