E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঘুষ নিয়ে ধরা পড়লেন ঝিনাইদহ উপজেলা নির্বাচন অফিসের অফিস সহায়ক!

২০২২ জানুয়ারি ১৩ ১৮:৩৮:৩৫
ঘুষ নিয়ে ধরা পড়লেন ঝিনাইদহ উপজেলা নির্বাচন অফিসের অফিস সহায়ক!

অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : চরম হয়রানী ও অনিয়মের পাশাপাশি কর্মচারীদের ঘুষ লেনদেনের স্বর্গ রাজ্যে পরিণত হয়েছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাচন অফিস। জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কাজে গেলেই হতে হয় ভোগান্তির শিকার। স্মাটকার্ড নিতে গেলে সকালে স্লিপ জমা নিয়ে বিকাল ৩টার পর ডেলিভারি দেওয়া হয়। এতে দুরদুরান্তের ভোটাররা চরম ভোগান্তির শিকার হন। অফিসের কর্মচারীদের রুঢ় ব্যবহারে মানুষ অতিষ্ঠ বলে অভিযোগ। ইউপি নির্বাচনের দোহায় দিয়ে কর্মকর্তারা জরুরী কাজগুলো আটকে দেন। ফলে বছরের পর বছর ঘুরে মানুষ প্রতিকার পাচ্ছে না। নাম সংশোধনীর বিভিন্ন ক্যাটাগরির ফাইল শত শত ফাইল তদন্তের অভাবে ঝুলে আছে। এমনও আছে যে, ২০১৭ সালে নাম সংশোধনী করতে দিয়ে এখনো ভোটারদের ঘুরিয়ে ভোগান্তি দিয়ে যাচ্ছে নির্বাচন অফিসের কর্তা ব্যাক্তিরা। দ্রুত প্রতিকার চাইতে গেলে দুর্ব্যবহারের শিকার হতে হয়। 

এদিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বারইখালী গ্রামের আব্বাস আলীর ছেলে আল মামুন নতুন ভোটার হতে গিয়ে ৮ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছেন। এই ঘুষ নেন উপজেলা নির্বাচন অফিসের অফিস সহায়ক রোকনুজ্জামান রকি। বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার অফিসে হুলস্থুল পড়ে যায়। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে গিয়ে চাউর হয়ে যায়। আল মামুন ঘুষের টাকা ফেরৎ চেয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আঃ ছালেকের কাছে ধর্ণা দেন। এ নিয়ে গোটা অফিসে তোলপাড় সৃষ্টি। অভিযোগ উঠেছে রোকনুজ্জামান রকি উপজেলা নির্বাচন অফিসার মশিউর রহমানের খুব প্রিয় পাত্র। রকির দিয়ে জটিল ও কঠিন কাজগুলো সমাধান করেন। রকি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিয়ে ভোটারদের কাছ থেকে ঘুষ আদায় করেন।

সদর উপজেলার বারইখালী গ্রামের আল মামুন জানান, তিনি দুই মাস আগে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু তার ছবি তোলা হচ্ছিল না। বুধবার অফিস সহায়ক রোকনুজ্জামান রকির কাছে টাকা দিলে ছবি তোলার এসএমএস যায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে ৫ হাজার টাকা দিলে তার ছবি তুলে দিতে রাজি হয় রকি। এদিকে টাকা দেওয়ার আগে নোট গুলোর ছবি ও টাকা দেওয়ার ভিডিও ধারণ করে আল মামুন। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা নির্বাচন অফিসারের কাছে রকির অবৈধ লেনদেনের বিষয়ে অভিযোগ দিলে পকেট চেক করা হয় রকির। এসময় আল মামুনের ছবির টাকার নাম্বারের সাথে রকির পকেটে থাকা মিলে যায়। টাকা লেনদেনের ভিডিও গণমাধ্যম কর্মীদের হাতে পৌছালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় মুহুর্তে। নতুন চাকরী পাওয়ার পর থেকে রকি এ ভাবে টাকা হাতিয়ে নিলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।

কথিত আছে এই টাকার ভাগ পান উপজেলা নির্বাচন অফিসার মশিউর রহমান। জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন, হারানো বা স্থানান্তরের আবেদন মানেই টাকা। চাহিদামতো টাকা না দিলে হয়রানী হতে হয়। ঝিনাইদহ শহরের ব্যাপারীপাড়া শাপলা চত্বরের মাসুদ অটোর মালিক মাসুদের ছেলে ভোটার স্থান পরিবর্তনের আবেদন করেন ৮ মাস আগে। অবশেষে তিনি নির্বাচন অফিসের রকির সাথে চুক্তি করে সফলাতা পান। বিনিময়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসার মশিউর রহমানকে একটি হেলমেট দেওয়া হয়।

রকির বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসার মশিউর রহমান বলেন, ফাঁদে ফেলে একটি চক্র রকিকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।

ফ্রি হেলমেট নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি নিজেই হেলমেট নিয়ে এসেছি। কিন্তু এই বাবদ নয়। টাকা দেওয়ার কথা আমার মনে ছিল না। এখন তারা কথা ঘুরাচ্ছে। জেলা নির্বাচন অফিসার আঃ ছালেক জানিয়েছেন, অফিস সহায়ক রোকনুজ্জামান রকির বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

উপজেলা নির্বাচন অফিসারের বিরুদ্ধে কারও অভিযোগ থাকলে লিখিতভাবে জানালে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

সরেজমিন ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে দেখা যায় সাইনবোর্ডে বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে “আমি ও আমার অফিস দুর্নীতি মুক্ত”। অথচ কথিত আছে সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচনে প্রার্থীরা পচ্ছন্দের প্রিজাইডিং, সহকারি প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়োগে দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

(একে/এসপি/জানুয়ারি ১৩, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test