E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

টাঙ্গাইলের নাগরপুরে ৯টি অবৈধ ইটভাটায় পুড়ছে ‘টপ সয়েল’

২০২২ জানুয়ারি ১১ ১৬:২২:৩০
টাঙ্গাইলের নাগরপুরে ৯টি অবৈধ ইটভাটায় পুড়ছে ‘টপ সয়েল’

মো. সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায় বৈধ-অবৈধ ২২ টি ইটভাটার অধিকাংশ চালানো হচ্ছে প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে এবং কিছু কিছু চলছে উচ্চ আদালতে ইট প্রস্তুত কল্পে রিটপিটিশন দায়ের করে । স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালালেও প্রশাসনিক লোকবলের অভাবে অধিকাংশই থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। উপজেলার অবৈধ ইটভাটায় মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালালেও নাগরপুর উপজেলার ৯টি ইটভাটায় গত চার বছরে (মৌসুমে) মেসার্স সান ব্রিকস ও মেসার্স একতা ব্রিকস এন্ড কোং ব্যতিত বাকি ৭ টি ভাটায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালানো হয়নি। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ভাটাগুলোর মূল কাঁচামাল মাটি আনা হচ্ছে ফসলি জমির টপসয়েল ও নদীতীরের এঁটেল মাটি কেঁটে। ফলে আবাদি জমির টপসয়েল বিনষ্ট হওয়ায় ফসল উৎপাদনে কাঙ্খিত লক্ষমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না- নষ্ট হচ্ছে কৃষি জমিও । নদীতীর কেটে ইট ভাটার কাঁচামাল মাটি সস্তায় পাওয়ায় অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ফলে বসতবাড়ি ও বাজারের মত স্পর্শকাতর এলাকা ঘেষে গড়ে উঠছে ইটভাটা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, যেসব ইটভাটা উচ্চ আদালতে রিটপিটিশনের মাধ্যমে চালানো হচ্ছে সেগুলো অবৈধ হলেও আদালতের কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর কোন ব্যবস্থা নেয়না। এসব ইটভাটা চালানোর জন্য অলীক ঘটনা সাজিয়ে মিথ্যা বয়ানে উচ্চ আদালতে রিটপিটিশন দায়ের করা হয়। আদালত কিছু শর্ত আরোপ করে সাময়িকভাবে ইটভাটা চালানোর অনুমতি দিয়ে থাকেন। এ সুযোগটাই তারা ব্যবহার করে ইটভাটা নির্মাণ ও পরিচালনার নিয়মনীতির না মেনে ফায়দা লুটছে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর মারাত্মক বিলুপ প্রভাব ফেলছে।

টাঙ্গাইল জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট ২২টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে ১৩টি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পেয়েছে, বাকি ৭ টি ইটভাটা পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোনপ্রকার ছাড়পত্র ছাড়াই অবৈধভাবে চালানো হচ্ছে। এছাড়া ছাড়পত্র পাওয়া ইটভাটাগুলো নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। অবৈধ ইটভাটাগুলো হলো- মেসার্স আই আর বি এম ব্রিকস, মেসার্স এস কে এস ব্রিকস, মেসার্স তাজ ব্রিকস, মেসার্স সান ব্রিকস, মেসার্স কে এম আর ব্রিকস, মেসার্স মুন ব্রিকস, মেসার্স বাবুল ব্রিকস, মেসার্স সিয়াম ব্রিকস ও মেসার্স একতা ব্রিকস এন্ড কোং এ মৌসুমে চালু করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ৯ টি অবৈধ ইটভাটার বেশিরভাগই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি ও কৃষি জমির পাশে অবস্থিত। কয়লা দিয়ে এসব ভাটায় ইট পোড়ানোর নিয়ম থাকলেও খরচ সাশ্রয়ের জন্য কোন প্রকার বিধি-বিধানের তোয়াক্কা না করে প্রকাশ্যে মেহগনি, আকাশমনি, ইউক্যালিপ্টাস, আম, জাম ইত্যাদি বনজ, ফলজ ও ওষুধি গাছের লাকড়ি বা কাঠ পোড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। ভাটাগুলো ঘণবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে উঠায় ভাটার ধোঁয়ায় আশপাশের গাছ-গাছালি, জমির ফসল, বাড়িঘরের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

ইটভাটার মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গত বছর প্রতি মেট্রিকটন কয়লার দাম ছিল ৭-৮ হাজার টাকা। এ বছর কয়লার দাম বেড়ে হয়েছে ২২-২৪ হাজার টাকা । তারপরও চাহিদামত কয়লা পাওয়া যায় না। এদিকে মৌসুম পার হয়ে যাচ্ছে। আমরা ইটভাটার মালিকেরা এমনিতেই অনেক ক্ষতিগ্রস্থ। এ ব্যবসায় শ্রমিকদের অনেক আগ থেকেই অগ্রীম টাকা দিতে হয়। এ অবস্থা ব্যবসা বন্ধ করতেও পারছি না আবার চালাতেও পারছি না।

টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর এএসএম সাইফুল্লাহ জানান, ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর ফলে একদিকে বনভূমি উজার হচ্ছে- অপরদিকে কার্বনডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, বিভিন্ন ধরণের পার্টিকুলেট ম্যাটার তৈরি হয়। এগুলো মানুষের শরীরে শ্বাসকষ্ট তৈরি করে। বসতভিটা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে ইটভাটা স্থাপন করায় প্রত্যেকটি মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে।

টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরে সদ্য যোগদানকৃত উপ-পরিচালক জমির উদ্দিন জানান, তিনি ইটভাটাগুলোর খোঁজখবর নিচ্ছেন। যেসব ইটভাটা বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে রয়েছে সেগুলোর ছাড়পত্রও বাতিল করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(এসএম/এসপি/জানুয়ারি ১১, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test